—ফাইল চিত্র।
ধর্মীয় বিশ্বাসের চেয়ে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার বড়— এই যুক্তি তুলে কাঁওয়াড় যাত্রায় ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত উত্তরপ্রদেশ সরকারকে পুনর্বিবেচনা করতে বলল সুপ্রিম কোর্ট। ১৯ জুলাই, সোমবারের মধ্যে আদালতকে তাদের নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানানোর নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উত্তরাখণ্ড ও হিমাচলপ্রদেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে মানুষের ঢল দেখে শঙ্কিত হয়ে করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের বিষয়ে সতর্ক করে দিচ্ছেন। কুম্ভের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে উত্তরাখণ্ড সরকার বাঁক কাঁধে কাঁওয়াড়িদের শিবের মাথায় জল ঢালতে যাওয়ায় অনুমতি না-দেওয়ার ঘোষণা করেছে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ সরকার ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মাচরণের অধিকারের যুক্তি তুলে কাঁওয়াড় যাত্রায় ছাড়পত্র দিয়ে ঘোষণা করেছে, ২৫ জুলাই থেকে যাত্রা শুরু হবে। আদালতে যোগী আদিত্যনাথের বিজেপি সরকারের দাবি, কাঁওয়াড়িদের করোনা না-হওয়ার শংসাপত্র নিয়ে দূরত্ব-বিধি মেনে রাস্তা চলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনিতেই করোনার কারণে অন্য বছরের মতো ভিড় এ বার হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত বার যাত্রা বন্ধ থাকায় বহু মানুষ ‘দুঃখ’ পেয়েছেন। এ বার তাই এই রকম ‘প্রতীকী’ যাত্রার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আর এফ নরিম্যান ও বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের বেঞ্চ এ দিন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমরা ভারতের নাগরিক হিসেবে উত্তরপ্রদেশ সরকারকে ১০০ শতাংশ এই যাত্রা করতে দিতে পারি না।’ বিচারপতিরা মনে করান, সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী তাঁরা স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এই মামলা গ্রহণ করেছেন। কারণ স্বাস্থ্যের অধিকার বা বেঁচে থাকার অধিকারকে দেশের সংবিধানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। আর সব অধিকার, এমনকি ধর্মাচরণের অধিকারও বেঁচে থাকার অধিকারের চেয়ে বড় নয়। সরকারের যে সিদ্ধান্ত দেশের সিংহ ভাগ মানুষের পক্ষে ক্ষতিকর ও আতঙ্কের কারণ হয়ে ওঠে, আদালতকে বাধ্য হয়ে তাতে হস্তক্ষেপ করতে হয়। এ বারেও সেটিই হয়েছে।
বুধবার সর্বোচ্চ আদালত স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা গ্রহণ করে উত্তরপ্রদেশ সরকারকে সতর্ক করে দেওয়ার পরেও বৃহস্পতিবার রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, কাঁওয়াড়দের ধর্মাচরণে কেউ বাধা দিতে পারবে না। সরকার যাত্রার জন্য সব রকম বন্দোবস্ত করবে। তার পরে এ দিন সুপ্রিম কোর্টের এই কঠোর নির্দেশের পরে তারা কী করে, সেটাই দেখার।