(বাঁ দিকে) মধুমিতা শুক্ল এবং উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মন্ত্রী অমরমণি ত্রিপাঠী। ফাইল চিত্র।
১৬ বছর পর জেল থেকে মুক্তি পেতে চলেছেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মন্ত্রী অমরমণি ত্রিপাঠী এবং তাঁর স্ত্রী মধুমণি ত্রিপাঠী। রাজ্যপাল আনন্দিবেন পটেলের অনুমতিতে রাজ্যের কারা দফতর প্রাক্তন মন্ত্রীর মুক্তির নির্দেশিকা দিয়েছে। অমরমণি এবং তাঁর স্ত্রী বর্তমানে গোরক্ষপুর জেলে বন্দি। ত্রিপাঠী দম্পতির মুক্তির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন মধুমিতার বোন নিধি। শুক্রবার সেই মামলার শুনানি ছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টও প্রাক্তন মন্ত্রী এবং তাঁর স্ত্রীর মুক্তিতে কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। ফলে ত্রিপাঠী দম্পতির মুক্তিতে আর কোনও বাধা রইল না।
কবি মধুমিতা শুক্ল হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের এই প্রাক্তন মন্ত্রী এবং তাঁর স্ত্রী। ২০০৭ সালে দেহরাদূনের বিশেষ আদালত ত্রিপাঠী দম্পতিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। চার বারের বিধায়ক এবং সমাজবাদী পার্টির প্রাক্তন মন্ত্রী অমরমণি এবং তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ২০০৩ সালে কবি মধুমিতাকে খুনের অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল গোটা দেশ।
অমরমণির মুক্তির খবরে অত্যন্ত হতাশ হয়েছেন মধুমিতার বোন নিধি। এক সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, “অমরমণির মুক্তির সিদ্ধান্তে অত্যন্ত স্তম্ভিত। উত্তরপ্রদেশ এবং রাজ্যপালকে গত ১৫ দিন ধরে চিঠি লিখে জানিয়েছি যে, সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা সংক্রান্ত একটি আবেদন জমা করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট সেই আবেদন গ্রহণও করেছে। ২৫ অগস্ট সেই মামলার শুনানি হবে। তার পরেও কী ভাবে এবং কিসের ভিত্তিতে এই নির্দেশ দেওয়া হল, আশ্চর্য হচ্ছি।” নিধি আরও বলেন, “আমি নিশ্চিত, এই নির্দেশিকায় সই করাতে রাজ্যপালকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। আমার আবেদন, যত ক্ষণ না সুপ্রিম কোর্টের রায় বেরোচ্ছে, তত ক্ষণ পর্যন্ত অমরমণি এবং মধুমিতার মুক্তির নির্দেশ স্থগিত রাখা হোক।”
কবি হিসাবেই আত্মপরিচয় ঘটেছিল মধুমিতা শুক্লর। খুব অল্প বয়সেই ‘কবি সম্মেলন’-এর অন্যতম নক্ষত্র হয়ে উঠেছিলেন তিনি। উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরির বাসিন্দা মধুমিতা মূলত তাঁর কবিতার মাধ্যমে বড় বড় রাজনৈতিক নেতাদের আক্রমণ করতেন। ফলে ১৬-১৭ বছর বয়সেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি। লখনউয়ের পেপার মিল কলোনিতে একটি দু’কামরার ফ্ল্যাটে থাকতেন মধুমিতা। রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন, মধুমিতার সঙ্গে অমরমণির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মধুমিতা তাঁর ‘প্রেমিকা’ ছিলেন, এমনও দাবি ঘোরাফেরা করে উত্তরপ্রদেশের রাজনীতির অন্দরে। ২০০৩ সালের ৯ মে মধুমিতাকে গুলি করে খুন করা হয়। পরে তদন্তে উঠে আসে, মধুমিতার যখন মৃত্যু হয়েছিল, সেই সময় সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, যে ভ্রূণ মধুমিতার গর্ভ থেকে পাওয়া গিয়েছে, অমরমণি ত্রিপাঠীর ডিএনএ-র সঙ্গে সেটির মিল রয়েছে। যদিও উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মন্ত্রী দাবি করেছিলেন, মধুমিতা শুক্লের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক ছিল না। ডিএনএ-র রিপোর্টও ভুল। তবে শেষরক্ষা হয়নি। ২০০৭ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় দেহরাদূন আদালত।