প্রথমে এসপি পদমর্যাদার অফিসার জানালেন, নম্রতা দামোরের মৃত্যুর ঘটনার পুনর্তদন্ত হবে। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উজ্জ্বয়িনীর আইজিপি জানিয়ে দিলেন, পুনর্তদন্তের কোনও প্রশ্নই নেই। এমবিবিএস ছাত্রী নম্রতা দামোরের মৃত্যুর ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরে দিনভর এমন নাটকেরই সাক্ষী রইল উজ্জ্বয়িনী।
ইনদওরের এমজিএম মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন নম্রতা দামোর। ব্যপম চক্রের সাহায্যে তিনি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন বলে সন্দেহ। তিন বছর আগে উজ্জ্বয়িনীর কাছে রেললাইনের ধার থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ১৯ বছরের নম্রতার দেহ। তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন দাবি করে ২০১৪ সালে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ সেই মামলা বন্ধ করে দেয়।
তাঁর মৃত্যুর ঘটনা তখনকার মতো চাপা পড়ে গেলেও ব্যপম দুর্নীতির জেরে ফের আলোচনায় উঠে এসেছে সেই ঘটনার প্রসঙ্গ। সম্প্রতি নম্রতার বাবার সাক্ষাৎকার নেওয়ার পরে রহস্যজনক ভাবে হঠাৎ মারা যান টিভি সাংবাদিক অক্ষয় সিংহ। সেই সূত্রেই ফের শিরোনামে আসে নম্রতার মৃত্যু। ঘটনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে এ দিন তাঁর ময়নাতদন্তর রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসায়। সন্দেহ বাড়িয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি ব্যপম দুর্নীতির সঙ্গেই জড়িত নম্রতার মৃত্যুর ঘটনা?
চিকিৎসকদের দাবি তেমনটাই। সেই সময়ে নাকি তাঁর ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, নম্রতাকে গলা টিপে খুন করা হয়েছে। যদিও পুলিশ প্রাথমিক ভাবে খুনের মামলা দায়ের করলেও পরে এই ঘটনাকে আত্মহত্যা আখ্যা দিয়ে ২০১৪তে মামলা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। চিকিৎসকের দাবি, অন্য কারও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল পুলিশ। কিন্তু আসল রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই ফের শুরু হয়েছে বিতর্ক। যার জেরে এ দিন উজ্জ্বয়িনীর এসপি মনোহর বর্মা তড়িঘড়ি জানান, পুলিশ ঘটনার পুনর্তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ তার কয়েক ঘণ্টা পরেই উজ্জ্বয়িনীর আইজিপি ভি মধু কুমার সাংবাদিকদের জানান, ‘‘কোনও পুনর্তদন্তের নির্দেশ আসেনি। এই ঘটনার তদন্ত শেষ। পুনর্তদন্তের কোনও প্রশ্নই উঠছে না।’’ তাঁর বক্তব্য, আদালত যদি মনে করে একমাত্র তখনই পুনর্তদন্ত করা হয়। এ ক্ষেত্রে তেমন কিছু ঘটেনি।
পুলিশের এই আচমকা ভোল বদলেই সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে। নম্রতার মৃত্যু নিয়ে তবে কি ফের কিছু ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ? নম্রতার ময়নাতদন্ত করেছিলেন যাঁরা, সেই চিকিৎসকদলের বি বি পুরোহিত এ দিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘ওই মেয়েটিকে খুন করা হয়েছিল। স্বাভাবিক মৃত্যুর কোনও ব্যাপারই নেই।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমরা তিন চিকিৎসক মিলে ময়াতদন্ত করেছিলাম। ২৫ বছরেরও বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের। রিপোর্টের কোথাও একে আত্মহত্যার ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়নি। মেয়েটির নাক ও মুখের তিন জায়গায় নখের আঁচড়ের দাগ মিলেছিল। যা থেকে বোঝা যাচ্ছিল ওঁর গলা চেপে ধরা হয়। মেয়েটির শরীরে যে ধরনের আঘাত ছিল, তা থেকেও বোঝা যাচ্ছিল তাঁকে মৃত্যুর পরে রেললাইনে টেনে এনে ফেলা হয়েছিল।’’