কাশ্মীরের রাস্তায় নিরাপত্তা বাহিনীর টহল। ছবি: পিটিআই।
রবিবার সোনমার্গে জঙ্গি হানায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত সাত জনের। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন ছ’জন শ্রমিক এবং এক চিকিৎসক। হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামে এক জঙ্গিগোষ্ঠী। পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবা থেকে এই সংগঠনের জন্ম। কাশ্মীর উপত্যকায় এর আগেও একাধিক নাশকতামূলক কাজে নাম জড়িয়েছিল টিআরএফের। কাশ্মীর উপত্যকায় রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতির সময় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল এই জঙ্গিগোষ্ঠী।
টিআরএফের উত্থান হয় ২০১৯ সালে। তখন সংবিধান থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা’-র অবলুপ্তি হয়েছে। ঠিক সেই রাজনৈতিক পরিস্থিতির মাঝেই লস্করের একটি শাখা হিসাবে উঠে আসে টিআরএফ। এদের মূল লক্ষ্য, কাশ্মীরের স্থিতাবস্থায় বিঘ্ন ঘটানো এবং ভারতের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলা। সেই লক্ষ্য সাধনের জন্য নাশকতামূলক কাজকর্মে পুনর্বিন্যাস আনার চেষ্টা শুরু করে এই জঙ্গিগোষ্ঠী।
শুরুতে এই গোষ্ঠীর উপস্থিতি ছিল শুধুই অনলাইনে। পরে ক্রমশ শক্তি বৃদ্ধি করে তারা। জন্মের মাস ছয়েকের মধ্যেই অনলাইন থেকে বাস্তবে রূপ পায় টিআরএফ। লস্কর-সহ একাধিক জঙ্গিগোষ্ঠীর থেকে এই সংগঠনে সদস্যদের নিযুক্ত করা হয়।
কারও কারও মতে, এই জঙ্গিগোষ্ঠীর আড়ে বহরে বিস্তারের নেপথ্যে পাকিস্তানেরও ইন্ধন থাকতে পারে। উপত্যকায় জঙ্গি কার্যকলাপে এর আগেও একাধিক বার পাকিস্তানের মদতের অভিযোগ উঠেছে। সে ক্ষেত্রে এক প্রকার ‘ছদ্মরূপে যুদ্ধ’-র জন্য এই জঙ্গিগোষ্ঠীকে মদত দেওয়ার জন্য পাকিস্তান-যোগের তত্ত্ব একে বারে এড়িয়ে যাওয়া যায় না।
কারণ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের জন্য একাধিক আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে চাপ আসছিল পাকিস্তানের জন্য। বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদে আর্থিক মদত বন্ধের জন্য ফিনানশিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল পাকিস্তানকে। এই অবস্থায় নতুন তৈরি হওয়া সংগঠন টিআরএফকে সাহায্য করা পাকিস্তানের পক্ষে অনেকটা সহজ ছিল। কারণ তখনও টিআরএফকে জঙ্গিগোষ্ঠী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়নি। ২০২৩ সালে টিআরএফকে একটি জঙ্গিগোষ্ঠী হিসাবে চিহ্নিত করে কেন্দ্র। তার আগে পাকিস্তান থেকে সন্ত্রাসে মদতদাতারা এই জঙ্গিগোষ্ঠীর জন্য আর্থিক এবং কৌশলগত সাহায্য চালিয়েছেন বলে আগেও অভিযোগ উঠেছে।
টিআরএফ নতুন গজিয়ে ওঠা জঙ্গিগোষ্ঠী হলেও, এদের শিকড় জড়িয়ে রয়েছে লস্করের সঙ্গে। সে ক্ষেত্রে নেতৃত্ব থেকে শুরু করে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির এমনকি মতাদর্শের উপরেও লস্করের প্রভাব দেখা যায়। ভারতে নাশকতার জন্য এই জঙ্গিগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষিত জঙ্গি পাঠায় লস্কর। টিআরএফের জন্ম হয় কাশ্মীরি জঙ্গি শেখ সাজ্জাদ গুলের হাতে। নতুন জঙ্গিগোষ্ঠী তৈরির আগে গুল ছিলেন লস্করের কমান্ডার। এই সংগঠন তৈরির আগেও সাংবাদিক হত্যা-সহ একাধিক হিংসায় যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ২০২২ সালে গুলকে জঙ্গি হিসাবে ঘোষণা করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
২০১৯ সালের পর থেকে কাশ্মীর উপত্যকায় একাধিক নাশকতামূলক ঘটনায় নাম জড়িয়েছে এই টিআরএফের। চলতি বছরের জুন মাসেই জম্মু-কাশ্মীরের রেইসি জেলায় পুণ্যার্থীদের একটি বাসে হামলা হয়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ন’জন পুণ্যার্থীর। ওই হামলার নেপথ্যেও ছিল টিআরএফ।