গদি কি ধরে রাখবেন সর্বানন্দ? —ফাইল চিত্র
‘কিং’ হবেন না কি ‘কিং-মেকার’ হবেন হিমন্তবিশ্ব শর্মা? গদি কি ধরে রাখবেন সর্বানন্দ? না কি শেষ পর্যন্ত শিকে ছিঁড়বে অন্য কোনও বিস্ময়-বিকল্পর কপালে! জবাব মিলবে রবিবার!
বহু বছর মুখ্যমন্ত্রী নিয়ে এমন টানপড়েন দেখেনি অসম। ফল ঘোষণা হয়েছে আগের রবিবার। কিন্তু শনিবার পর্যন্ত তদারকি সরকারের হাতেই চলছে রাজ্য। অসমে ক্ষমতায় কারা আসবে— এই উৎকণ্ঠার তুলনায় বহু গুণ বেশি চর্চা চলছে ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর নাম নিয়ে।
শনিবার দিল্লিতে বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার বাড়িতে দফায়-দফায় বৈঠকের পরেও নাম ঘোষণা করা যায়নি। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল বনাম নেডা জোটের চেয়ারম্যান হিমন্তবিশ্বর যুদ্ধে সমাধানসূত্র বার করতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিল, গুয়াহাটিতে গিয়ে মিত্রজোটের সব বিধায়কের মতামত নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা হবে। রবিবার হবে সেই বৈঠক। সেই বৈঠকে থাকছেন বিজেপির অসমের পর্যবেক্ষক নরেন্দ্র সিংহ তোমর, রাষ্ট্রীয় সাধারণ সম্পাদক বি এল সন্তোষ, অরুণ সিংহ ও বৈজয়ন্ত পাণ্ডা। বিধানসভায় হবে বৈঠক। সম্ভবত বিকেলেই হবে শপথ গ্রহণ।
দিল্লিতে সর্বানন্দ আজ বৈঠক থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হননি। হিমন্ত গাড়ি অবশ্য থেকে নেমে সাংবাদিকদের বলেন, “আগামী কাল গুয়াহাটিতে বিজয়ী বিধায়কদের বৈঠক। সেখানেই সব প্রশ্নের জবাব মিলবে।”
অসম রাজনীতির ক্ষমতার লড়াইয়ে শনিবারের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায় নয়াদিল্লির ৭বি মতিলাল নেহরু মার্গ। নড্ডার বাসভবন। নেতৃত্বের জট কাটাতে দুই নেতাকেই আজ দিল্লি তলব করে হাইকম্যান্ড। একই চার্টার্ড বিমানে দিল্লি পৌঁছে একই গাড়িতে নড্ডার বাড়িতে যান সর্বানন্দ ও হিমন্ত। হিমন্তের সঙ্গে ছিলেন তাঁর বিশ বছরের সঙ্গী, সদ্য নির্বাচিত বিধায়ক তরঙ্গ গগৈ। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছায়াসঙ্গী, বিধায়ক বিমল বরা। পরে অবশ্য সোনোয়াল গাড়ি
বদল করেন।
নড্ডার বাড়ির বৈঠকে হাজির হন বিজেপির রাষ্ট্রীয় সাধারণ সম্পাদক বি এল সন্তোষও। প্রথমে হিমন্ত ও পরে সর্বানন্দর সঙ্গে চলে বৈঠক। দলীয় সূত্রের খবর, হিমন্ত দলের ৪০ জন বিধায়ক ও শরিক বিধায়কদেরও সমর্থন থাকার দাবি তুলে ধরেন। পরে হিমন্ত ও সর্বানন্দের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেখান থেকে বেরিয়ে আবারও হিমন্ত বৈঠকে বসেন নড্ডার সঙ্গে। পরে ঠিক হয়, অসমের পর্যবেক্ষক নরেন্দ্র সিংহ তোমরকে অসমে পাঠিয়ে, বিধায়কদের মতামত নেওয়ার পরে গুয়াহাটিতেই মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হবে।
তরুণ গগৈয়ের আমলে ৫২ জন বিধায়কের সমর্থন পেয়েও হাই কমান্ডের সম্মতি না মেলায় মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেননি হিমন্ত। দল ভেঙে বেরিয়ে এসে ২০১১ সালে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনেন তিনি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হন সর্বানন্দ। মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়ে সরকার গড়ায় ভূমিকা নেন হিমন্ত। তাঁর দৌলতেই সিংহাসনলাভ হয় বীরেন সিংহ, নেফিয়ু রিওদের। কিন্তু নিজের ‘কিং’ হওয়া আর হয়ে উঠছে না এই ‘কিং মেকার’-এর। এই পরিস্থিতিতে এ বার ভোটের আগে থেকে দলকে চাপে রাখতে রাজনৈতিক সন্ন্যাস নেওয়ার কথা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন হিমন্ত।
দলীয় সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ভরসা পেয়েই ফের লড়তে নামেন তিনি। প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার ঢেউ, আঞ্চলিক দলের উত্থান ও বিরোধী মহাজোটের চ্যালেঞ্জের মুখেও দলকে ফের জেতানোয় অন্যতম প্রধান ভূমিকা নেন হিমন্ত। কিন্তু আরএসএসের একাংশ শীর্ষ নেতৃত্বের আপত্তি তাঁর স্বপ্নপূরণে দেওয়াল হয়ে দাঁড়ায়। সেই সঙ্গে সর্বানন্দের কৌশলী কূটনীতিও চলতে থাকে।
এক সপ্তাহ ধরে এই টানাপড়েনের জট দিল্লিও খুলতে পারেনি। জল মাপা শুরু হয়, মুখ্যমন্ত্রী পদ না পেলে কোন নেতার বিদ্রোহ করা ও সরকার ভাঙার ক্ষমতা কত দূর। দলীয় সূত্রে খবর, সেই প্রসঙ্গেই উঠে আসে, আলোচনার বাইরে থাকা বিকল্প দুই নাম। সাংসদ তথা সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ও সাংসদ তথা বিজেপির রাষ্ট্রীয় সাধারণ সম্পাদক দিলীপ শইকিয়া। আগামী কাল সর্বানন্দ-হিমন্তকে পাশ কাটিয়ে তাই রিজার্ভ বেঞ্চের কেউ ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হয়ে যেতে পারেন। অন্তত এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলেও খবর। দিলীপবাবুর রাজ্য সভাপতি হওয়ার কথা ছিল। আর ভোটের আগেই রঞ্জন গগৈ স্পষ্ট জানিয়েছেন, তিনি রাজনীতির মানুষ নন, তাই সক্রিয় রাজনীতিতে মোটেই আগ্রহী নন তিনি।