বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। ফাইল চিত্র।
অদূর ভবিষ্যতে চিন বা ইউক্রেনের মতো দেশ থেকে আর রেলের চাকা আমদানির দিন শেষ হতে চলেছে বলেই দেশীয় নির্মাতাদের আশা। এবং সে-ক্ষেত্রে চাকার বিকল্প জোগানদার হয়ে উঠছে বাংলার সংস্থা। বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের মতো আধুনিক প্রযুক্তির ট্রেন ছাড়াও রেল ইঞ্জিন এবং এলএইচবি কোচে ব্যবহারের জন্য পেটা লোহার উন্নত মানের চাকা পশ্চিমবঙ্গের যে-সংস্থা তৈরি করতে চলেছে, তার নাম ‘রামকৃষ্ণ ফোর্জিং’।
রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ বেধে যাওয়ায় ইউক্রেনে তৈরি রেলের চাকা যথাসময়ে এসে পৌঁছচ্ছিল না। গত বছর পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছিল যে, প্রায় থমকে যেতে বসেছিল দ্বিতীয় প্রজন্মের বন্দে ভারত এক্সপ্রেস তৈরির উদ্যোগ। রোমানিয়া থেকে ১২৮ জোড়া চাকা উড়িয়ে আনা হলেও ইউক্রেন থেকে চাকা আর আমদানি করতে পারেনি ভারত। পরে চিনা সংস্থার তৈরি চাকা ব্যবহার করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়।
এত দিন দেশে দুর্গাপুরের সেলের কারখানায় একমাত্র পেটা লোহার তৈরি চাকা তৈরি হত। তবে চাহিদার তুলনায় সেই চাকার পরিমাণ অনেক কম। এ বার দেশেই বন্দে ভারতের মতো আধুনিক ট্রেন, রেল ইঞ্জিন এবং এলএইচবি কোচে ব্যবহার্য পেটা লোহার উন্নত মানের চাকা তৈরির জন্য রেলের বরাত প্রক্রিয়ায় সর্বনিম্ন দর দিয়ে প্রথমে উঠে এসেছে বঙ্গের সংস্থা রামকৃষ্ণ ফোর্জিং।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উন্নত মানের চাকার জন্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশের উপরে নির্ভর করত ভারত। তাই ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ‘ফোর্জড হুইল’ বা পেটা লোহার চাকা আমদানি করা হত। কিন্তু রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের পরে সেই চাকার জোগান সাংঘাতিক ভাবে ধাক্কা খায়। চলতি অর্থবর্ষেও ৫২০ কোটি টাকা খরচ করে চিন ও রাশিয়া থেকে ৮০ হাজার চাকা আমদানি করেছে ভারত।
রেল সূত্রের খবর, দুর্গাপুরের কারখানায় ৪০ হাজার চাকা তৈরি হয়। কিন্তু ওই সংখ্যক চাকা দিয়ে সব বন্দে ভারত এক্সপ্রেস, দেশের সব এলএইচবি কোচ এবং কলকাতা মেট্রোর চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। রেল জানিয়েছে, বরাত পাওয়া নতুন সংস্থা বছরে ৮০ হাজার করে ২০ বছর ধরে চাকা তৈরি করবে, যার পুরোটাই কিনে নেবে রেল। বরাত পাওয়া সংস্থাকে প্রযুক্তিগত শর্ত মেনে নিজস্ব কারখানা তৈরি করতে হবে। ওই চাকার উৎপাদন শুরু হবে সেখানেই।
বন্দে ভারত এক্সপ্রেস নির্মাণের অন্যতম প্রধান স্থপতি তথা চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরির প্রাক্তন অধিকর্তা সুধাংশু মণি বলেন, ‘‘দেশে এই ধরনের কারখানা তৈরি হলে আর বিদেশ থেকে চাকা আমদানির প্রয়োজন হবে না। প্রতিযোগিতামূলক বরাত প্রক্রিয়ায় যে-দর উঠে এসেছে, সেটা খুবই আকর্ষক।’’