ত্যাগরাজ স্টেডিয়ামের রানিং ট্র্যাকের উপর দিয়ে হাঁটছেন এক পুরুষ ও মহিলা। সামনে চলেছে তাঁদের পোষ্য সারমেয়। এই ছবি নিয়েই নেটাগরিকদের মধ্যে শুরু হল আলোড়ন। ব্যাপারটা কী?
জানা যায় তাঁদের পরিচয়। নাম সঞ্জীব খিরওয়ার ও রিঙ্কু দুগ্গা। সামনে আসে তাঁদের পরিচয়। জানা যায়, স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই আইএএস অফিসার। পোষ্য সারমেয়কে হাঁটানোর জন্য স্টেডিয়াম খালি করে দিতেন তাঁরা। আমলার পোষ্যের বেড়ানোর জন্য অনুশীলন ছেড়ে বাড়ি ফিরতে হত খেলোয়াড় এবং প্রশিক্ষকদের।
এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই হইচই শুরু হয়ে যায়। রাতারাতি সঞ্জীবকে লাদাখ এবং স্ত্রী রিঙ্কুকে বদলি করে দেওয়া হয় অরুণাচল প্রদেশে। কে এই আইএএস অফিসার, জানতে কৌতূহলী হয়ে পড়েন অনেকে।
কে এই সঞ্জীব খিরওয়ার? ১৯৭২ সালে দিল্লিতে জন্ম সঞ্জীবের। ৫০ বছরের এই আইএএস অফিসার দিল্লির রাজস্ব দফতরের মুখ্যসচিব এবং ডিভিশনাল অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন।
চাকরিজীবনে বিভিন্ন রাজ্যে বিবিধ দফতরে কাজ করার অভিজ্ঞতা এই আইএএস অফিসারের। আবার একই সময়েও ভিন্ন দফতরের দায়িত্ব সামলাতে তিনি সিদ্ধহস্ত। কেমন সেটা?
সঞ্জীব খিরওয়ার একাধারে দিল্লির রাজস্ব দফতরের মুখ্যসচিবের দায়িত্বে ছিলেন, আবার দিল্লির পরিবেশ দফতরের সেক্রেটারির দায়িত্বও সামলাতেন।
নেটমাধ্যমে নিজের সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন এই আইএএস অফিসার। ৫০ বছর বয়সি সঞ্জীব বরাবর দিল্লির বাসিন্দা। দিল্লি পাবলিক স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পাশ করা সঞ্জীব আইআইটি দিল্লির প্রাক্তনী।
সঞ্জীব খিরওয়ারের বাবা-মা সম্পর্কে তেমন কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে নেটমাধ্যমের কয়েকটি তথ্য বলছে, আইএএস অফিসারের বাবা একটি দোকানে কাজ করতেন। মা গৃহবধূ। সঞ্জীবের এক ভাইয়ের নাম শেখর। তিনি একটি বড় সংস্থার সিইও পদে রয়েছেন।
পড়াশোনা শেষ করে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন সঞ্জীব। কিন্তু সে কাজে মন বসছিল না। হঠাৎ এক দিন কাজ ছেড়ে দেন। দেশসেবার ইচ্ছে নিয়ে শুরু করেন ইউপিএসসি-র প্রস্তুতি।
১৯৯৪ সালে বিয়ে হয় সঞ্জীবের। স্ত্রী রিঙ্কুও আইএএস অফিসার। বিয়ের পর তাঁরা না কি এক সঙ্গে ইউপিএসসি-র প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।
১৯৯৪ সালেই আমলা হওয়ার স্বপ্নপূরণ হয় সঞ্জীবের। অরুণাচল প্রদেশ, গোয়া, মিজোরাম এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বা এজিএমইউটি ক্যাডার দেশের নানা প্রান্তে প্রশাসনের বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন।
২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তৎকালীন কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী কৃষ্ণা তিরাথের ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে কাজ করেন সঞ্জীব।
২০১৮ সালে সঞ্জীব খিরওয়ারের বদলি হয় বাণিজ্য মন্ত্রকে।
দিল্লির ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির সময় ডিভিশনাল কমিশনার সঞ্জীব খিরওয়ার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। সে সময় দিল্লি দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরেও কাজ করতেন তিনি।
খেলার মাঠে সারমেয়কে হাঁটিয়ে বিতর্কে জড়ানো এই আইএএস অফিসার নিজেও খেলা অন্তপ্রাণ। এক সময় খুব ভাল টেনিস খেলতেন। এখনও সময় পেলে র্যাকেট হাতে কোর্টে নেমে পড়েন।
বিতর্কে জড়ালেও এই আইএএস অফিসার অভিজ্ঞ এবং কর্মঠ হিসেবেই আমলা মহলে পরিচিত।
দিল্লির ত্যাগরাজ স্টেডিয়াম খালি করে পোষ্যকে হাঁটানোর কারণে রাতারাতি দিল্লি থেকে বদলি হয়েছেন সঞ্জীব। তাঁকে বদলি করা হয়েছে লাদাখে। স্ত্রীকে বদলি করা হয়েছে অরুণাচল প্রদেশে। ওই আইএএস দম্পতির পাশে দাঁড়ান বিজেপি সাংসদ মানেকা গাঁধী। তাঁর দাবি, এই নির্দেশের ফলে দিল্লিরই ক্ষতি হল।