সুপ্রিম কোর্ট। ফাইল চিত্র।
নিখরচায় সুবিধা বিলি করার কথা ভোটের প্রচারে ঘোষণার বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র কেন সর্বদল বৈঠক ডাকছে না, জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট। রাজনৈতিক দলগুলির তরফে বিনামূল্যে পণ্য বা পরিষেবা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বন্ধের আর্জি জানিয়ে বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায় একটি জনস্বার্থ মামলা করেছেন। তারই শুনানিতে আজ এই প্রশ্ন করেছে প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণার বেঞ্চ।
বিষয়টির জটিলতা অনুধাবন করে গত শুনানিতেই সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, এ বিষয়ে আলোচনা জরুরি। তাই সরকার, বিরোধী, নীতি আয়োগ, অর্থ কমিশন, আইন কমিশন, নির্বাচন কমিশন, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের মতো সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষকে নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী গঠনের সুপারিশ করেছিল কোর্ট। আজও প্রধান বিচারপতি জানান যে, এ বিষয়ে বিতর্ক প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘‘সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, কমিটির নেতৃত্বে কে থাকবেন? শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলিই প্রতিশ্রুতি দেয় আর ভোটে লড়ে। ধরুন আমি যদি ভোটে লড়ি, দশটা ভোটও পাব না। কারণ, ব্যক্তির তেমন গুরুত্ব নেই। এ দেশের গণতন্ত্র এমনই।’’
প্রধান বিচারপতির মতে, আজ যিনি বিরোধী, তিনি কাল ক্ষমতায় আসতে পারেন। কাজেই তাঁদেরই এগিয়ে এসে এ সব সামলাতে হবে। নিখরচায় সুবিধা বিলির মতো যে সমস্ত বিষয় অর্থনীতিকে ধ্বংস করতে পারে, সে দিকে নজর দিতে হবে। তাই তিনি (প্রধান বিচারপতি) শুধুই নির্দেশ জারি করে দিতে পারেন না। এ বিষয়ে বিতর্ক প্রয়োজন। আবেদনকারীর আইনজীবী বিকাশ সিংহ বলেন, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি আর এম লোঢার মতো সুপ্রিম কোর্টের কোনও প্রাক্তন বিচারপতিকে বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান করা উচিত।
তা শুনে কিছুটা হালকা সুরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘যিনি অবসর নিয়েছেন বা নিতে চলেছেন, এ দেশে তাঁর কোনও মূল্য নেই।’’
কেন্দ্রের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, যে দলগুলি হয়তো ক্ষমতায় নেই, তারাও ভোটারদের অন্যায্য ভাবে প্রভাবিত করতে প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। মেহতার বক্তব্য, ‘‘ধরুন, কেউ বলল, বিদ্যুতের টাকা নেব না। জানি না, টাকাটা কোথা থেকে আসবে। বিদ্যুৎ একটা উদাহরণ মাত্র। ভোটার কি এমন পরিবেশ পাবেন, যেখানে তিনি সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন? ভোটে জেতার জন্য কি আপনি চাঁদ পেড়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন?’’
এই সময়েই প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, সরকার কেন সর্বদল বৈঠক ডাকছে না। মেহতা জানান, নিখরচায় সুবিধা বিলিতে রাশ টানার বিরোধিতা করে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলি আদালতে গিয়েছে। এই আবহে সর্বদল বৈঠক ফলপ্রসূ না-ও হতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘কিছু রাজনৈতিক দল মনে করে, বিনামূল্যে সুবিধা পাইয়ে দেওয়াটা তাদের মৌলিক অধিকার। সেই ভাবেই তারা ক্ষমতায় এসেছে।’’
আম আদমি পার্টির আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি সলিসিটর জেনারেলের এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, ‘‘১৯৪৭ সালে সাধারণ মানুষ যখন ভোটাধিকার পেয়েছিলেন, তখন এ দেশে সাক্ষরতার হার ছিল প্রায় ১২ শতাংশ। আমাদের ভোটদাতাদের বোকা ভাবার কোনও কারণ নেই।’’
আইনজীবী কপিল সিব্বল জানান, ক্ষমতায় না এলে রাজ্যের আর্থিক হাল জানা রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষে সম্ভব নয়। কাজেই নির্বাচনী ইস্তাহারে ঘোষিত প্রতিশ্রুতি পূরণের টাকা কোথা থেকে আসবে, তা রাজনৈতিক দলগুলিকে জানাতে হবে— এই প্রস্তাবের সঙ্গে তিনিএকমত নন।