প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
রামজি হ্যায় তো সব মুমকিন হ্যায়। এটা সার্বিক ভাবনা। দেশের রাজনীতির দিকে তাকিয়ে বিজেপির স্লোগান— মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়। এর বাইরেও একটা স্লোগান আছে উত্তরপ্রদেশে। রামের খোদ অযোধ্যাতেও। তাঁরা বলছেন, যোগী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়। পারস্পরিক লড়াই প্রকাশ্যে না-থাকলেও ভিতরে ভিতরে যে রয়েছে তা স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বললেই বোঝা যায়। অযোধ্যার স্থানীয় বাসিন্দারাও মূলত যোগী আদিত্যনাথের ভক্ত।
গোটা দেশে বিজেপির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যেমন জনপ্রিয়তা, তেমন উত্তরপ্রদেশবাসীর কাছে মুখ্যমন্ত্রী যোগীরও আলাদা জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাঁরা চান, সোমবার যোগীই যেন অস্থায়ী মন্দির থেকে রামলালার পুরনো মূর্তি নতুন মন্দিরে নিয়ে যান। অন্য দিকে, আগে থেকে এমন একটা খবর প্রকাশ্যে আসে যে, মোদীর কোলে চেপেই ‘শিশু রাম’ নতুন বাসভবনে প্রবেশ করবেন। কিন্তু রামজন্মভূমি ট্রাস্টের পক্ষে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে এখনও পর্যন্ত কিছুই জানানো হয়নি। ফলে মোদী না যোগী? এ নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে। মোদী, যোগীর বদলে কোনও পুরোহিত ওই মূর্তি নিয়ে যাবেন কি না, তা নিয়েও জল্পনা রয়েছে। তবে শনিবার সকালে রামমন্দিরের প্রধান পুরোহিত আচার্য সত্যেন্দ্র দাস এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন যে, যোগীর কোলে চেপেই রামলালার পুরনো মূর্তি মন্দিরে প্রবেশ করবে। সত্যেন্দ্র বলেছেন, ‘‘আগে তো মুখ্যমন্ত্রীই অস্থায়ী আস্তানা থেকে এখনকার ছোট মন্দিরে রামলালাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। এ বার যোগী আদিত্যনাথই ফের নতুন মন্দিরে রামলালাকে নিয়ে যেতে পারেন।’’
সত্যেন্দ্র ‘যেতে পারেন’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেই জল্পনা বাড়িয়ে দিয়েছেন। কারণ, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ কর্তারাও আগে থেকেই জানতেন যে, মোদীই নিয়ে যাবেন রামলালাকে। বিজেপি নেতাদেরও একই বক্তব্য ছিল। সেই হিসাবেই তো তিনি ১১ দিনের বিশেষ ব্রত পালন করছেন। তবে কি নানা বিতর্ক তৈরি হওয়াতেই সিদ্ধান্ত বদল? সেটা জানা নেই কারও।
অযোধ্যায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রধান কার্যালয় করসেবকপুরমে বড় স্ক্রিনে মন্দিরের ভিতরে কী কী হচ্ছে তা দেখা যাচ্ছে সরাসরি। কিন্তু এর পরে কী হবে, সোমবারের পরিকল্পনা কী, তা নিয়ে কেউই বিশেষ কিছু জানেন না। যে যাঁর নিজের দায়িত্ব পালন করছেন। তবে অনেকেই বলছেন, মোদীই নিয়ে যাবেন। সেটাই আগে কথা হয়েছিল। কিন্তু কোথায় কথা হয়েছিল, কে কথা দিয়েছিলেন, তা নিয়ে কোনও স্পষ্ট উত্তর নেই। এ প্রসঙ্গে পরিষদের স্থানীয় কর্তা প্রফুল্ল শেঠিয়া বলেন, ‘‘কে মন্দিরে নিয়ে যাবেন সেটা মুখ্য প্রশ্ন নয়। রামলালা ৫৫০ বছর পরে ভব্য মন্দিরে যাচ্ছেন। তাঁর বন্দিদশা কাটছে। এটাই মুখ্য। গোটা পৃথিবী সেই দৃশ্য দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, যেখানে বাবরি মসজিদ ছিল সেখানেই অতীতে পুজো পেতেন রামলালা। শোনা যায়, ১৯৪৯ সালে একদল হিন্দু সন্ন্যাসী রামের এই ছোট্ট বিগ্রহ ওই স্থানে রেখে এসেছিলেন। সেই সময়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গোরক্ষনাথ মঠের প্রধান মহন্ত অবৈদ্যনাথ। তাঁরই শিষ্য যোগী আদিত্যনাথ। ১৯৯২ সালে করসেবকরা সেই সৌধ ভেঙে ফেলার পরে নিজেরাই একটা ছোট অস্থায়ী মন্দির বানিয়েছিলেন। সেখানেই এর পরে পুজো হতে শুরু করে। ২০২০ সালের অগস্টে নতুন মন্দিরের শিলান্যাসের সময়ে যোগী সেই অস্থায়ী শিবির থেকে রামলালার বিগ্রহ এনে এখনকার ছোট মন্দিরে স্থাপন করেন। এ বার বড় এবং নতুন মন্দিরে যাওয়ার পালা পুরনো মূর্তির। আর নতুন মূর্তি তো শুক্রবারই গর্ভগৃহে জায়গা পেয়ে গিয়েছে। এখন প্রাণপ্রতিষ্ঠার অপেক্ষায়। পুরনো মূর্তি মন্দিরের ঠিক কোথায় থাকবে সে ব্যাপারেও এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে কিছু জানা যায়নি।
শনিবার প্রধান পুরোহিত এমনটাও বলেছেন যে, ‘‘এই অনুষ্ঠানে তাঁরাই যোগ দিতে পারেন, যাঁরা মেঝেতে ঘুমান, অসত্য বলেন না, গায়ত্রী মন্ত্র জপ করেন, গাছের পাতায় ভোজন করে ব্রহ্মচর্য পালন করেন।’’ প্রধানমন্ত্রীর ১১ দিনের বিশেষ ব্রত কি এই সব অভ্যাস করার জন্যই? তিনি নিজেই বিশেষ ব্রত পালনের কথা বলেছেন এমন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সৌভাগ্য হওয়ায়। এটা মোদী ভক্তদের বক্তব্য। অন্য দিকে, অযোধ্যার যোগী ভক্তেরা বলছেন, আদিত্যনাথ তো এই ভাবেই জীবন কাটান। এ সব তর্ক সবটাই বাইরের। মন্দিরের ভিতরে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে বা হবে তার নির্ভরযোগ্য উত্তর কারও কাছেই নেই। জানেন কেবল শীর্ষ কর্তারা।