রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর উর্জিত পটেল। ছবি- পিটিআই।
ছড়িয়ে রয়েছে বিপুল সম্পদ। কিন্তু তা কাজ করছে না। ফলে, তা অচল হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কগুলির এই বিপুল ‘অচল সম্পদ (নন-পারফর্মিং অ্যাসেটস্)’ তৈরি হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ও দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্তাদেরই দায়ী করলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর উর্জিত পটেল। বললেন, ‘‘ভারতে যত ব্যাঙ্ক প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে, তার ৯০ শতাংশই হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কগুলিতে। তার ফলে বাড়ছে অচল সম্পদের পরিমাণ। এই পরিসংখ্যানই সরকারি গাফিলতির দিকে আঙুল তুলছে।’’
কোনও ব্যাঙ্কের দেওয়া ঋণের সুদ যদি কেউ দীর্ঘ দিন ধরে না দেন বা ঋণের মূল পরিমাণ (প্রিন্সিপাল অ্যামাউন্ট) পরিশোধ না করেন, তখন ব্যাঙ্কের সেই সম্পদ (অ্যাসেটস্) অচল বা ‘নন-পারফর্মিং’ হয়ে পড়ে। কারণ, সেই সুদের টাকা বা ফেরত পাওয়া ঋণের মূল পরিমাণের টাকা ব্যাঙ্ক নানা ভাবে বাজারে খাটায়। অন্য কাউকে ধার দেয়। তাই যিনি ঋণ নিয়েছেন তিনি দীর্ঘ দিন সুদ না দিলে বা প্রিন্সিপাল অ্যামাউন্ট পরিশোধ না করলে ব্যাঙ্ক আর সেই টাকাটা বাজারে কাটাতে পারে না। ফলে, ব্যাঙ্কের সেই সম্পদ তখন অচল হয়ে পড়ে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নরের মতে, ‘‘এটা যে অন্য দেশে হয় না, তা নয়। তবে ভারত এ ব্যাপারে অনেকের চেয়ে একটু বেশিই এগিয়ে রয়েছে।’’
গত ডিসেম্বরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের পদে ইস্তফা দেওয়ার পর এই প্রথম কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাঙ্ক পরিচালন নীতি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করলেন উর্জিত। গত ৩ এবং ৪ জুন, ভারতের অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বার্ষিক সম্মেলনে। উর্জিতের সেই বক্তব্যের নির্যাস বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে।
আরও পড়ুন- অভ্যাস বদলের তত্ত্বেই নীতি তৈরির মন্ত্র
আরও পড়ুন- মুখ খুললেন উর্জিত
উর্জিত বলেছেন, ‘‘ব্যাঙ্ক প্রতারণার ঘটনা ভারতে উত্তরোত্তর বাড়ার কারণ দু’টি। এক, অভ্যন্তরীণ অডিট ঠিক ভাবে হয় না। আর দুই, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কগুলির পরিচালন ব্যবস্থার গলদ।
দেশের ব্যাঙ্কগুলির এই অচল সম্পদের পরিমাণ কত? উর্জিত হিসাব কষে দেখিয়েছেন, ১০ লক্ষ কোটি টাকা। উর্জিতের কথায়, ‘‘এই বিপুল পরিমাণ টাকা অচল হয়ে পড়েছে বলে ব্যাঙ্কগুলি ঋণ দিতে গিয়ে অসুবিধায় পড়ছে। বাধ্য হচ্ছে অন্য ঋণের জন্য সুদের পরিমাণ বাড়াতে। তাতে তেমন কাজ না হওয়ায় ব্যাঙ্কগুলির কাজকর্মকে স্বাভাবিক রাখতে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কগুলিকে আরও টাকা দিতে হচ্ছে সরকারকে। আর এই সবের জেরে দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির গতি ব্যাহত হচ্ছে।’’