—ফাইল চিত্র।
নেহাত নামের প্রথম অংশটুকুর মিল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী অশ্বিনী চৌবে ‘সেই সুযোগে’ বলে বসলেন, নরেন্দ্রনাথ দত্ত (স্বামী বিবেকানন্দ) এখন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর শরীরে!
রবিবার বিহারের জন্য এক গুচ্ছ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের উদ্বোধনী ভিডিয়ো-অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে চৌবে বলেন, “দেশের সমস্ত গরিবের মন জুড়ে আপনি বসে আছেন।… প্রত্যেক বিহারবাসীর এটা গর্ব যে, অটলবিহারীর পরে আর এক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রবিহারী দেশের উন্নয়নে দায়বদ্ধ। আমাদের গর্ব, নরেন্দ্র দত্ত নরেন্দ্র মোদীর শরীরে প্রবেশ করে গিয়েছেন। ভারত একবিংশ শতাব্দীর অগ্রণী দেশ হয়ে ওঠার চৌকাঠে।”
প্রধানমন্ত্রীর নাম নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী থেকে ‘বদলে’ নরেন্দ্র বিহারী করে দেওয়ায় বিস্তর মজা পেয়েছেন অনেকে। রসিকতার ছলে তাঁদের প্রশ্ন, স্রেফ প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে মেলাতে আর ভোটমুখী রাজ্যের সঙ্গে একাত্মতা উস্কে দিতে খোদ প্রধানমন্ত্রীর নামই পাল্টে দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী? কিন্তু তাকেও সম্ভবত ছাপিয়ে গিয়েছে মোদীর শরীরে স্বামী বিবেকানন্দের ‘ঢুকে পড়া’! দৃশ্যত অস্বস্তিতে দেখিয়েছে প্রধানমন্ত্রীকেও।
বিরোধীদের একাংশ বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর দাবি অনুযায়ী, এক সময়ে সন্ন্যাসী হতে গিয়েও রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজের পরামর্শেই দেশের কাজে জীবন সমর্পণ করেছেন তিনি। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় থেকেই অকপটে বলেছেন স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শের প্রতি তাঁর নিষ্ঠার কথা। কিন্তু ‘সেই সুযোগে’ মোদীর জন্যও সংসারত্যাগী, সৎ, কর্মযোগীর ভাবমূর্তি তৈরি করেছে তাঁর দল। কখনও ছোটবেলায় স্নান করতে গিয়ে কুমিরছানা ধরে নিয়েও তাকে না-মারার কথা শোনা গিয়েছে, তো কখনও শান দেওয়া হয়েছে দিনে আঠারো ঘণ্টা নিরলস
পরিশ্রমের ভাবমূর্তিতে। মাঝেমধ্যে রেখে-ঢেকে হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘দুই নরেনের’ তত্ত্বও। কিন্তু তা বলে সরকারি অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর মুখে এমন মোদী-স্তুতি নতুন ‘রেকর্ড’ কি না, দিনভর চর্চা চলেছে তা ঘিরে।
ক্ষমতাবানদের তুমুল প্রশংসা, মহিমাকীর্তন অবশ্য একেবারেই নতুন নয়। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পরে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর সঙ্গে দেবী দুর্গার তুলনা টানা হয়েছে। কখনও বলা হয়েছে ‘ইন্দিরা ইজ় ইন্ডিয়া’। রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অনুপ্রেরণার’ উল্লেখ না-করে চট করে নতুন প্রকল্প ঘোষণা করেন না কেউ। আবার ‘ম্যাডাম’ সনিয়া গাঁধীর নির্দেশ ছাড়া পাতা নড়া মুশকিল কংগ্রেসে। এডিএমকের তাবড় নেতাদের বুক-পকেটে তামিলনাড়ুর প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম জয়ললিতার ছবি কিংবা তিনি বেঁচে থাকতে তাঁর হেলিকপ্টার আসার অপেক্ষায় জোড় হাতে আকাশমুখী দলীয় নেতাদের দাঁড়িয়ে থাকার স্মৃতি এখনও টাটকা। ভারতীয় রাজনীতিতে এমন উদাহরণ অজস্র। তাই সেই অর্থে নেতা বা নেত্রী স্তুতি বরং রুটিনই। কিন্তু তা মেনেও এক বিরোধী নেতার কটাক্ষ, “তা বলে একেবারে শরীরে ঢুকে পড়া!”