লখনউয়ের এক কোভিড হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। রবিবার। পিটিআই
জাঠ বলয় ও ব্রজভূমি— পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের এই দুই ময়দানেই বিজেপির আসল পরীক্ষা বলে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছেন।
বিজেপির শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, সমাজবাদী পার্টি(এসপি)-র সঙ্গে রাষ্ট্রীয় লোক দল (আরএলডি)-র আসন সমঝোতার পরে যাদব, মুসলিম ও জাঠ ভোট যদি বিরোধীদের ঝুলিতে গিয়ে পড়ে, তা হলে বিষয়টি বিজেপির জন্য চিন্তার কারণ হয়ে উঠবে। ফলে উত্তরপ্রদেশের ভোটের গতিপ্রকৃতি কী হবে, তার দিশা এই দুই এলাকার ভোটই ঠিক করে দেবে। এমনিতেই, কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কৃষকেরাই মূলত অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের মহাপঞ্চায়েত থেকেই পুরনো বিবাদ ভুলে জাঠ, মুসলিমরা ফের কাছাকাছি এসেছে। এর সঙ্গে ব্রজভূমিতে এমনিতেই যাদবদের সংখ্যা বেশি। এই রাজনৈতিক অঙ্ক বিজেপিকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলবে। দল যদি ২০১৭-র মতো এ বারও এই সব এলাকার অধিকাংশ আসন জিততে পারে, তা হলে ফের লখনউয়ের দৌড়ে বাজিমাত করা যাবে বলে বিজেপি নেতারা মনে করছেন।
আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে উত্তরপ্রদেশে সাত দফার ভোটগ্রহণ। প্রথম দুই দফায় পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জাঠ বলয় ও ব্রজভূমিতে ভোটগ্রহণ। ১০ ফেব্রুয়ারি আগরা, মথুরা, মিরাট, মুজফফরনগর, গাজ়িয়াবাদ, বুলন্দশহর, আলিগড়ের মতো ১০টি জেলায় ভোটগ্রহণ। ১৪ ফেব্রুয়ারি মোরাদাবাদ, সাহরাণপুর, বিজনৌর, বরেলীর মতো ন’টি জেলায় ভোট। শনিবার থেকে বিজেপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণা শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনই দলের আসন নিয়ে কোনওরকম অনুমানে যেতে চাইছেন না বিজেপি নেতারা। দলের এক শীর্ষনেতার বক্তব্য, প্রথম দুই দফার ভোট দেখেই পূর্বাভাস সম্ভব হবে। এসপি-আরএলডি-র জোট তৃণমূল স্তরে কতখানি প্রভাব ফেলে আর আসাদুদ্দিন ওয়াইসি কতখানি মুসলিম ভোট টানতে পারেন, বিজেপি নেতারা আগে তা মেপে নিতে চাইছেন। তাঁদের দাবি, জাতপাতের অঙ্ক প্রভাব ফেললেও কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, তার জেরে ক্ষোভ উত্তরপ্রদেশের ভোটে তেমন প্রভাব ফেলবে না। কারণ কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী ও রাজ্যে যোগী আদিত্যনাথ— দুই সরকারই চাষিদের ঘরে জল, বিদ্যুৎ, সার ও অ্যাকাউন্টে নগদ টাকা পৌঁছে দিয়েছে।
গত কয়েকদিনে একের পর এক ওবিসি নেতার বিজেপি ছেড়ে এসপি-তে যোগ দেওয়ায় পদ্মশিবিরের নেতৃত্বের চিন্তা বেড়েছে। সংগঠনে এর ফলে প্রভাব না পড়লেও ভুল বার্তা যাচ্ছে বলে তাঁদের আশঙ্কা। দলের এক শীর্ষনেতার ব্যাখ্যা, যাঁরা বিজেপি ছেড়েছেন, তাঁদের অনেকেই অন্য দল থেকে আসা নেতা। প্রতিটি কেন্দ্রে বিজেপিতে তাঁদের বিকল্প নেতা রয়েছেন। কিন্তু যাদব ছাড়া অন্যান্য ওবিসি-দের বিজেপিতে টেনেই দল উত্তরপ্রদেশে সাফল্য পেয়েছিল। এখন স্বামীপ্রসাদ মৌর্য, দারা সিংহ চৌহানরা দল ছাড়ায় ধারণা তৈরি হচ্ছে, ওবিসি ভোটও বিজেপি থেকে সরে যাচ্ছে। সেই ধারণা বদলাতেই অসংরক্ষিত আসনেও বিজেপিকে দলিত, ওবিসি নেতাদের প্রার্থী করতে হয়েছে। দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “বাস্তব অবশ্য তা নয়। কেশবপ্রসাদ মৌর্যর মতো নেতাই বিজেপিতে রয়েছেন। অন্য কোনও দল কি মৌর্য সমাজের কোনও নেতাকে উপ-মুখ্যমন্ত্রী করেছে?”
পশ্চিমবঙ্গের মতো উত্তরপ্রদেশেও বিধানসভা নির্বাচন দিনের শেষে দ্বিমুখী লড়াই হয়ে উঠবে বলে বিজেপি নেতারা মনে করছেন। সেই লড়াই হবে বিজেপি বনাম এসপি। দলের শীর্ষ সূত্রের মতে, উত্তরপ্রদেশের মানুষ বরাবরই স্পষ্ট রায় দিতে অভ্যস্ত। এ বারও ভোটের ফলাফল স্পষ্টই হবে। পশ্চিমবঙ্গে দলের একাধিক সাংসদকে বিধানসভা ভোটেও বিজেপি প্রার্থী করেছিল। উত্তরপ্রদেশে সেই পরীক্ষানিরীক্ষার মধ্যে যেতে চাইছেন না বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। একইসঙ্গে বিজেপির নীতি হল, একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে প্রার্থী করা হবে না।
শনিবার প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে বিজেপি যোগী আদিত্যনাথকে তাঁর ঘরের মাঠ গোরক্ষপুর থেকেই প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সূত্রের দাবি, যোগীকে তাঁর নিজের পছন্দমতো কেন্দ্র বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল। রাজনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন উঠেছে, যোগী অযোধ্যা থেকে জিতে আসলে তাঁর রাজনৈতিক উচ্চতা আরও বেড়ে যেত বলেই কি তাঁকে গোরক্ষপুরে ঠেলে দেওয়া হল? বিজেপি সূত্রের দাবি, অযোধ্যা বিবেচনার মধ্যে থাকলেও, সেখানকার যাদব ও মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে ওই আসন নিয়ে দল নিশ্চিত নয়। সেই কারণেই গোরক্ষপুর বেছে নেওয়া হয়েছে। গোরক্ষপুর তাঁর নিজের এলাকা হওয়ায় যোগীকে বিশেষ মাথা ঘামাতে হবে না।
আপাতত ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত অতিমারির জেরে জনসভায় নির্বাচন কমিশনের বিধিনিষেধ থাকায় নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকেই উত্তরপ্রদেশের প্রচারে নামবেন। মোদী অবশ্য তার আগে বারাণসীতে ভার্চুয়াল সভা করবেন। শাহ রাজ্যের ৪০৩টি আসনেই প্রচারে ম্যারাথন যাত্রা করবেন। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, কোভিডের জেরে জনসভা বন্ধ থাকলেও তাঁদের কোনও সমস্যা হচ্ছে না। কারণ প্রতিটি বুথেই বিজেপির কর্মী, সংগঠন রয়েছে।