—প্রতীকী ছবি।
ঝাড়খণ্ডে বিদেশি মহিলা পর্যটকের গণধর্ষণের ঘটনা উস্কে দিয়েছে দিল্লির নির্ভয়াকাণ্ডের স্মৃতি। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে দ্রুত তদন্তও করেছে পুলিশ। শুধু তা-ই নয়, জেলা প্রশাসনের তরফে ওই মহিলার স্বামীকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, যত দ্রুত সম্ভব তারা তদন্ত প্রক্রিয়া চালিয়ে গিয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে তার আশ্বাসও দিয়েছে পুলিশ। সাত জন অভিযুক্তের মধ্যে আপাতত তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দ্রুত তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নির্যাতিতা পর্যটকের স্বামী।
স্বামীর সঙ্গে ঝাড়খণ্ডে ঘুরতে গিয়েছিলেন স্পেনীয় মহিলা। মারধর করে স্বামীর সামনে থেকেই তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে সাত জন মিলে গণধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। দুমকার এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে।পুলিশ সূত্রে খবর, দিন কয়েক আগে স্পেন থেকে ভারতে এসেছিলেন ওই স্পেনীয় মহিলা এবং তাঁর স্বামী। বৃহস্পতিবার ওই দুই পর্যটক ঝাড়খণ্ডে গিয়েছিলেন। তার পরের দিন দু’জনে দু’টি বাইক নিয়ে দুমকার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। সারাদিন ঘোরাঘুরির পর হাঁসডিহা থানার কুরমাহাট এলাকায় পৌঁছলে সেখানে রাস্তার ধারে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন স্বামী-স্ত্রী।
স্পেনীয় মহিলার স্বামীর দাবি, তাঁরা দু’জনে যখন রাস্তার ধারে একটি নির্জন জায়গায় তাঁবু খাটিয়ে সেখানে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, রাত ১০টা নাগাদ সাত জন যুবক বাইকে চেপে সেখানে আসেন। অভিযোগ, ওই যুবকেরা তাঁদের দু’জনকে হঠাৎ মারধর করতে শুরু করেন। তার পর তাঁর সঙ্গীকে জোর করে তুলে নিয়ে যান। বাধা দিতে গেলে তাঁকে রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয়। মহিলাকে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ।
পুলিশের কাছে এই খবর পৌঁছতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় তারা। মহিলার স্বামীর কাছ থেকে ঘটনাটি শোনার পর মহিলার খোঁজে তল্লাশি শুরু করে তারা। কুরমাহাট থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে রাস্তা থেকে মহিলাকে উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে খবর। তার পর দুই পর্যটককে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছিলেন ওই মহিলা। সমাজমাধ্যমে তিনি একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে জানিয়েছিলেন কী ভাবে তাঁর এবং তাঁর স্বামীর উপর হামলা চালানো হয়। নির্যাতিতা ভিডিয়োয় বলেছিলেন, ‘‘আমরা এখন হাসপাতালে আছি। আমাদের সঙ্গে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, আমরা চাই না কারও সঙ্গে এমন হোক। সাত জন লোক মিলে আমাকে ধর্ষণ করেন। শুধু তা-ই নয়, আমাদের মারধর করার পর অভিযুক্তেরা আমাদের ঘাড়ে ছুরি ঠেকিয়ে ভয় দেখান। আমাদের বলা হয়, যদি আমরা চিৎকার করি বা কাউকে কিছু জানাই, তবে আমাদের প্রাণে মেরে ফেলা হবে।’’ দুমকার পুলিশ সুপার পীতাম্বর সিংহ বলেন, ‘‘মহিলা এবং তাঁর স্বামী শুক্রবার মধ্যরাতে পুলিশের একটি টহল ভ্যানকে থামান। প্রাথমিক ভাবে ওই টহল ভ্যানে থাকা পুলিশ কর্মীরা ওই মহিলার কথা পুরোপুরি বুঝতে পারেননি। কারণ তিনি ইংরেজি এবং স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলছিলেন। দু’জনকে উদ্ধার করে পুলিশ স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসকেরা মহিলার পরীক্ষা করে জানান যে, তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে।’’
এই ঘটনার ভয়াবহতা উল্লেখ করে বিজেপি বিধায়ক অনন্ত ওঝা বলেন, ‘‘রাজ্যের পক্ষে এই ঘটনাটি কলঙ্কের মতো। বিদেশিরা যে এখানে নিরাপদ নন, এই ঘটনা তার ইঙ্গিত বহন করে। অভিযুক্তদের দ্রুত সাজা দেওয়া প্রয়োজন।’’