শিবরাজ সিংহ চৌহান। —ফাইল চিত্র।
ভোটের আগে মধ্যপ্রদেশে গুরুত্ব কমল মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের। পরিবর্তে ওই রাজ্যে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে নিযুক্ত করা হল কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমরকে। সূত্রের মতে, মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া থাকায় ওই রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখে নির্বাচনে এগোনোর পরিকল্পনা নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
সপ্তাহখানেক আগে ওই রাজ্যে নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব। সহকারী হিসেবে তাঁকে সাহায্য করবেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। ভূপেন্দ্র নিজে ওবিসি আর অশ্বিনী হলেন ব্রাহ্মণ সমাজের নেতা। জাতপাতের সমীকরণ মেনে তাই এ বার নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হল উচ্চবর্ণের রাজপুত নেতা তোমরকে। শিবরাজ নিজেও ওবিসি সমাজের। তাই ওই রাজ্যে ওবিসি-রাজপুত ও ব্রাহ্মণ এই তিন সমাজের নেতাকে সামনে রেখে ভোট কুড়োনোর লক্ষ্যে নামছেন নরেন্দ্র মোদীরা।
বিজেপি শিবিরের বক্তব্য, নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ তোমরকে মধ্যপ্রদেশের দায়িত্ব দেওয়ার আরও একটি কারণ হল তাঁর সঙ্গে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার সুসম্পর্ক। গোয়ালিয়র-চম্বল এলাকার নেতা তোমরের জন্যই বছর তিনেক আগে কংগ্রেস ছেড়ে কুড়ি জন বিধায়ক নিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন জ্যোতিরাদিত্য। যার ফলে ওই রাজ্যে কমল নাথের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার পড়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন শিবরাজ সিংহ।
কিন্তু ঘটনা হল, গত তিন বছরে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়ার প্রকোপ উত্তরোত্তর বেড়েছে। যার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, চলতি বছরে একাধিক পুরনিগমের নির্বাচনে। এর আগের পুরনিগম নির্বাচনে বিজেপি ১৬টির মধ্যে সব ক’টিতেই জিতেছিল। সেখানে এ যাত্রায় ৯টি পুরনিগম জিততে পেরেছে দল। ৭টি পুরনিগম বিজেপির হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে বিরোধীরা। তার মধ্যে ৫টিতে জিতেছে কংগ্রেস। গোয়ালিয়র, জব্বলপুর, মোরেনার মতো কেন্দ্র, যা জ্যোতিরাদিত্য, তোমরের মতো হেভিওয়েট নেতাদের কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত, সেখানেও হেরে গিয়েছে বিজেপি। ফলে নিজের এলাকায় হৃত জমি উদ্ধারের লক্ষ্য নিয়েও তোমরকে মধ্যপ্রদেশে পাঠানো হয়েছে বলে জানাচ্ছেন দলীয় নেতৃত্ব।
তবে তোমরকে এ ভাবে আহ্বায়ক নিযুক্ত করা মানে মধ্যপ্রদেশের নির্বাচনে শিবরাজের ডানা ছাঁটার বার্তা বলেও ঘরোয়া ভাবে মেনে নিচ্ছেন দলীয় নেতৃত্ব। আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই থেকে টিকিট বণ্টন, সব কিছুরই দায়িত্বে যে তোমর থাকবেন, তা কার্যত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে আজকের সিদ্ধান্তে। বিজেপি নেতারা ঘরোয়া ভাবে বলছেন, উত্তরপ্রদেশ বা অসমের নির্বাচনে যে ভাবে যোগী আদিত্যনাথ বা হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে তুলে ধরে প্রচার চালানো হয়েছিল, মধ্যপ্রদেশে তা হওয়ার সম্ভাবনা যে কম, সেটা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গেল। কারণ প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার আবহে শিবরাজকে মুখ্যমন্ত্রী মুখ করা হলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা। পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখকে সামনে রেখেই ভোটে নামার পক্ষপাতী দল।