পরনে সাধারণ একটা শাড়ি, আঁচলটা কোমরে গোঁজা। বাঁ হাতে একটা ঘড়ি। কিছু ক্ষণ পর পর চোখ রাখছিলেন ঘড়ির ডায়ালে। হাঁটার গতি বাড়ালেন। এ বার খালি পায়ে এগিয়ে গেলেন জলবন্দি মানুষদের কাছে। সমব্যথী হয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়ালেন আইএস অফিসার কীর্তি জাল্লি।
জলকাদা মেখে মানুষের পাশে দাঁড়ানো আইএএস অফিসারের এই ব্যবহারে অভ্যস্ত সহকর্মী এবং অধস্তনরা। তাঁরা এমন ভাবেই চেনেন কীর্তিকে। তবে এমন কর্মঠ আমলাকে দেখে চোখ আটকে গিয়েছে নেটাগরিকদের।
ভয়ঙ্কর বন্যায় বিধ্বস্ত অসম। কেমন আছেন বিধ্বস্ত মানুষগুলো? ছুটে গিয়েছিলেন কাছাড়ের ডেপুটি কমিশনার কীর্তি জাল্লি। জল পেরিয়ে, কাদা পায়ে জলবন্দি মানুষের কাছে গিয়ে তাঁদের সমস্যা শুনছেন এক জন আইএএস অফিসার, এই ছবিই নজর কেড়েছে নেটাগরিকদের।
এক দিকে যখন সারমেয়কে হাঁটানোর জন্য স্টেডিয়াম ফাঁকা করে বিতর্ক জড়িয়েছেন এক আইএস অফিসার, উল্টো দিকে তখন আর এক আইএস অফিসার কীর্তির ছবি মন জিতেছে লাখ লাখ মানুষের।
কে এই কীর্তি জাল্লি? জানতে কৌতূহলী হয়ে পড়েন তামাম দেশবাসী। ১৯৮৯ সালে কীর্তির জন্ম হায়দরাবাদের বারেঙ্গজল জেলার একটি গ্রামে। ছোট থেকেই পড়াশোনায় তুখোড় জাল্লির লক্ষ্য ছিল বড় হয়ে জনসেবামূলক কাজ করার। ঘটনাচক্রে হলেন আইএএস অফিসার।
২০১২ ব্যাচের আইএএস অফিসার কীর্তির অসাধারণ কাজ দেখা গিয়েছে কোভিড পরিস্থিতিতে।
২০২০ সালের প্রথম দিকে হাইলাকান্দির জেলাশাসক কীর্তি জাল্লিকে তড়িঘড়ি বদলি করে আনা হয় কাছাড়ে। কারণ, প্রশাসনের মনে হয়েছিল, কাছাড়ের ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কার্যকরী পদক্ষেপ করতে পারেন এই আইএএস।
করোনা পরিস্থিতিতে কাছাড়ের জেলাশাসকের দায়িত্ব নিয়েই কাজ শুরু করে দেন কীর্তি। জানান, পরিস্থিতি কঠিন ঠিকই। কিন্তু তার মোকাবিলা তো করতেই হবে। তার জন্য দরকার সকলের উদ্যোগ, সমবেত প্রচেষ্টা।
হাইলাকান্দির জেলাশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নে কীর্তির ভূমিকার কথা জানত প্রশাসনিক মহল। বস্তুত, তিনি ছিলেন অসমের বরাকের ওই জেলার প্রথম মহিলা আইএএস অফিসার।
জেলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক এবং জনমুখী কাজ করার সুবাদে আমলা মহলে বেশ পরিচিত হয়ে ওঠেন এই হায়দরাবাদি-কন্যা। ২০২০ সালে পেয়েছিলেন ‘সেরা প্রশাসক’-এর পুরস্কারও।
এ সব কারণেই করোনা পরিস্থিতিতে কাছাড়ের মতো একটি বড় জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয় কীর্তিকে। বলা বাহুল্য, তিনি নিরাশ করেননি।
কাছাড়ে কাজ করতে করতেই বিয়ে করেন কীর্তি। পাত্র কাছাড়েরই বাসিন্দা। নাম আদিত্য শশীকান্ত।
কাজ অন্তপ্রাণ কীর্তি ব্যক্তিগত কাজ কিংবা দৈনন্দিন টানাপড়েনের ছাপ কখনও কর্মজীবনে ফেলতে দেন না। কাজপাগল এই আইএএস অফিসার বিয়ের পর দিনই হাজির হয়েছিলেন অফিসে। দেখে খানিকটা অবাকই হয়েছিলেন তাঁর সহকর্মীরা।
বন্যাবিধ্বস্ত অসমের বরখোলা ব্লকে গিয়েছিলেন কীর্তি। প্রতিটি জায়গায় জল ডিঙিয়ে গিয়েছেন। কাদায় পা পিছলেছে। কিন্তু বড় অফিসার সুলভ আচরণ ঝেড়ে ফেলে আইএএস অফিসার ছুটে গিয়েছেন প্রতিটি বাড়ি। মন দিয়ে শুনেছেন জলবন্দি মানুষের সমস্যার কথা। চেষ্টা করেছেন, যত তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার।
গত কয়েক দিনের বন্যায় অসমের ২০ জেলার প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ দুর্গত। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে একের পর এক বাড়ি। কোথাও আবার রেললাইনের উপর দিন কাটিয়েছেন শ’য়ে শ’য়ে মানুষ।
অসমে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয়েছে কাছাড় জেলার। তবে কাছাড়বাসীর কাছে আছেন এক জন কীর্তি জাল্লি। সেটাই ভরসার জায়গা।