—ফাইল চিত্র।
কিছু দিন আগে পর্যন্ত ছেলেমেয়ের হাতে স্মার্টফোন দেওয়ার সাহস পেতেন না অভিভাবকরাও। কিন্তু করোনায় ‘রোটি-কপড়া-মকান’-এর মতো স্মার্টফোনও প্রাথমিক চাহিদায় পরিণত হয়েছে। তবে প্রয়োজনে তা যত না ব্যবহার করছে শিশুরা, তার চেয়ে বেশি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং মেসেজিং অ্যাপগুলির দিকেই তাদের বেশি ঝোঁক। দেশব্যাপী একটি সমীক্ষা তুলে ধরে এমনই জানাল কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের অধীনস্থ জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন (এনসিপিসিআর)। তাদের দাবি, স্মার্টফোন ব্যবহারের এই বাড়বাড়ন্তে শৈশবের উপর প্রভাব পড়ছে।
ইন্টারনেট ব্যবহারে বাধা না থাকায় স্মার্টফোন এবং ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারের ফলে শিশুদের শারীরিক, মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কী প্রভাব পড়ছে, তাদের সামাজিক আচরণ কতটা প্রভাবিত হচ্ছে, তা নিয়ে দেশের ছয় রাজ্যের মানুষের উপর একটি সমীক্ষা করে এনসিপিসিআর। তারা জানিয়েছে, করোনা কালে পড়াশোনার মাধ্যম হয়ে উঠেছে স্মার্টফোন এবং ট্যাব। কিন্তু মাত্র ১০.১ শতাংশ শেলেমেয়েই পড়াশোনার জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার করতে ভালবাসে। ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোনের সাহায্যে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং স্ন্যাপচ্যাটের মতো মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহারের দিকে ঝোঁক ৫৯.২ শতাংশ ছেলেমেয়ের।
৮ থেকে ১৮ বছর বয়সি ছেলেমেয়েদের ৩০.২ শতাংশেরই নিজের নিজের স্মার্টফোন রয়েছে বলে জানা গিয়েছে সমীক্ষায়। তাতে দেখা গিয়েছে, স্মার্টফোনের অধিকারী ১০ বছর বয়সিদের ৩৭.৮ শতাংশেরই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ১০ বছর বয়সি ছেলেমেয়েদের ২৪.৩ শতাংশ ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, করোনা কালে ১৩ বছরের ঊর্ধ্বে যাদের বয়স, তাদের মধ্যে স্মার্টফোনের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। আর বাবা-মায়েদের সম্মতিতেই তা সম্ভব হচ্ছে। কারণ ১২-১৩ বছর বয়সি ছেলেমেয়েদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দিতে আজকাল আর আপত্তি করছেন না বাবা-মায়েরা। বরং ল্যাপটপ এবং ট্যাবলেট দেওয়া নিয়ে কিছুটা হলেও ইতস্তত বোধ করেন।
—ফাইল চিত্র।
পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ এবং উত্তর-পূর্ব মিলিয়ে দেশের ছ’টি রাজ্য থেকে ৫ হাজার ৮১১ জনকে নিয়ে এই সমীক্ষা করা হয়। তাতে ৩ হাজার ৪৯১ জন স্কুল পড়ুয়া, ১ হাজার ৫৩৪ জন অভিভাবক, ৭৮৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারী পড়ুয়াদের অধিকাংশেরই বয়স ১৪-র আশপাশে। যথেচ্ছ সময় ধরে স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা এখন থেকেই অনিদ্রায় ভুগছে, তাদের মধ্যে ক্লান্তি এবং উৎকণ্ঠা দেখা দিচ্ছে বলে জানিয়েছে এনসিপিসিআর। শুধু তাই নয়, স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও পড়ুয়ারা ছাড়িয়ে গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, করোনা কালে অনলাইন ক্লাস চালু হওয়ার আগে পর্যন্ত ৭২.৭০ শতাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকাই স্মার্টফোন ব্যবহার করতেন না। শ্রেণিকক্ষে স্মার্টফোনের ব্যবহারে ছেলেমেয়েরা অমনযোগী হয়ে পড়বে বলে মনে করতেন ৫৪.১ শতাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকা।
অল্পবয়সে ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি দূর করা নিয়ে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এমস)-এ গবেষণারত বিশেষজ্ঞদের মতে, ছেলেমেয়েদের স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর অভিভাবকদের নজরদারি প্রয়োজন। অনলাইন ক্লাসের বাইরে বাকি সময়টা যাতে ছেলেমেয়ে স্মার্টফোনে মুখ গুঁজে বসে না থাকে, তার জন্য অন্য বিষয়ে তাদের উৎসাহিত করতে হবে বলেও মত তাঁদের।