গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
গলওয়ান সংঘর্ষে ভারতীয় সেনার তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে গলওয়ান নদীতে ভেসে গিয়েছিলেন ৩৮ জন চিনা সেনা। এমনই দাবি করেছে অস্ট্রেলিয়ার একটি সংবাদপত্র। পাশাপাশি ওই সংঘর্ষের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বেজিংয়ের তথ্য ও দাবিকেও অনেকাংশে অসত্য বলে দাবি করা হয়েছে।
২০২০-এর ১৫ জুন। পূর্ব লাদাখের গলওয়ান উপত্যকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল ভারতীয় সেনা ও চিনের ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)’। মারপিট ও সংঘর্ষের ঘটনায় ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর খবর জানানো হয় কেন্দ্রের তরফে। কিন্তু চিনের তরফে? আজ পর্যন্ত তা খোলসা করেনি বেজিং। এ যাবৎ মাত্র তিন জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে চিন। এ বার সম্ভবত সেই রহস্যের উপর থেকে পর্দা ওঠা শুরু হল।
অস্ট্রেলিয়ান সংবাদপত্র ‘ক্ল্যাক্সন’-এ প্রকাশিত এই সংক্রান্ত সমীক্ষামূলক প্রতিবেদন অন্তত সে দিকেই ইঙ্গিত করছে। সেই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সে দিন ভারতীয় সেনার তাড়া খেয়ে গলওয়ান নদী পেরোতে গিয়ে সলিলসমাধি হয়েছিল অন্তত ৩৮ জন চিনা সেনার। এই সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর জন্য দীর্ঘ দিন ধরে একাধিক নথি এবং নেটমাধ্যম ঘেঁটেছে বলে দাবি করেছে সংবাদপত্রটি। কথা বলা হয়েছে একাধিক জনের সঙ্গে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ২০২০ সালের ১৫ জুন গলওয়ান উপত্যকায় চিনা নির্মাণ উচ্ছেদ করতে ভারতীয় সেনার একটি দল যায়। পিএলএ-র কর্নেল কি ফাবাও-এর সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়। তখন সেখানে উপস্থিত অন্তত ১৫০ চিনা সেনা। ভারতীয় সেনার দলটির সঙ্গে আলোচনার পরিবর্তে তারা ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। পাল্টা দিতে দেরি করেনি ভারতীয় সেনাও। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ‘যে মুহূর্তে কর্নেল ফাবাও আক্রমণ করেন, সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে কবজা করে নেয় ভারতীয় সেনা। ফাবাওকে উদ্ধারে ঝাঁপান এক পিএলএ কমান্ডার ও এক সেনাকর্মী। স্টিলের পাইপ, পাথর, লাঠি এলোপাথাড়ি ভাবে চালাতে থাকেন তাঁরা। তখনই সংঘর্ষে তিন চিনা সেনা ও ভারতীয় সেনাদের মৃত্যু হয়।’ যা পরবর্তীতে বেজিংও স্বীকার করে নিয়েছে।
প্রতিবেদনে প্রকাশ, ‘সঙ্গীদের মৃত্যু দেখে ওই নিকষ কালো অন্ধকারের মধ্যে দৌড়ে পালাতে শুরু করে চিনা সেনারা। অকুস্থল থেকে তিব্বতের মূল ভূখণ্ডে ঢুকতে পেরোতে হয় গলওয়ান নদী। পরিস্থিতি এমন হয়, যে ভয়ে দিশেহারা হয়ে পর্যাপ্ত সুরক্ষা না নিয়েই গলওয়ান নদীতে ঝাঁপ মারে বহু চিনা সেনা। খরস্রোতা পাহাড়ি নদীর ঢেউয়ের ধাক্কায় মুহূর্তে তলিয়ে যান ৩৮ জন সেনাকর্মী।’
এই সংঘর্ষেই ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু চিনের সেনার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কিছুই প্রায় জানা যায়নি। যদিও বিভিন্ন সূত্র থেকে দাবি করা হচ্ছিল, চিনের দিকে ক্ষয়ক্ষতির বহর অনেক বেশি। এ বার বিদেশি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে উঠে এল সেই তথ্য।
ঘটনার পর বেজিং বিভিন্ন সময় একাধিক ভিডিয়ো ছড়িয়ে দিয়ে দাবি করেছিল, তা গলওয়ান সংঘর্ষের। কিন্তু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, অন্যান্য সময় রেকর্ড করা বিভিন্ন ভিডিয়ো জুড়ে তা বিশ্বাসযোগ্য কায়দায় ছড়িয়ে দেওয়ার পথ নিয়েছিল লাল চিন। যাতে সত্য ধামাচাপা দেওয়া যায়।