শিল্পপতি গৌতম আদানি। ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্যই অতিরিক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে তাঁর সংস্থা, এমন অভিযোগ বিরোধীরা বার বার তুলেছে। এক সাক্ষাৎকারে সেই সমালোচনার বিরুদ্ধে মুখ খুললেন শিল্পপতি গৌতম আদানি। তাঁর কথায়, “আমরা চাই প্রতিটি রাজ্যেই বিনিয়োগ করতে... আদানি গোষ্ঠী খুশি যে, আমরা বর্তমানে ২২টি রাজ্যে কাজ করছি। এবং সমস্ত রাজ্যই কিন্তু বিজেপি-শাসিত নয়... এ কথা বলতে পারি, আমাদের কোনও রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও সমস্যা নেই। এমনকি বাম-শাসিত কেরল, মমতাদিদির পশ্চিমবঙ্গ, নবীন পট্টনায়কজির ওড়িশা, জগন্মোহন রেড্ডি, কেসিআর (চন্দ্রশেখর রাও)-এর রাজ্যেও আমরা কাজ করছি।”
এর পরেই বিশ্বে ধনীদের তালিকায় তৃতীয় ৬০ বছর বয়সি এই শিল্পপতি জানান, তিনি মোদীর থেকে কোনও ব্যক্তিগত সুবিধা নেননি। তাঁর বক্তব্য, জাতীয় স্বার্থে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা যেতেই পারে। কিন্তু প্রকল্প রূপায়ণ হলে সেটা শুধু আদানি গোষ্ঠীর জন্য হয় না, সকলেই তার সুবিধা পায়। ব্যাঙ্ক ঋণ প্রসঙ্গে এই শিল্পপতি জানান, গত সাত-আট বছরে তাঁদের আয় বেড়েছে ২৪ শতাংশ। অন্য দিকে ঋণও ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সঙ্গে জানান, আদানি গোষ্ঠীর ঋণের তুলনায় সম্পত্তির পরিমাণ চার গুণ।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তাঁর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে যে অভিযোগ তোলেন, সেই প্রসঙ্গে কংগ্রেস-শাসিত রাজস্থানের উদাহরণ তুলে ধরেছেন আদানি। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের আমন্ত্রণে রাজস্থানে বিনিয়োগ সংক্রান্ত এক সম্মেলনে তিনি গিয়েছিলেন। স্বয়ং রাহুলও রাজস্থানে আদানি গোষ্ঠীর বিনিয়োগ (মরুরাজ্যে ৬৮ হাজার কোটির বিনিয়োগ) নিয়ে প্রশংসা করেছেন বলে দাবি আদানির। তাঁর মতে, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও রাহুলের নীতি উন্নয়ন-বিরোধী নয়।
বিরোধীদের কটাক্ষের প্রসঙ্গে আদানি জানিয়েছেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীনই তাঁর সাফল্যের শুরু। তুলে ধরেছেন রাজীব গান্ধীর জমানার কথাও। এই ধনকুবেরের কথায়, “আমার জীবনে তিনটি মোড়-ঘোরানো মুহূর্ত। প্রথম, ১৯৮৫ সালে রাজীব গান্ধী মসনদে থাকার সময়ে আমদানি-রফতানিতে নয়া নীতির জেরে আমাদের সংস্থা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সংস্থায় পরিণত হয়। দ্বিতীয় বার, ১৯৯১ সালে পি ভি নরসিংহ রাওয়ের সময়ে মনমোহন সিংহ নতুন নীতি (আর্থিক সংস্কার) এনেছিলেন। তাতে আমরা সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে প্রবেশ করি। আর তৃতীয় দফা হল গুজরাতে নরেন্দ্র মোদীর ১২ বছরের জমানা। সে-ও এক দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা।”
গত বছরে দেশে বাকিদের ছাপিয়ে সবচেয়ে বেশি সম্পত্তি বৃদ্ধি হয়েছিল এই শিল্পপতির। শক্তি, বন্দর, খনি, বিমানবন্দর, পরিকাঠামো-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আদানি গোষ্ঠীর ব্যবসায়িক বৃদ্ধি নিয়ে নানা কটাক্ষ উড়ে এলেও আদানি জানিয়েছেন, নিলামে অংশ নিয়েই যাবতীয় কাজের বরাত পেয়েছেন তাঁরা। তাঁদের বিরুদ্ধে কারচুপির কোনও অভিযোগ নেই।
তাঁর সাফল্যের মূল মন্ত্র কী? প্রশ্নের উত্তরে আদানি জানিয়েছেন, পরিশ্রমই তাঁকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে।