নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বৃহস্পতিবার।
এক দিকে ব্যাঙ্কের খাতায় বিপুল পরিমাণ অনাদায়ি ঋণের বোঝা। অন্য দিকে কর্পোরেট সংস্থার খাতাতেও শোধ করতে না পারা দেনার চাপ।
অর্থনীতির ‘ব্যালান্স শিট’-এর এই জোড়া অসুখ সারাতে ব্যাড ব্যাঙ্ক তৈরি করা হবে বলে বাজেটেই ঘোষণা হয়েছিল। এ বার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সেই ব্যাড ব্যাঙ্ক বা ন্যাশনাল অ্যাসেট রিকনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (এনএআরসিএল) তৈরির সিদ্ধান্তে সিলমোহর বসাল।
কী এই ব্যাড ব্যাঙ্ক? এই সংস্থা ব্যাঙ্কের খাতায় থাকা সমস্ত অনাদায়ি ঋণ বা অনুৎপাদক সম্পদের কাগজপত্র হাতে তুলে নেবে। ফলে ব্যাঙ্কের খাতা থেকে অনাদায়ি ঋণ মুছে যাবে। পুরনো ঋণ আদায় না হওয়ার ফলে ব্যাঙ্কের পক্ষে নতুন ঋণ দেওয়া কঠিন হচ্ছিল। এখন আর সেই মাথাব্যথা থাকবে না। ১০০ টাকার অনাদায়ি ঋণের কাগজপত্র হাতে নিলে এই সংস্থা প্রথমেই ব্যাঙ্ককে ১৫ টাকা মিটিয়ে দেবে। বাকি ৮৫ টাকার জন্য গ্যারান্টি হিসেবে রসিদ দেওয়া থাকবে। এ বার কর্পোরেট সংস্থার থেকে অনাদায়ি ঋণ আদায়ের চেষ্টা হবে। একান্তই সম্ভব না হলে বন্ধক রাখা সম্পত্তি নিলামে তুলে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা হবে। ৮৫ টাকার মধ্যে যতখানি অর্থ উদ্ধার করা যাবে না, তার জন্য সরকার দায়বদ্ধ থাকবে।
আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এই গ্যারান্টি বাবদ ৩০,৬০০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে। আপাতত রাজকোষ থেকে কোনও টাকা খরচ হচ্ছে না। পাঁচ বছর সময় দেওয়া হবে। তার মধ্যে অনাদায়ি ঋণের পুরো অর্থ উদ্ধার না হলে এই গ্যারান্টির টাকা সরকারকে দিতে হবে।
কোভিড ও লকডাউনের জেরে অর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছে। অনেক সংস্থারই ব্যবসা মার খেয়েছে। ফলে আগামী দিনে ব্যাঙ্কের অনাদায়ি ঋণের বোঝা ফের মাথাচাড়া দিতে পারে বলে আশঙ্কা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমান, ২০২১-এর মার্চে মোট ঋণের প্রায় ৭.৫% অনাদায়ি ছিল। আগামী মার্চে দাঁড়াতে পারে ১০%। অথচ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ব্যাঙ্কঋণই ভরসা মোদী সরকারের। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণও চায় তারা। এ সবের জন্য ব্যাঙ্কের স্বাস্থ্য ফেরানো দরকার। তাই এই পদক্ষেপ জরুরি।
নির্মলা জানান, ‘ব্যাড ব্যাঙ্ক’ ২ লক্ষ কোটি টাকার অনুৎপাদক সম্পদের দায়িত্ব নেবে। প্রথমে ৯০ হাজার কোটি টাকা অনাদায়ি ঋণের সমস্যা মেটাবে। যেখানে ওই ঋণ ৫০০ কোটির বেশি, সেগুলিই চিহ্নিত হয়েছে। এই সংস্থার ৫১% মালিকানা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির। প্রাথমিক ভাবে ব্যাঙ্ককে ১৫% নগদ মেটাতে প্রায় ৬০০০ কোটি টাকা লাগবে। নতুন সংস্থা তৈরি সারা। শুধু রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের লাইসেন্সের অপেক্ষা। যাবতীয় অনুৎপাদক সম্পদের খাতে আটকে থাকা টাকা উদ্ধারে ‘ইন্ডিয়া ডেট রিজ়লিউশন কোম্পানি’ নামের আর একটি সংস্থাও তৈরি হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রকের বক্তব্য, এ বার ব্যাঙ্ক ঋণ বণ্টনে নজর দিতে পারবে। মন্ত্রকের ব্যাঙ্ক পরিষেবা দফতরের সচিব দেবাশিস পণ্ডার দাবি, ‘‘অনাদায়ি ঋণের সমস্যা দ্রুত মেটাতেই ৫ বছরের সরকারি গ্যারান্টি আছে। নতুন সংস্থাকে গ্যারান্টি ফি দিতে হবে। যা প্রতি বছর বাড়বে। ঢিলেমি এড়াতেই এই ব্যবস্থা।’’