রাজ্যসভায় অর্থমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই।
বেকারত্বের চড়া হার, বেসামাল অর্থনীতি ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে সংসদে দাঁড়িয়ে জওহরলাল নেহরুকে নিশানা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ বার বাজেট নিয়ে চর্চায় রাহুল গান্ধীকে নিশানা করলেন তাঁর অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও!
শুক্রবার রাজ্যসভায় বাজেট-বিতর্কে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে আজ অর্থনীতির হাল, বেকারত্ব, দারিদ্র, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে জবাব দেওয়ার কথা ছিল অর্থমন্ত্রীর। কিন্তু নির্মলা দারিদ্র নিয়ে জবাব দিতে গিয়েও রাহুল গান্ধীর নাম না করে তোপ দাগলেন তাঁর দিকে। অর্থনীতির বেহাল দশার তুলনায় কংগ্রেসের বেহাল দশা নিয়ে বেশি সময় ব্যয় করলেন। রাহুলের আমলে কংগ্রেস নেতারা দল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বলে একে কংগ্রেসের ‘রাহুকাল’ বলেও কটাক্ষ করলেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মনমোহন সিংহের আমেরিকা সফরের সময়ে রাহুল ইউপিএ সরকারের পাশ করা বিল ছিড়ে ফেলেছিলেন বলেও তাঁকে কটাক্ষ করলেন। মনমোহন সরকার ‘রিমোট কন্ট্রোলে’ চলত বলে অভিযোগ তুলে বললেন, ‘‘সিদ্ধান্ত হত ১০ জনপথে, ঘোষণা হত প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে।’’ রাহুলকে কটাক্ষ করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আজ রাজ্যসভায় এমনই মুখভঙ্গি ও অঙ্গভঙ্গি করেন যে, বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেছেন, অর্থমন্ত্রী বাজেট নিয়ে ‘কমেডি টাইপ’ জবাব দিচ্ছেন!
অর্থনীতি নিয়ে নির্মলা আজ যুক্তি দিয়েছেন, কোভিডের ধাক্কা কাটাতে উন্নত দেশগুলি বাজারে চাহিদা বাড়ানোর দাওয়াই হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করেছিল। আমেরিকায় ৪০ বছরে সর্বাধিক মূল্যবৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করে তাঁর মন্তব্য, এই মূল্যবৃদ্ধি তারই ফল। তাঁর দাবি, ‘‘সেই তুলনায় ভারত শিল্প, ব্যবসায়ীদের জন্য সহজে ঋণের বন্দোবস্ত করে জোগান-ব্যবস্থাকে ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছিল। ফলে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে থেকেছে। অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’’
কিন্তু কোভিডের সময়ে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে অসাম্য, দারিদ্র, এবং সার্বিক ভাবে বেকারত্ব বেড়ে যাওয়া নিয়েও নির্মলা রাহুলকে আক্রমণ করেছেন! বলেছেন, ‘‘রাহুল ২০১৩ সালে বলেছিলেন, দারিদ্র আসলে একটা মানসিক অবস্থা।’’ কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল বাজেটে ‘অমৃতকাল’ নিয়ে স্বপ্ন দেখানোকে কটাক্ষ করে মোদী জমানাকে ‘রাহুকাল’ বলেছিলেন। নির্মলা বলেছেন, কংগ্রেসেই বরং এখন রাহুকাল চলছে। তাই বিক্ষুব্ধ নেতাদের জি-২৩ গোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে। কংগ্রেসের নেতা (রাহুল) যখন নিজের দলের প্রধানমন্ত্রীর (মনমোহন) অধ্যাদেশ সংবাদমাধ্যমের সামনে ছিড়ে ফেলেছিলেন, সেটা রাহুকাল ছিল।
কংগ্রেস মোদী সরকারের বেসরকারিকরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় নির্মলা বলেছেন, কংগ্রেসই বিলগ্নিকরণ শুরু করেছিল। এমনকি প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরার উত্তরপ্রদেশে ভোটের স্লোগান ‘লড়কি হুঁ লড় সকতি হুঁ’ স্লোগানকে কটাক্ষ করেছেন। কংগ্রেস নেতা শক্তিসিংহ গোহিলের মন্তব্য, ‘‘মোদী জমানায় ২৭ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে গিয়েছেন। তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাতেই অর্থমন্ত্রী রাগ করে রাহুল গান্ধীর সমালোচনা করেছেন।’’