উত্তরপ্রদেশের রামপুরে বিক্ষোভকারীদের জমায়েত। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।
ফের মিছিল-বিক্ষোভ-সংঘর্ষের জেরে অশান্ত উত্তরপ্রদেশ। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিরোধিতায় রামপুর শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে নিহত হলেন এক ব্যক্তি। এই নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে টানা অশান্তির জেরে রাজ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪। তাঁদের মধ্যে আট বছরের এক নাবালকও রয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, শনিবার সকাল ১১টা নাগাদ রামপুরে সিএএ-র বিরোধিতায় মিছিল শুরু হয় রামপুরের হাতিখানা চক থেকে। গত কয়েক দিন থেকে রাজ্যে অশান্তির জেরে ওই মিছিলের অনুমতি দেয়নি উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। তবে মিছিলের উদ্যাক্তারা তা বাতিল ঘোষণা করার আগেই দেখা যায় হাতিখানা চকে ভিড় করতে শুরু করেছেন বিক্ষোভকারীরা। ঘণ্টাদুয়েক পর ওই এলাকায় অশান্তি শুরু হয়। মিছিল করায় বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে বিক্ষোভকারীদের। পুলিশের দাবি, বিক্ষোভকারীরা তাদের লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে থাকেন। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এর পর কাঁদানে গ্যাসও ছোড়া হয়। তবে তাতে আরও অশান্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। পুলিশের গুলিতে নিহত হন ২৮ বছরের এক যুবক। পরিস্থিতি সামলাতে ওই এলাকায় পৌঁছন উত্তরপ্রদেশ পুলিশের অতিরিক্ত ডিজি অবিনাশ চন্দ্র।
আরও পড়ুন: ‘গুলির বদলে গুলি চলবেই’, মন্তব্য বিজেপির জাতীয় সম্পাদকের
আরও পড়ুন: সিএএ নিয়ে প্রতিবাদের আবহে ভাইরাল হল জামিয়া মিলিয়ার পড়ুয়াদের পুরনো এই ভিডিয়ো
জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে গুলিচালনা উত্তরপ্রদেশ পুলিশের। শুক্রবার মেরঠে। ছবি: এএফপি।
গত কয়েক দিন ধরেই সিএএ এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) বিরোধী বিক্ষোভ ঘিরে উত্তাল উত্তরপ্রদেশ। থমথমে রাজধানী ছিল দিল্লিও। যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে বৃহস্পতিবার থেকে টানা দু’দিনের বিক্ষোভ অশান্তিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪। উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন সূত্রে খবর, এর মধ্যে মেরঠে পাঁচ জন, কানপুর, ফিরোজাবাদ ও বিজনৌরে দু’জন করে এবং মুজফ্ফরনগর, সম্বল ও বারাণসীতে এক জন করে নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আট বছরের এক নাবালকও রয়েছে। বিক্ষোভের সময় পদপিষ্ট হয়ে ওই নাবালকের মৃত্যু হয়। পরিস্থিতি সামলাতে শুধুমাত্র প্রয়াগরাজেই ১৫০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গাজিয়াবাদে আটক ৬৫ জন। অশান্ত যোগীর রাজ্যে গভীর রাত থেকেই কোপ পড়েছে বিভিন্ন জেলার ইন্টারনেট পরিষেবায়। রাজ্যে সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভ পরিস্থিতি নিয়ে এ দিন রাজ্যপাল আনন্দীবেন পটেলের সঙ্গে দেখা করবেন আদিত্যনাথ।
জেলায় জেলায় সংঘর্ষে আহত হয়েছেন বহু মানুষ। পুলিশ সূত্রে খবর, অন্তত ছ’জন পুলিশকর্মীর গুলি লেগেছে। তাঁদের অবস্থা গুরুতর। রাজ্য পুলিশের ডিজি ওপি সিংহের দাবি, পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে জনতা। তবে সেই দাবিকে নস্যাৎ করে দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া কয়েকটি ভিডিয়ো। তাতে দেখা গিয়েছে, জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধের সময় গুলি চালাচ্ছে উত্তরপ্রদেশের পুলিশকর্মীরা। গুলিচালনা ছাড়াও সংঘর্ষের সময় পাথর ছোড়া ও পুলিশের একাধিক গাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনাও ঘটে।
উত্তরপ্রদেশের জেলার জেলায় সংঘর্ষের পর রাত থেকেই লখনউ, বিজনৌর, মেরঠ, ফিরোজাবাদ, কানপুর, সম্বল, মোরাদাবাদ, আলিগড়, বরেলী, প্রয়াগরাজ (ইলাহাবাদ)-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাজ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে এ দিন রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এই আবহে সিএএ-র বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি)-র নেত্রী মায়াবতী। এ দিন কেন্দ্রের কাছে এই আইন প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি। সেই সঙ্গে তাঁর আরও দাবি, সিএএ ঘিরে এনডিএ জোটের মধ্যেই মতপার্থক্য তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি, শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ করার জন্যই সকলের কাছে আবেদন করেছেন মায়াবতী। তাঁর কথায়, ‘‘এনআরসি এবং সিএএ নিয়ে এখন এনডিএ-র মধ্যেই মতপার্থক্য গড়ে উঠতে শুরু করেছে। অতএব এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হোক। সেই সঙ্গে সকলে যাতে কেবলমাত্র শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ করেন, তারও আবেদন করছি।’’
তবে এই আবহে এই দিন নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয় রামপুরে। সেখানে বিক্ষোভের সময় ফের উত্তেজনা ছড়ায়। ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে গেলে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ।
উত্তরপ্রদেশের মতো উত্তপ্ত পরিস্থিতি না হলেও উত্তেজনা রয়েছে দিল্লিতেও। গভীর রাতে ভীম আর্মির প্রধান আজাদের গ্রেফতারির পাশাপাশি আটকদের মধ্যে আট নাবালকের উপস্থিতি নিয়েও দরিয়াগঞ্জ থানায় বিক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশ। পরে অবশ্য তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।