কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। —ফাইল চিত্র ।
নিট নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের। মন্তব্য কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের। ধর্মেন্দ্রর দাবি, এখনও পর্যন্ত নিটে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনও প্রমাণ উঠে আসেনি। যে অভিযোগ উঠেছে, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখছেন। পাশাপাশি নিট বাতিল নিয়ে জল্পনা উঠছে, সে প্রসঙ্গেও মন্তব্য করেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী। এই নিয়ে বিরোধীদেরও নিশানা করেছেন তিনি। পরীক্ষা বাতিলের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ধর্মেন্দ্র বলেন, ‘‘নিট বাতিলের প্রয়োজনীয়তা কী? এর নেপথ্যে বিরোধীদের একটি স্বার্থ রয়েছে। গত বছরের নিটে যিনি প্রথম হয়েছিলেন, তিনি তামিলনাড়ুর পড়ুয়া। তামিলনাড়ুর এক গ্রামের বাসিন্দা। আসল অভিযোগ কী, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না।’’ সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী।
সর্বভারতীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকা নিট-এ অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে। অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন ফাঁসের। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে প্রবেশিকা পরীক্ষার পুরো প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা এবং স্বচ্ছতা নিয়ে। এই পরিস্থিতিতে নিট ‘দুর্নীতি’ প্রসঙ্গে মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী।
ধর্মেন্দ্রের কথায়, ‘‘কিছু অভিযোগ এবং আলগা তথ্য উঠে আসছে। আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদন্তের জন্য অপেক্ষা করা উচিত। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জন্য ৮ জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাক। এই নিয়ে লুকোনোর কিছু নেই।’’
কিন্তু কেন সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ না করা পর্যন্ত অভিযোগ নিয়ে মাথা ঘামায়নি পরীক্ষা পরিচালনা সংস্থা এনটিএ? জবাবে ধর্মেন্দ্র বলেন, ‘‘এই কথা সত্য নয়। অসঙ্গতি প্রকাশ্যে আসার পরই এনটিএ গ্রেস মার্ক ফর্মুলা চালু করেছিল। সুপ্রিম কোর্টও তা উদ্ধৃত করেছে। তবে, সেই সূত্রে কিছু অসঙ্গতি থেকে গিয়েছিল। কারণ, নম্বর বাড়িয়ে দেখা যায়, ছ’জন পরীক্ষার্থী প্রথম হয়েছেন।’’
নিটের পরিচালনার প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলার সময় ধর্মেন্দ্র জানান, ভারতে ৪৭০০ কেন্দ্রে এবং ভারতের বাইরে ১৪টি কেন্দ্রে ১৩টি ভাষায় এই প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষা দেন ২৩ লক্ষেরও বেশি পরীক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘‘দু’টি কেন্দ্র নিয়ে কিছু অভিযোগ রয়েছে। যাঁরা দুর্নীতি করেছেন, তাঁদের অবশ্যই কঠিন শাস্তি হবে।’’ পাশাপাশি, পরীক্ষার্থীদের আতঙ্কিত না হওয়ার আবেদন জানিয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘কিছু অসঙ্গতি প্রকাশ্যে এসেছে। আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। সুপ্রিম কোর্টও একটি রায় দিয়েছে। এর পরে কোনও বিভ্রান্তি থাকা উচিত নয়।’’
নিটে যে পরীক্ষার্থীরা বাড়তি নম্বর পেয়েছিলেন, তা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। অন্তত ১৫৬৩ জনের বাড়তি নম্বর বাতিল হয়ে গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্র জানিয়েছে, ওই পরীক্ষার্থীরা চাইলে আবার পরীক্ষা দিতে পারবেন। আগামী ২৩ জুন সেই পরীক্ষা হবে। সেই প্রসঙ্গে ধর্মেন্দ্র বলেন, ‘‘যাঁরা আগ্রহী, তাঁরা ছ’টি নির্দিষ্ট কেন্দ্রে পুনরায় পরীক্ষা দিতে পারেন। ওই কেন্দ্রগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, পরীক্ষার্থীরা ওই কেন্দ্রগুলিতে পরীক্ষা দেওয়ার পর্যাপ্ত সময় পাননি।’’
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৫ মে হয়েছিল নিট। কিন্তু পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। ১৭ মে পরীক্ষার ফলপ্রকাশে স্থগিতাদেশ দেওয়ার আর্জি জানিয়ে মামলা হয় সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু শীর্ষ আদালত তেমন কোনও স্থগিতাদেশ না দিলেও প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূ়ড়ের বেঞ্চ নোটিস দিয়ে কর্তৃপক্ষের জবাব তলব করে। আগামী ৮ জুলাই মামলাটির শুনানি। ওই দিনই পরীক্ষা বাতিলের আর্জি জানানো সংক্রান্ত মামলাটির পরবর্তী শুনানি হবে। ওই সময়ের মধ্যেই নোটিসের জবাব দিতে হবে পরীক্ষা নিয়ামক সংস্থা এনটিএ-কে।