দিল্লি পুলিশের অভিযানে ধৃত জঙ্গিরা। ছবি: সংগৃহীত।
উৎসবের মরসুম ও আসন্ন নির্বাচনকে মাথায় রেখে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থানের মতো একাধিক রাজ্যে বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা করেছিল গত কাল গ্রেফতার হওয়া ৬ সন্দেহভাজন। স্বরাষ্ট্র সূত্র জানিয়েছে, তাদের কাছে পাওয়া অস্ত্রের সঙ্গে পঞ্জাব সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তান ড্রোনের মাধ্যমে যে অস্ত্র ও বিস্ফোরক পাঠাচ্ছে, তার মিল রয়েছে। আজ এই সূত্রে মুম্বইয়ে এক ট্র্যাভেল এজেন্টকে আটক করেছে মুম্বই পুলিশ।
আজ ধৃতদের ১৪ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গিদের সম্পর্ক, কোনও যৌথ নেটওয়ার্ক রয়েছে কি না সে বিষয়েও আরও তথ্য জোগাড় করার চেষ্টা করছে পুলিশ।
আজ সকালে মুম্বইয়ের ধারাভি এলাকার এক ট্র্যাভেল এজেন্টকে আটক করে মুম্বই পুলিশ। সূত্রের মতে, ওই ব্যক্তি মুম্বইয়ের বাসিন্দা তথা রাজস্থানের কোটা থেকে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া জান মহম্মদ শেখ ওরফে সামির কালিয়াকে গোল্ডেন এক্সপ্রেস ট্রেনে স্লিপার শ্রেণির টিকিটের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। তদন্তে প্রকাশ, দীর্ঘ সময় দাউদের ভাই আনিস ইব্রাহিমের হয়ে মুম্বইয়ের কাজ সামলানোর দায়িত্বে ছিল সামির।
কালকের ঘটনায়তেও সামিরই মূল মাথা বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। সামিরের দায়িত্ব ছিল সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা চালাচালি, সেই সঙ্গে প্রয়াগরাজে অস্ত্র ও বিস্ফোরক সংগ্রহ করে নিরাপদ জায়গায় রাখা। সেই লক্ষ্যে মূলত ড্রোনের মাধ্যমে অল্প পরিমাণে অস্ত্র ও বিস্ফোরক পাঠানো শুরু করেছিল পাকিস্তান। সম্প্রতি পঞ্জাব সীমান্তে পাকিস্তানের একটি ড্রোন গুলি করে নামান নিরাপত্তারক্ষীরা। তাতে যে বিস্ফোরক ও অস্ত্র উদ্ধার হয়, তার সঙ্গে প্রয়াগরাজে পাওয়া বিস্ফোরকের হুবহু মিল। এক স্বরাষ্ট্র কর্তার মতে, ‘‘পাকিস্তান থেকে পাঠানো বিস্ফোরক অল্প অল্প করে জমা করা হচ্ছিল প্রয়াগরাজে। যা আগামী দিনে উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লিতে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটানোর কাজে ব্যবহার করার কথা ভাবা হয়েছিল।’’
গোয়েন্দাদের দুশ্চিন্তায় রেখেছে পাকিস্তানের মাটিতে বাংলাদেশি জঙ্গি অনুশীলনের বিষয়টিও। ধৃতদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নেয় দিল্লির বাসিন্দা ওসামা ওরফে শামি এবং প্রয়াগরাজের জিশান কামার। এর মধ্যে জিশান লখনউ থেকে এবং শামি দিল্লি থেকে মাসকাটে পৌঁছয়। সেখানে তাদের সঙ্গে ১৫-১৬ জন বাংলাদেশির আলাপ হয়। দিল্লি পুলিশ সূত্রের মতে, ওই বঙ্গভাষীরা সকলেই সম্ভবত জামাতুল মুজাহিদিন (বাংলাদেশ)-এর সদস্য। মূলত পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মদতে এরা নেপাল হয়ে মাসকাট পৌঁছয়।
গোয়েন্দা সূত্রের মতে, মাসকাটে ভারত-বাংলাদেশের দলকে কয়েকটি দলে ভাগ করে প্রথমে ইরান ও সেখান থেকে সমুদ্রপথে পাকিস্তানের গ্বদর বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাদের সিন্ধু প্রদেশের থাটাতে পাঠানো হয়। ২৬/১১ হামলার অন্যতম জঙ্গি আজমল কসাভও থাটাতেই প্রশিক্ষণ পেয়েছিল। গত কালের ধৃতরা জানিয়েছে, পাক সেনার অফিসারেরাই তাদের ওখানে অস্ত্র ও বিস্ফোরক সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেয়। সূত্রের মতে, প্রশিক্ষণ শেষে তারা ফের ইরান-মাসকাট হয়ে ভারতে আসে। বাংলাদেশি দলটি সম্ভবত নেপাল হয়ে বাংলাদেশে ফেরে। এমন ১৫-১৬ জন জঙ্গির বাংলাদেশে লুকিয়ে থাকাটা পূর্ব ভারতের জন্য বিপদের বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। ধৃতদের সঙ্গে বাংলাদেশি জঙ্গিদের সম্পর্ক আছে কি না এবং আইএসআই কোনও অভিন্ন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে কি না, খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। দুই জঙ্গির পাক যোগের যে অভিযোগ ভারত তুলেছে, তা অবশ্য আজ উড়িয়ে পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক।