প্রতীকী ছবি।
প্রবল ঠান্ডার মধ্যে খোলা আকাশে নীচে পড়েছিলেন ১২ জন। কারও গায়ে পাতলা জামা। কারও সে-টুকুও নেই। পায়ে নেই জুতো। প্রবল ঠান্ডায় জমে মৃত্যু হয়েছিল ১১ জনেরই। ১ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও প্রাণে বাঁচানো যায়নি। ওঁরা সকলেই শরণার্থী। গ্রিসের সীমান্তঘেঁষা তুরস্কের এডির্না প্রদেশের ইপসালা গ্রামে ১২ শরণার্থীর দেহ উদ্ধারের কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন তুরস্কের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী সুলেমান সোয়লু।
মন্ত্রীর অভিযোগ, গ্রিসের সীমান্তরক্ষীরা শরণার্থীদের আশ্রয় না দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছেন। ২২ জনের একটি শরণার্থী দলের সঙ্গে ছিলেন ওঁরা। গ্রিসের সীমান্ত পেরিয়ে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করছিল দলটি। ওঁদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, প্রবল ঠান্ডায় জামা, জুতো কেড়ে নিয়ে ওঁদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া খুনের নামান্তর বলে তোপ দেগেছেন তুরস্কের মন্ত্রী। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটনাস্থলের একাধিক ছবি পোস্ট করেছেন তিনি। গ্রিসের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও (ইইউ) একহাত নিয়েছেন। সোয়লু লিখেছেন, ‘‘ গ্রিসের সীমান্ত ঘেঁষা ইপসালা গ্রামে ২২ জন শরণার্থী দলের ১২ জনের দেহ মিলেছে। ওদের জামা, জুতো কেড়ে নিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছিল গ্রিসের সীমান্তরক্ষীরা। ইইউ সত্যিই দুর্বল, মানবকিতাহীন। ওদের কাছে কোনও সুরাহা নেই। ফেটোর মতোই ওরা শরণার্থীদের এক রকম খুন করল।’’
শরণার্থীদের ঠাঁই না দিলেও তুরস্কের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ ‘ফেটো’ অপরাধীদের গ্রিস আশ্রয় দিয়েছে বলে অভিযোগ আঙ্কারার। ২০১৬ সালে তুরস্কে ব্যর্থ হয়ে যাওয়া সামরিক অভ্যুত্থানের মূলে ছিল এই
ফেটো-বাহিনী।
ভৌগোলিক ভাবে ইউরোপ আর এশিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধন করেছে তুরস্ক। দেশটির এই অবস্থানগত সুবিধার কারণে এশিয়া, আফ্রিকা থেকে আসা শরণার্থীরা স্থলপথে তুরস্ক হয়েই ইউরোপে ঢোকার পথ খোঁজেন। তবে বহু সময় মানব পাচারকারী চক্রের ফাঁদে পড়ে প্রাণ হারান অনেকে। বছর ছয়েক আগে এই তুরস্কের সৈকতে ভেসে এসেছিল তিন বছরের ছোট্ট শরণার্থী শিশু আয়লান কুর্দের দেহ। সিরিয়া থেকে আসা শরণার্থীদের নৌকাডুবি হয়ে মৃত্যু হয়েছিল তার। যুদ্ধদীর্ণ সিরিয়া-সহ মধ্য এশিয়ার শরণার্থী সঙ্কট প্রকট হয়ে পড়েছিল বিশ্বের দরবারে। সঙ্কট আজও মেটেনি। তুরস্কে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩৭ লক্ষ সিরিয়ার শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন। কিছু দিন আগে আমেরিকার সীমান্ত ঘেঁষা কানাডায় একই পরিবারের চার ভারতীয়ের দেহ উদ্ধার হয়েছিল। ঠান্ডায় জমে মৃত্যু হয়েছিল ওঁদের। অভিযোগ, বরফাবৃত সীমান্ত দিয়ে ওঁদের অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা করছিল পাচারকারীরা।
আজ দিনের শেষে ইউরোপের সমালোচনায় মুখ খুলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইপ এর্ডোয়ান। তিনি বলেছেন, ‘‘প্রাণ বাঁচাতে বহু মানুষ আমাদের দেশে আশ্রয় নিতে চান। ইউরোপের এমন কোনও সঙ্কট নেই। তবু আমরা এ ভাবে শরণার্থীদের ছুড়ে ফেলতে পারি না।’’ সংবাদ সংস্থা