উন্নয়ন পরিষদ ফেরানোর দাবি

নীতি আয়োগে মোদীর ডাক ফেরালেন মমতা, চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর

আগামী ১৫ জুন নীতি আয়োগের পরিচালন সমিতির বৈঠক ডেকেছেন মোদী। আমন্ত্রণ গিয়েছে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। কিন্তু তাতে যোগ দেবেন না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৯ ০৩:০৮
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদীর ডাকা প্রথম সরকারি বৈঠকের আমন্ত্রণ ফেরালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

আগামী ১৫ জুন নীতি আয়োগের পরিচালন সমিতির বৈঠক ডেকেছেন মোদী। আমন্ত্রণ গিয়েছে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। কিন্তু তাতে যোগ দেবেন না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার মোদীকে চিঠি লিখে সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। মমতার মতে, নীতি আয়োগের হাতেঅর্থ বরাদ্দের কোনও ক্ষমতা নেই। বিকল্প হিসেবে তিনি চান জাতীয় উন্নয়ন পরিষদকে কেন্দ্র ফের কার্যকর করুক। সে কথাও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিতে লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

এ দিনই দিল্লিতে বিজেপি মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেনের অভিযোগ, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মানছেন না। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মেনে কেন্দ্র-রাজ্য একসঙ্গে কাজ করার লক্ষ্যেই নীতি আয়োগের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানেই উনি আসছেন না।’’

Advertisement

ফারাক

যোজনা কমিশনের যে সব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা নীতি আয়োগের নেই

• বার্ষিক যোজনার বহর চূড়ান্ত হওয়ার পরেও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ‘অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় সহায়তা’ অনুমোদন
• রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্প রূপায়ণে রাজ্যগুলির জন্য অর্থ বরাদ্দ ঠিক করা
• বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প যাচাই করে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি বা হ্রাস তা হলে নীতিআয়োগ কী করে?
• সরকারি ‘থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক’
• নীতি প্রণয়নে সুপারিশ
• কেন্দ্রীয় নীতি রূপায়ণে রাজ্যের সঙ্গে সমন্বয়

মুখ্যমন্ত্রী গেলে সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যসচিবেরও যাওয়ার আমন্ত্রণ ছিল। কিন্তু মমতা না যাওয়ায় রাজ্যের কোনও আমলার তাতে যোগ দেওয়ার সুযোগ নেই। ফলে নীতি আয়োগের বৈঠকে রাজ্যের কোনও প্রতিনিধিত্ব থাকছে না। রাজ্যের বক্তব্য জানানোর সুযোগও থাকছে না বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।

কেন নীতি আয়োগের বৈঠকে তিনি যাচ্ছেন না, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি লিখেছেন, ‘যোজনা কমিশনের পরিবর্তে ২০১৫-এর ১ জানুয়ারি নীতি আয়োগ নামে নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়। এই প্রতিষ্ঠানের কোনও আর্থিক ক্ষমতা নেই। রাজ্যের বার্ষিক পরিকল্পনায় সহায়তা দেওয়ার ক্ষমতাও নেই আয়োগের। প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র অফিসাররা পর্যন্ত আরও ক্ষমতা চেয়ে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিচ্ছেন। রাজ্যগুলিকে অর্থ বরাদ্দের ক্ষমতা চেয়েছেন তাঁরা।’

এই পরিপ্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে জানিয়েছেন, ‘আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করার জন্য নীতি আয়োগের অর্থ বরাদ্দের ক্ষমতা জরুরি। একই কথা বলেছেন দেশের এক প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা অর্থনীতিবিদও।’ এই অবস্থায় তাঁর পক্ষে বৈঠকে যোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

পাশাপাশি রাজ্যগুলির সঙ্গে কেন্দ্রের সমন্বয়ের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীকে কিছু প্রস্তাব দিয়ে মমতার বক্তব্য, ‘নীতি আয়োগ নিয়ে গত সাড়ে চার বছরের অভি়জ্ঞতার ভিত্তিতে বলতে পারি, কেন্দ্র বরং আন্তঃরাজ্য পরিষদের কাঠামো ঢেলে সাজার কথা বিবেচনা করুক। সংবিধানের ২৬৩ ধারা মোতাবেক তৈরি হওয়া ওই পরিষদের অবয়ব পরিবর্তন করে তা যুক্তরাষ্ট্রীয় সমন্বয়ের অন্যতম পরিসর হতে পারে।’ সেই সঙ্গে জাতীয় উন্নয়ন পরিষদকে ফের সক্রিয় করার পরামর্শও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আরও একটি চিঠি লিখবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মমতা।

তবে সরকারি সূত্রের বক্তব্য, গত বছরই ১৭ জুন নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের বৈঠকে মমতা যোগ দিয়েছিলেন। এবারের পরিচালন পরিষদের বৈঠকে কৃষি, কর্মসংস্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তাতে যোগ দিয়েই নিজের বক্তব্য জানাতে পারতেন। রাজ্যের সমস্যাও তুলে ধরতে পারতেন। ওই সূত্রের মতে, চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ার পরে রাজ্যগুলির হাতে কেন্দ্রীয় আয়ের বিপুল ভাগ চলে যাওয়ার ফলেরাজ্য নিজের মতো খরচ করতে পারছে। অর্থ বরাদ্দ নিয়ে আর কোনও বিতর্ক হওয়ারই কথা নয়।

বিজেপির মুখপাত্র শাহনওয়াজের কটাক্ষ, ‘‘ফণীর পরে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী ফোন করেছিলেন। তিনি ধরেননি। তবে একদিকে ভাল। উনি বেশিদিন মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন না। বেশিদিন এইসব বৈঠকে আসতেও হবে না। আগেভাগেই সেই অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে। এখন সবাই জানেন, দিদি জানেওয়ালি হ্যায়, বিজেপি আনেওয়ালি হ্যায়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement