দিল্লির মেট্রোর একটি প্রকল্পের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী যোগীকে পাশে নিয়ে মোদীর বলেছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীদের নয়ডা আসা উচিত নয়, এই কুসংস্কারের গোড়ায় জল ঢাললেন আদিত্যনাথ। এতদিন কোনও মুখ্যমন্ত্রী আসেননি, কারণ তাঁরা নিজের প্রাণ নিয়ে বেশি চিন্তিত ছিলেন। যোগী মানুষকে বেশি চিন্তিত।’’
ফাইল ছবি।
ঔপচারিকতা শেষ। ১ লক্ষ ২ হাজার ভোটে গোরক্ষপুর শহর আসনে জিতলেন যোগী আদিত্যনাথ। একই সঙ্গে পেরিয়ে গেলেন বহু বছর ধরে থেকে-যাওয়া ‘গাঁট’। যা উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে ‘নয়ডা-গাঁট’ বলে পরিচিত। সেটি হল— উত্তরপ্রদেশের যে মুখ্যমন্ত্রী নয়ডা সফরে গিয়েছেন, তিনিই হেরেছেন।
নিজের পাঁচ বছরের শাসনকালে একাধিক বার নয়ডা গিয়েছেন যোগী। যিনি উত্তরপ্রদেশের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথম পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করে দ্বিতীয় বার ফিরলেন মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে।
১৯৮৮ সালে উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বীরবাহাদুর সিংহ গিয়েছিলেন ওখলা শিল্পাঞ্চল পরিদর্শনে। জেলা- গৌতম বুদ্ধ নগর। এলাকার নাম নয়ডা। তার ক’দিনের মধ্যেই ইস্তফা দিতে হল বীরবাহাদুরকে। সেই শুরু উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে নয়ডা-আতঙ্কের।
বীরবাহাদুরের জায়গায় মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন নারায়ণ দত্ত তিওয়ারি। তিনিও নয়ডা গিয়েছিলেন। তার পরে হেরেছিলেন ১৯৮৯-এর বিধানসভা ভোটে। সেই থেকে এ যাবত যত জন মুখ্যমন্ত্রী লখনউয়ের তখতে বসেছেন, ভুলেও নয়ডামুখো হননি। আর যাঁরা নয়ডা গিয়েছেন, সমাপতন হোক বা কাকতালীয়, তাঁদেরই সরতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে। হয় তাঁরা ভোটে হেরেছেন বা ইস্তফা দিতে হয়েছে মাঝপথে।
পরবর্তীকালে সমাজবাদী পার্টির মুলায়ম সিংহ যাদব, বিজেপি-র কল্যাণ সিংহ এবং রাজনাথ সিংহ নয়ডার ধারপাশ মাড়াননি। আতঙ্ক এমনই যে, দিল্লি-নয়ডা-দিল্লি উড়ালপুলের উদ্ধোধন করতে উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী রাজনাথ নয়ডায় পা পর্যন্ত রাখেননি। ফিতে কেটেছিলেন দিল্লির সীমানার ভিতর থেকে। নয়়ডা থেকে দূরে।
সাম্প্রতিক কালেও সেই ধারনার কোনও বদল হয়নি। ২০১৩-য় মুলায়মের ছেলে অখিলেশ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্কের অনুষ্ঠানে গরহাজির ছিলেন। ওই অনুষ্ঠান হয়েছিল নয়ডায়। ২০১২-য় মায়াবতীকে হারিয়ে লখনউয়ের তখ্ত দখল করেন অখিলেশ। ঘটনাচক্রে, দলিত স্মারক স্থলের উদ্বোধনে ২০১১-য় সেই নয়ডাতেই পা পড়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর।
কিন্তু যোগী আদিত্যনাথ সেই নয়ডা-আতঙ্ককেও হেলায় উড়িয়ে দিয়েছেন। ২০১৭-য় প্রথম বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরই তিনি গিয়েছিলেন দিল্লি মেট্রোর একটি বিশেষ লাইনের উদ্বোধনে। সেই অনুষ্ঠানে যোগী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একই মঞ্চে। সাংবাদিকরা মোদীকে প্রশ্ন করেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী যোগী নয়ডায় এলেন। তাঁর কি হারের ভয় নেই? মুচকি হেসে মোদীর জবাব ছিল, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীদের নয়ডা আসা উচিত নয়, এই কুসংস্কারের গোড়ায় জল ঢাললেন আদিত্যনাথ। এতদিন কোনও মুখ্যমন্ত্রী আসেননি। কারণ, তাঁরা নিজেকে নিয়ে বেশি চিন্তিত ছিলেন। যোগী মানুষকে বেশি ভাবেন। নিজেকে নিয়ে নয়।’’