—ফাইল চিত্র।
একতরফা ভাবে বিমান পাঠিয়ে দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ভারত। অথচ তাদের কোনও রকম উদ্ধারকাজ চালাতে দেওয়া হচ্ছে না। ‘বন্দে ভারত মিশন’ নিয়ে এ বার ভারতের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ তুলল আমেরিকা। তার জেরে এয়ার ইন্ডিয়ার চার্টার্ড বিমান বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা। জানিয়েছে, মার্কিন বিমান সংস্থাগুলিকে উদ্ধারকাজে অনুমতি না দিলে, আগামী ২২ জুলাই থেকে ইন্দো-মার্কিন রুটে বিমান চালাতে মার্কিন পরিবহণ দফতরের কাছ থেকে বিশেষ অনুমোদন জোগাড় করতে হবে এয়ার ইন্ডিয়াকে।
নোভেল করোনার প্রকোপে ভিন্ দেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের দেশে ফেরাতে ‘বন্দে ভারত মিশন’ চালু করেছে কেন্দ্র। এর আওতায় এয়ার ইন্ডিয়ার চার্টার্ড বিমান ও নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠিয়ে ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। মার্কিন মুলুক থেকে ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনতে সে দেশের সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে চুক্তিও হয়েছে ভারতের। কিন্তু সেই চুক্তি না মেনে ভারত নিজের মর্জি মাফিক বিমান চালাচ্ছে বলে অভিযোগ মার্কিন সরকারের। এমনকি মহামারির আগে ইন্দো-মার্কিন রুটে যত সংখ্যক বিমান চালানো হত, বর্তমানে তার অর্ধেকের বেশি বিমান চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের।
সোমবার মার্কিন পরিবহণ দফতর জানায়, করোনার প্রকোপে গত ২৫ মার্চ থেকে সমস্ত আন্তর্জাতিক বিমানের ওঠানামা বন্ধ রেখেছে ভারত। বন্দে ভারত মিশনের আওতায় বিদেশ থেকে ভারতীয়দের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে ৬ মে থেকে আন্তর্জতিক স্তরে চার্টার্ড বিমান পরিষেবা শুরু করে তারা। ইন্দো-আমেরিকা রুটে তাদের বিমান চলাচল শুরু হয় ১৮ মে থেকে। ভারতে আটকে পড়া মার্কিন নাগরিকদের আমেরিকায় পাঠানো এবং আমেরিকা থেকে ভারতীয়দের নিয়ে যাওয়া, দু’ক্ষেত্রেই যাত্রীদের টিকিট বিক্রি করছে এয়ার ইন্ডিয়া।
আরও পড়ুন: ‘মেধার ভিত্তিতে’ সুযোগ, এইচ-১ বি ভিসা নীতিতে সংস্কার করছেন ট্রাম্প
ভারত সরকার আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল নিষিদ্ধ রাখলেও, সরকারের সেই সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে বন্দে ভারত মিশনের আওতায় এয়ার ইন্ডিয়া বিমান পরিষেবা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে মার্কিন পরিবহণ দফতর। তাদের দাবি, ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল নিষিদ্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত সপ্তাহে ৩৪টি বিমান আমেরিকা রওনা দিত এবং ফিরে আসত। কিন্তু ৩ জুন এয়ার ইন্ডিয়ার তরফে অতিরিক্ত বিমানের যে সময়সূচি প্রকাশ করা হয়, তাতে ১০ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত ৫৯টি বিমানের যাত্রী নিয়ে আমেরিকা যাওয়া এবং ফেরত আসার উল্লেখ ছিল। ১৩ জুন আর একটি সময়সূচি প্রকাশ করে বলা হয়, ২০ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত আরও ১০টি অতিরিক্ত বিমান চালানো হবে।
বিমানের টিকিট বিক্রিতেও ভারত বৈষম্যমূলক আচরণ করছে বলে অভিযোগ করেছে মার্কিন সরকার। তাদের দাবি, ভারত থেকে আমেরিকা যাওয়ার ক্ষেত্রে এয়ার ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইট থেকে টিকিট কিনতে হচ্ছে যাত্রীদের। কিন্তু আমেরিকা থেকে ভারতের বিমানে উঠতে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হচ্ছে যাত্রীদের। শুধু তাই নয়, এখনও পর্যন্ত মার্কিন সংস্থাগুলিকে বিমান চালানোর অনুমতি দেয়নি ভারত। বা দিলেও, সরাসরি যাত্রীদের বিমানের টিকিট বিক্রি করার অনুমতি নেই তাদের।
আরও পড়ুন: সেনা পিছতে রাজি চিন, কোর কমান্ডার বৈঠকে ‘পারস্পরিক ঐকমত্য’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে আরও জানানো হয়েছে, গত ২৬ মে ডেলটা এয়ারলাইন্সের তরফে ভারতীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ দফতরকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়, ভারতে আটকে পড়া নাগরিকদেরও একই ভাবে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায় তারা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই চিঠির জবাব মেলেনি। এয়ার ইন্ডিয়ার নিয়মভঙ্গ নিয়ে ২৮ মে কেন্দ্রকে চিঠি দেয় দিল্লির মার্কিন দূতাবাসও। তার পরেও ভারতের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। তাই মার্কিন পরিবহণ দফতরের বিশেষ অনুমতি ছাড়া এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানগুলি ২২ জুলাই থেকে ইন্দো-মার্কিন রুটে বিমান চালাতে পারবে না। তবে ভারত মার্কিন সংস্থাগুলিকে বিমান পরিবহণের অনুমতি দিলে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখা হবে বলে জানানো হয়েছে।
তবে মার্কিন সরকারের এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার অসামরিক বিমান পরিবহণ দফতরের জানানো হয়, আমেরিকার অনুরোধ পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের কী ভাবে ফেরানো যায়, তা নিয়েও আলোচনা চলছে। এ নিয়ে আমেরিকা, চিন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ব্রিটেন প্রত্যেকের সঙ্গেই আলাদা আলাদা ভাবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হবে বলেও অসামরিক বিমান পরিবহণ দফতরের তরফে জানানো হয়।