অবসর: মোর্চা কমিটির বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয়, তা জানতে প্রতীক্ষা কৃষকের। বুধবার গাজ়িপুর সীমানায়। ছবি— পিটিআই।
সব ঠিক থাকলে বৃহস্পতিবারই দিল্লির সীমানায় কৃষকদের এক বছরের বেশি আন্দোলনে ইতি পড়তে চলেছে।
কৃষকদের প্রধান দাবি মেনে তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের পরেও কৃষক সংগঠনগুলি আরও ছয় দফা দাবি তুলেছিল। তার মধ্যে বাকি সব দাবি অনুযায়ী পদক্ষেপ করতে রাজি হলেও, মোদী সরকার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনিকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত ও গ্রেফতারির দাবি মানছে না। তবে বাকি পাঁচটি দাবিতে ইতিবাচক সাড়া মেলায় আজ সংযুক্ত কিসান মোর্চার অধীন কৃষক সংগঠনগুলি আন্দোলন প্রত্যাহারের বিষয়ে একমত হয়েছে। মোর্চা নেতাদের বক্তব্য, মোদী সরকারের তরফে কৃষকদের দাবি মেনে পদক্ষেপ করার খসড়া প্রস্তাব এসেছে। তাতে আন্দোলন প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক উদাহরণও রয়েছে। এ বার সেই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিক ভাবে সরকারি চিঠিতে এলে বৃহস্পতিবার আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা হবে। এ জন্য বৃহস্পতিবার দুপুরে সংযুক্ত কিসান মোর্চা ফের বৈঠক বসবে।
লখিমপুর খেরিতে কৃষক হত্যাকাণ্ডে তাঁর নাম জড়িয়ে যাওয়ার পরে অজয় মিশ্র টেনির বরখাস্ত-গ্রেফতারির দাবি তুলেছিলেন কৃষক নেতারা। কিন্তু কেন্দ্রের তরফে বার্তা দেওয়া হয়েছিল, টেনিকে মন্ত্রিসভা থেকে সরানো হবে না। কৃষকদের গাড়িতে পিষে মারার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত টেনির ছেলেকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও তাঁকে একাধিক বার অমিত শাহর সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের পরে আন্দোলনে অনড় কৃষক নেতারা আরও ছয় দফা দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি লেখেন। তাতেও টেনির বরখাস্ত-গ্রেফতারির দাবি তোলা হয়।
সেই দাবি থেকে এখন কেন কৃষকরা সরে আসছেন?
সরকারের সঙ্গে দর কষাকষির জন্য তৈরি মোর্চার পাঁচ সদস্যের কমিটির অন্যতম সদস্য অশোক ধাওয়ালে বলেন, “টেনিকে তো ঘটনার দু’ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতার ও মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করা উচিত ছিল। কৃষকেরা বিজয়া দশমীতে রাবণের সঙ্গে টেনির কুশপুতল দাহ করেছিলেন। তার পরেও টেনির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না করা মোদী সরকার আড়াই মাস করে কিছু করবে, এটা আমরা আশা করছি না।”
মোর্চার বাকি পাঁচ দাবি মেনে অবশ্য কেন্দ্র পদক্ষেপ করতে রাজি হয়েছে। ফসলের দাম বা এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টির প্রসঙ্গে সরকার প্রস্তাব দিয়েছে, সব চাষিদের জন্য এমএসপি নিশ্চিত করার পন্থা খুঁজতে কমিটি তৈরি হবে। সেই কমিটিতে কৃষকদের তরফে মোর্চার প্রতিনিধিরা থাকবেন। এখন সরকার যে পরিমাণ ফসল কেনে, তা-ও কমবে না।
আন্দোলনের সময় কৃষকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবি ছিল। কেন্দ্র খসড়া প্রস্তাবে জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সংস্থার সমস্ত মামলাও অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হবে। অন্য রাজ্যগুলিকে এ বিষয়ে অনুরোধ জানানো হবে।
আন্দোলনে মৃত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে কেন্দ্র নিজে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস না দিলেও জানিয়েছে, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা আগেই ক্ষতিপূরণে সম্মতি জানিয়েছে। বিদ্যুৎ আইন সংশোধনী বিল নিয়ে আপত্তিতে কেন্দ্র জানিয়েছে, কৃষকদের আপত্তির বিষয়গুলি নিয়ে সকলের সঙ্গে, মোর্চার সঙ্গে আলোচনা হবে। তার আগে ওই বিল সংসদে পেশ হবে না। ফসলের খড় পোড়ানো বন্ধ করার আইনে কৃষকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের ধারা আগেই প্রত্যাহার করা হয়েছে।
মোর্চা সূত্রের খবর, মঙ্গলবারই কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে খসড়া প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। কৃষক নেতারা কিছু স্পষ্টিকরণ চাইলে বুধবার ফের খসড়া প্রস্তাব পাঠানো হয়। তা নিয়ে সকালেই মোর্চার পাঁচ সদস্যের কমিটি বৈঠকে বসে। তার পরেই সিংঘু সীমানায় মোর্চার বৈঠকে সরকারের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব এলে আন্দোলন প্রত্যাহারের বিষয়ে সম্মতি হয়।
বিজেপি নেতৃত্ব উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড ভোটের আগে আন্দোলন ওঠার সম্ভাবনা তৈরির ফলে স্বস্তি বোধ করছে, তেমনই কৃষক নেতারা তাঁদের আন্দোলনের জয় দেখছেন। আজ সিংঘু সীমানায় মোর্চার বৈঠকের সময়েই আন্দোলনের নামে জয়ধ্বনি উঠেছে, ‘জো বোলে সে নিহাল!’