আলফা জঙ্গি নেতার ঋণ মেটাতে না-পেরে সপরিবার ব্রহ্মপুত্রে ঝাঁপ দিলেন দরংয়ের এক বাসিন্দা। জল থেকে তাঁর স্ত্রীকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ওই ব্যক্তির দেহও। কিন্তু দু’জন এখনও নিখোঁজ। সুস্থ হয়ে তেজপুর পুলিশের কাছে ওই মহিলাই এই অভিযোগ জানিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, গত রাতে সাড়ে ৯টা নাগাদ জেলাশাসকের আবাসনের কাছে গণেশ ঘাট থেকে ব্রহ্মপুত্রে ঝাঁপ দেন ভবানী শর্মা (৫৫), তাঁর স্ত্রী মাকনদেবী, ভবানীবাবুর ছেলে মঞ্জুল (৩৩) এবং পুত্রবধূ অষ্টমী (২৮)। স্থানীয় বাসিন্দারা জল থেকে মাকনদেবীকে উদ্ধার করে। রাতে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর জওয়ানরা ভবানীবাবুর দেহের খোঁজ পান। কিন্তু মঞ্জুলবাবু ও অষ্টমীদেবীর হদিস মেলেনি।
মাকনদেবীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তিনি পুলিশকে জানান, ভবানীবাবু মঙ্গলদৈ জেলায় বিদ্যুৎ পর্ষদের কন্ট্রোল-রুমের কর্মী ছিলেন। তাঁদের বাড়ি দরং জেলার সিপাঝাড়ে। টিভির দোকান খোলার জন্য ভবানীবাবু কয়েক জনের কাছ থেকে চড়া সুদে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন। কিন্তু সময়ে তা শোধ করতে পারেননি। সুদে-আসলে ঋণের পরিমাণ এখন ২ কোটি ৮০ লক্ষ টাকায় পৌঁছেছে। তদন্তকারীদের মাকনদেবী জানিয়েছেন, আলফার আলোচনাপন্থী নেতা রঞ্জু শহরিয়ার কাছ থেকে সব চেয়ে বেশি টাকা নেওয়া হয়েছিল। টাকা ফেরত চেয়ে ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছিল রঞ্জু। গাড়ি বিক্রি করে মঞ্জুলবাবু আলফার বরদলনির শিবিরে গিয়ে তাকে ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু বাকি টাকা মেটানোর জন্য আলফা জঙ্গিরা চাপ দিতে থাকে। পুলিশ সূত্রের খবর, কয়েক বার ভবানীবাবুর সঙ্গে মাকনদেবীও আলোচনাপন্থী আলফার শিবিরে যান। ভবানীবাবু আলফার ওই নেতাকে কথা দেন, বাড়ি-জমি বিক্রি করে তিনি টাকা ফেরত দেবেন। শেষ পর্যন্ত রফা হয়, প্রতি মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে ৪ লক্ষ টাকা করে রঞ্জু শহরিয়াকে দিতে হবে। অষ্টমীদেবীর পরিজনরা জানান, গত কাল সকালে মঞ্জুলবাবু তাঁদের ফোন করে জানান, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৫ লক্ষ টাকা না-পেলে সবাইকে খুনের হুমকি দিয়েছে আলফার ওই নেতা।
পুলিশ জানিয়েছে, আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে রঞ্জু শহরিয়ার নামে মামলা রুজু করা হয়েছে। অন্য দিকে, আত্মহত্যার চেষ্টার দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে মাকনদেবীকে।