অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ছবি পিটিআই।
কোভিড-কালে যে সমস্ত সংস্থা বিপুল মুনাফা করেছে, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের খবর, তাদের কাছ থেকে বিশেষ কর আদায়ের কথা ভাবছে সে দেশের সরকার। ফলে নতুন করে ফের প্রশ্ন উঠছে, করোনা আর লকডাউনে যে ভারতীয় ধনকুবেরদের সম্পদ ফুলেফেঁপে উঠেছে, তাঁদের উপরেও এ ধরনের কর বসানোর পথে কেন হাঁটল না মোদী সরকার? বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, তাতে অসাম্য কিছুটা হলেও কমতো। ওই টাকা খরচ করা যেত জনমুখী প্রকল্পে।
বাজেটের আগে জোর জল্পনা ছিল, কোভিডের ধাক্কা কাটিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এবং গরিব-মধ্যবিত্তকে সুরাহা দেওয়ার জন্য ধনকুবেরদের আয়ে বাড়তি সেস বসাবে সরকার। রবিবার মুম্বইয়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের অবশ্য দাবি, এমন ভাবনাচিন্তা করা হয়নি। ওই খবর কোথা থেকে ছড়াল, তা-ও তাঁর জানা নেই। নির্মলার কথায়, ‘‘আমার জানা নেই যে, সংবাদমাধ্যমে কী ভাবে কোভিড সেস বসানোর চর্চা শুরু হল! কখনও এ বিষয়ে বিচার-বিবেচনা করিনি।’’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সে দেশের আসন্ন বাজেটে অ্যামাজ়ন-সহ যে সব অনলাইন সংস্থা লকডাউনে বিপুল ব্যবসা করেছে, তাদের উপরে এককালীন অতিরিক্ত মুনাফা কর বসানোর কথা ভাবা হচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের অনেকের মতে, মোদী সরকার এ বিষয়ে ভাবলে ভাল হত। কারণ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অক্সফ্যামের সাম্প্রতিক হিসেব অনুযায়ী, কোভিডের সময়ে এ দেশের ধনকুবেরদের সম্পদও ৩৫% বেড়েছে।
ব্রিটিশ সরকারের এই ভাবনাচিন্তা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য রথীন রায়ের বক্তব্য, ‘‘খুব ভাল ভাবনা। বিশেষত ভারতের মতো দেশে, যেখানে ছোট ব্যবসায়ী ও বেতনভুকরা অতিমারির ক্ষতি সহ্য করেছেন। অথচ শেয়ার বাজার চড়চড়িয়ে উঠেছে। মোটা মুনাফার মুখ দেখেছেন ধনীরা।’’
অক্সফ্যাম বাজেটের কয়েক দিন আগে জানিয়েছিল, করোনা-কালে এ দেশে সম্পদ বণ্টনে বৈষম্য আরও বেড়েছে। লকডাউনের সময়ে ধনকুবেরদের সম্পদ গড়ে বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। অথচ ৮৪ শতাংশ পরিবারের আয় কমেছে। দেশের প্রথম ১১ জন ধনকুবেরের বর্ধিত সম্পদে ১ শতাংশ কর বাড়ানো হলে জন-ওষধি প্রকল্পের চেহারা বদলে যেত বলেও দাবি।
এই রিপোর্টকে হাতিয়ার করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে বলেছিলেন, মোদী গরিবের অর্থ কেড়ে বড়লোকদের পকেটে পুরছেন। কিন্তু বাজেটের আগে কংগ্রেস যে সমস্ত দাবি তোলে, তাতেও ধনীদের উপরে সেস বসানোর প্রসঙ্গ ছিল না। রথীনের বক্তব্য, ‘‘এই পদক্ষেপ করার রাজনৈতিক পুঁজি সরকার বা বিরোধী— কারও নেই।’’