৫৩৩টি পাখি প্রজাতিকে চিহ্নিত করে দ্বিতীয় বারের জন্য দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করল পশ্চিমবঙ্গ। —ফাইল চিত্র।
ঘরের বাইরে কি গান শোনায় ‘বুলবুল পাখি, ময়না-টিয়ে’? সামনের ঝিলপাড়ের গাছেই কী থাকতে এসেছে পরিযায়ী অতিথিরা? আশেপাশে থাকা পাখিদের হদিস জানতে এ বছরও সারা বিশ্বব্যাপী ‘গ্রেট ব্যাকইয়ার্ড বার্ড কাউন্ট’-এ (জিবিবিসি) যোগ দিয়েছিলেন এ রাজ্যের পক্ষীপ্রেমীরা। আর তাতেই ৫৩৩টি পাখি প্রজাতিকে চিহ্নিত করে দ্বিতীয় বারের জন্য দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করল পশ্চিমবঙ্গ।
সারা বিশ্বে পাখি প্রজাতিদের চিহ্নিত করতে আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় ও অডবন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ১৯৯৮ সাল থেকে প্রতি ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় পাখিগণনা। ২০১৩ সাল থেকে এই গণনায় অংশ নিচ্ছে ভারতও। এ বছর ১৬-১৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী এই গণনা করা হয়। তার শেষে দেখা যাচ্ছে, দেশের ৩৭টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত এলাকাগুলির প্রতিটিতেই পাখি দেখতে নেমেছিলেন পক্ষীপ্রেমীরা। তাতে সারা দেশে মোট ১০২৯টি প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে। তার মধ্যে ৫৩৩টি প্রজাতির দেখা মিলেছে এ রাজ্যেই (প্রথম স্থান)। আর এ রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রজাতির পাখি দেখা গিয়েছে দার্জিলিং জেলায়। গত বছরও ৪৯৩টি প্রজাতি চিহ্নিত করে দেশের মধ্যে প্রথম হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গই।
‘বার্ড ওয়াচার্স সোসাইটি’ নামে রাজ্যের একটি পাখিপ্রেমী সংস্থার সদস্য এবং চিকিৎসক কণাদ বৈদ্য বলছেন, ‘‘ওই চার দিন ছাদ, বারান্দা, উঠোন, জানলা, পুকুর-ঝিল বা যে কোনও জায়গা থেকে অন্তত টানা ১৫ মিনিট আশপাশে নজর রাখা হয়। তাতে যেক’টি পাখি চোখে পড়ল, সেটাই গণনার অংশ। এর পরে কোন প্রজাতির ক’টি পাখি দেখেছেন, সেটাই ই-বার্ড পোর্টালে নথিভুক্ত করতে হয়।’’ সান্দাকফু থেকে এ বার পাখিগণনায় অংশ নিয়েছিলেন কণাদ। জানাচ্ছেন, হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগর, সেই সঙ্গে গঙ্গা, সুন্দরবন— রাজ্যে বিভিন্ন ধরনের বাসস্থান (হ্যাবিটাট) ও জীববৈচিত্র্য থাকার কারণেই বিভিন্ন প্রজাতির পাখির সহাবস্থান দেখা যায়। এ বারের চার দিনে হাওড়া হুগলি, মালদহ, উত্তর ২৪ পরগনায় ১৩৩টি প্রজাতির পাখিকে নথিভুক্ত করেছেন ই-বার্ডের রিজিয়োনাল কোঅর্ডিনেটর এবং ‘বার্ড ওয়াচার্স সোসাইটি’র সদস্য সন্দীপ দাস। তখনই মালদহে খোঁজ পেয়েছেন জর্ডনের বাজপাখির (জার্ডনস বাজা), যা বিশেষত উত্তর বাংলায় দেখা যায়। সন্দীপ বলছেন, ‘‘ক্রমশ পাখি নিয়ে মানুষের উৎসাহ বাড়ছে। তাই এ বার রাজ্যের প্রতিটি জেলা থেকে পাখিগণনা করা গিয়েছে। শুধু পাখি দেখা বা চেনাই নয়, পাখির ডাক চিনে তাকে চিহ্নিত করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। এ ভাবেও বহু প্রজাতি চিহ্নিত করা হয়েছে।’’
এ বারের জিবিবিসি-তে এ দেশের পাখিপ্রেমীদের চোখে ধরা দিয়েছে নতুন প্রজাতিও! তেলঙ্গানার ওয়ারাঙ্গলে দেখা গিয়েছে আফ্রিকার বাসিন্দা, হাট্টিট্টি প্রজাতির (স্পার উইঙ্গড ল্যাপউইং) পাখিকে। তবে কণাদ বলছেন, ‘‘এটা নিয়ে বিতর্ক থাকছে। কারণ, এই পাখি পরিযায়ী নয়। অথচ সমুদ্র থেকে অনেকটাই দূরে, মূল ভূখণ্ডের ভিতরে এটিকে দেখা গিয়েছে। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, বেআইনি পাখি ব্যবসায়ীদের খাঁচা থেকে পাখিটি কোনও ভাবে মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে আসেনি তো?’’