ছবি: পিটিআই।
কাছাড় জেলায় প্রথম দিনেই কোভিশিল্ডের হাজার ডোজ় জমে বরফ হওয়ায় কোভিড প্রতিষেধক গ্রহণের আগ্রহ কমে গিয়েছে৷ দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার জেলায় তালিকাভুক্ত ছিলেন ১৭৩ জন৷ প্রতিষেধক নিয়েছেন ৪২ জন৷ আজ তৃতীয় দিনেও একই চিত্র৷ ১০১ জনে ৬৮ জনই টিকা এড়িয়ে গেলেন৷
বিষয়টি উদ্বেগজনক, স্বীকার করলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক সুমিত সাত্তায়ান৷ তবে কোভিশিল্ড বরফ হয়েছিল বলে আতঙ্কের কিছু নেই বলে অভয় দেন সুমিতবাবু৷ তিনি বলেন, স্বাস্থ্য দফতর সচেতন রয়েছে বলেই বরফ জমা একটি ডোজ়ও দেওয়ার চেষ্টা হয়নি৷ শিলচর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ বাবুল বেজবরুয়া শনিবারই কোভিশিল্ড নিয়েছেন৷ আজ নিলেন উপাধ্যক্ষ ভাস্কর গুপ্ত৷ তাঁরা জানিয়েছেন, কোনও সমস্যা নেই৷
কিন্তু হাজার ডোজ় প্রতিষেধক নষ্ট হল কী ভাবে? সুমিতবাবুর কথায়, গাফিলতি নিশ্চিতভাবেই হয়েছে৷ কিন্তু ইচ্ছাকৃত কি না, সেটিই বড় প্রশ্ন৷ সে সব জানতেই তদন্ত চলছে৷ এ পর্যন্ত তিন জনকে শো-কজ় নোটিস দেওয়া হয়েছে। এমনটি যেন আর না হয়, সে জন্য ব্যবস্থা নিয়েছেন তাঁরা৷ আইস-লাইনড রেফ্রিজারেটর (আইএলআর)-এর তাপমাত্রা নিরীক্ষণের জন্য কর্মীদের বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ তাদের দিনের বেলায় প্রতি দু’ঘণ্টা অন্তর রিপোর্ট পাঠাতে হবে৷ রাতে পাঠাবে চার ঘণ্টা ব্যবধানে৷
তদন্তকারী ডিস্ট্রিক্ট ইমিউনাইজেশন অফিসার অরুণ দেবনাথের বক্তব্য, আইএলআর-এ ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ওই প্রতিষেধক রাখার কথা। সে দিন ওই ভাবেই রাখা হয়েছিল। তাপমাত্রার হেরফের হলেই আইএলআর থেকে নির্দিষ্ট মোবাইলে সতর্কবার্তা পৌঁছত। কিন্তু আইএলআর সে দিন মাইনাস ১৪-য় চলে গেলেও কোনও বার্তাই পাঠায়নি। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের (এনএইচএম) অসম রাজ্য অধিকর্তা এস লক্ষ্মণন জানান, কাছাড়ে দু’টি প্রতিষেধক কেন্দ্র রয়েছে৷ শিলচর সিভিল হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ৷ পুরো জেলার সেন্ট্রাল স্টোরটি রয়েছে সিভিল হাসপাতালে। সেখান থেকে দৈনিক ১০০ ডোজ় করে মেডিক্যাল কলেজে পাঠানোর কথা ছিল। একসঙ্গে ১০০০ ডোজ় কী ভাবে গেল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
স্টোর থেকে প্রতিষেধক পাঠিয়েছিলেন অতিরিক্ত চিফ মেডিক্যাল অ্যান্ড হেল্থ অফিসার পি কে রায়। এ সংক্রান্ত কাজকর্মের দায়িত্বে ছিলেন করণিক প্রভাত সিংহ। দু’জনকেই শো-কজ় করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের যুগ্ম অধিকর্তা সুদীপজ্যোতি দাস। শো-কজ় করা হয়েছে মেডিক্যাল কলেজের জিএনএম বিরলা বর্মনকেও৷ তিনিই মেডিক্যাল কলেজের পক্ষে ওই প্রতিষেধক গ্রহণ করেছিলেন৷ পি কে রায়ের বক্তব্য, প্রথম পর্যায়ে মেডিক্যাল কলেজ কেন্দ্র থেকে ১৪১১ জনকে প্রতিষেধক প্রদানের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়। মেডিক্যালের নিজস্ব স্টোর রয়েছে, নিজেদের আইএলআর আছে৷ তাই তিনি একসঙ্গে ১০০০ ডোজ় পাঠিয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, আইএলআর নষ্ট না-হলে কোনও সমস্যাই হত না। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ বাবুল বেজবরুয়া আইএলআর নষ্ট হওয়ার কথা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “গুয়াহাটি থেকে তদন্তকারী দল এলেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।”