চাঁদের মাটিতে চন্দ্রযান-৩। — প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
চন্দ্রযান-৩ নেমেছে চাঁদের অন্ধকার দিকে। সেই অভিযানের সাফল্যে উজ্জ্বল বাংলার বিজ্ঞানমহল, দ্বিতীয় দিনেও। বৃহস্পতিবারও খোঁজ মিলল এ রাজ্যের বেশ কয়েক জন ভূমিপুত্রের, যাঁরা এই চন্দ্রাভিযানে জড়িয়ে।
বুধ-সন্ধ্যায় চন্দ্রযান-৩-এর সফল অবতরণের শেষে বেঙ্গালুরুতে ইসরোর অপারেশন সেন্টারে দেখা গিয়েছে বীরভূমের পাইকরের প্রত্যন্ত গ্রাম, বিলাসপুরের মোশারফ হোসেনকেও। ইসরোর এই সিনিয়র বিজ্ঞানী বৃহস্পতিবার ফোনে জানান, তিনি রম্ভা-এলপি পে-লোডের সায়েন্স ডেটা পাইপলাইনের প্রজেক্ট ডিরেক্টর। ডেটা পাইপলাইন চাঁদ থেকে ভারতে তথ্য পাঠানোয় সহায়তা করবে। রম্ভা-এলপি চন্দ্রপৃষ্ঠের প্লাজ়মার ঘনত্ব এবং ইলেকট্রন তাপমাত্রা পরিমাপ করছে। তাঁর কথায়, ‘‘এটা বিশ্বের কাছে ভারতের জয়।’’ এমনই গ্রামের ছেলে মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জের মহব্বতপুরের তোসিকুল ওয়ারা ইসরোর একটি বিভাগের প্রধান। এই জেলারই জিয়াগঞ্জের প্রিয়াঙ্কা দাস সিংহ চৌধুরীর মা লোপামুদ্রা জানান, তাঁর মেয়ে তিনটি সংস্থায় ভাল চাকরির প্রস্তাব পেয়ে ছেড়ে দিয়ে ইসরোয় যোগ দিয়েছিলেন, তা-ও ১৫ বছর আগে। একটি বিভাগের প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রিয়াঙ্কা বলেন, “চন্দ্রযানের সাফল্য জীবনের সব থেকে বড় পাওনা।”
চন্দ্রযান-৩-এর নেভিগেশন বা ক্যামেরা সিস্টেমের মুখ্য ভূমিকায় থাকা হুগলির উত্তরপাড়ার বি কে স্ট্রিটের জয়ন্ত লাহা ১৪ বছর ধরে ইসরোয় কর্মরত। চন্দ্রযানের সাফল্যে উচ্ছ্বাসে ভাসছে ওই পরিবার। যেমন উচ্ছ্বাস পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জের ছোটেলাল মারোয়াড়ি লেনের পরিবহণ ব্যবসায়ী শঙ্কর মিত্রের বাড়িতেও। ওই বাড়ির ছেলে সানি মিত্র জানান, তিনি চন্দ্রযান ৩-এর বিকাশ ইঞ্জিন (যার মাধ্যমে বিক্রমকে পাঠানো হল) তৈরির সিস্টেম ডিজ়াইন দলের সদস্য। তাঁর কাজ ছিল বিকাশ ইঞ্জিনের নকশা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয় সংক্রান্ত খুঁটিনাটি হিসাব তৈরি করা।
চন্দ্রযান-৩-এর সঙ্গে জড়িয়ে জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বেশ কিছু প্রাক্তনী। নিরঞ্জন কুমার ছিলেন ‘লঞ্চ ভেহিকল ইউনিট’-এর অন্যতম দায়িত্বে। সুজয় দলুই উৎক্ষেপণের দলে। অমরনাথ নন্দী, সৌমিক সরখেল, মুকুন্দকুমার ঠাকুর, বিকাশকুমার শর্মা বা চন্দ্রযানের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের নানা সফ্টওয়্যার অপারেশন ইউনিটে থাকা কৌশিক নাগেরাও এই সাফল্যের শরিক। জলপাইগুড়ি কলেজের অধ্যক্ষ অমিতাভ রায় বলেন, “আমাদের প্রাক্তনীরা চন্দ্রযান সফল করার নেপথ্যে রয়েছেন, এটা ভেবেই গর্বে বুক ভরে যাচ্ছে।’’ শিবপুর আইআইইএসটি-র (সাবেক বি ই কলেজ) চার প্রাক্তনী দেবজ্যোতি ধর, সুমিতেশ সরকার, রিন্টু নাথ ও জয়ন্ত লাহাও এই সাফল্যের সঙ্গে জড়িয়ে।
চাঁদ থেকে রোভার ‘প্রজ্ঞান’-এর পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করবেন যাঁরা, সেই দলে পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের অভিষেক সাহা আছেন। বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চাতরা রামাই পণ্ডিত কলেজে ভূগোলের বিভাগীয় প্রধানের পাশাপাশি তিনি ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিং’, ইসরো নোডাল সেন্টারের ইন-চার্জ পদেও রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দলের মূল কাজ হবে চাঁদের মাটি ও ভূস্তর সম্পর্কে আসা তথ্য বিশ্লেষণ করা।’’ চন্দ্রযান ৩-এর দলে রয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার আগরপাড়ার রাজীব সাহাও।