ফাইল চিত্র।
কোভিড অতিমারি দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর দুর্দশা চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর পরে গত বছরের বাজেটে নরেন্দ্র মোদী সরকার দাবি করেছিল, স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ ১৩৭ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। বাস্তবে কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রকের জন্য বরাদ্দ গত অর্থ বছরের তুলনায় কমেছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সঙ্গে পুষ্টি অভিযান, পানীয় জল ও নিকাশি, আয়ুর্বেদ-যোগ-হোমিওপ্যাথির আয়ুষ মন্ত্রকের বরাদ্দ জুড়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন দেখিয়েছিলেন, স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বিপুল পরিমাণে বাড়ছে।
কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে হাসপাতালে অক্সিজেন, ভেন্টিলেটরের অভাবে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর পরে এ বার স্বাস্থ্য ক্ষেত্র ও বিশেষজ্ঞদের দাবি, অঙ্কের কারসাজি না করে মোদী সরকার সত্যি সত্যিই স্বাস্থ্যের পরিকাঠামোয় খরচ বাড়াক। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দিয়ে এতে জিডিপি-র অন্তত ৩ শতাংশ অর্থ খরচ হোক। অঙ্কের কারসাজি করে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে স্বাস্থ্যের জন্য বাজেট বরাদ্দ বেশি করে দেখানো হলেও স্বাস্থ্য খাতে খরচ জিডিপি-র মাত্র ১.১৫ শতাংশ। সরকারের দাবি, তা বেড়ে ১.৩৫ শতাংশ হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার মতো ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ফলে মানুষ কাজকর্মে যোগ দিতে পারছেন না। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। আর্থিক বোঝা বাড়ছে। গুরুগ্রামের মেদান্ত হাসপাতালের চেয়ারম্যান নরেশ ত্রেহানের মতে, স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রকে যে কোনও ভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য তৈরি রাখতে হবে। মোদী সরকার আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে দেড় লক্ষ সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র বা ওয়েলনেস সেন্টার তৈরির লক্ষ্য নিয়েছিল। ত্রেহানের মতে, এই কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। কারণ তাড়াতাড়ি রোগ চিহ্নিত করা জরুরি। কোভিড অতিমারি দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় ফাটল দেখিয়ে দিয়েছে।
অ্যাপোলো হাসপাতালের এমডি সুনীতা রেড্ডির বক্তব্য, এখন জিডিপির মাত্র ১.১৫ শতাংশ স্বাস্থ্যে খরচ হচ্ছে। তা বাড়িয়ে ২.৫ শতাংশ করতে হবে। সকলে যাতে স্বাস্থ্য পরিষেবা পান, সে দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। স্বাস্থ্য বিমা ও বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যে খরচের জন্য আরও বেশি আয়কর ছাড় দেওয়ারও দাবি উঠেছে স্বাস্থ্য ক্ষেত্র থেকে। ফর্টিস হেলথকেয়ারের সিইও আশুতোষ রঘুবংশীর মতে, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির শহরগুলিতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা কেন্দ্র, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ, অক্সিজেন প্ল্যান্ট, জরুরি পরিষেবা কেন্দ্র তৈরি করতে হবে। বেসরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের দাবি, স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখে বেসরকারি ক্ষেত্রের জন্য সস্তায় ঋণ, যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ছাড়, জিএসটি ছাড়ের সুবিধা দেওয়া হোক।
গত বছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ২০২০-২১-এ স্বাস্থ্যে ৯৪ হাজার কোটি টাকার তুলনায় ২০২১-২২-এ প্রায় ২.২৩ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। বাস্তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের জন্য বরাদ্দ ২০২০-২১-এর সংশোধিত হিসেবের তুলনায় কম ছিল। পরে অবশ্য অতিরিক্ত বরাদ্দ করে এখনও পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রকের জন্য ৯০ হাজার কোটি টাকার মতো বরাদ্দ হয়েছে। কোভিডের মোকাবিলায় আপদকালীন প্যাকেজও ঘোষণা হয়েছে। রাজ্যে রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতিতে এককালীন ১৫ হাজার কোটি টাকা অর্থও
বরাদ্দ হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “অতিমারির সময় যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উপরে প্রচণ্ড চাপ পড়েছে, তা স্পষ্ট। এমনিতেই আমাদের সরকারি হাসপাতালে প্রতি ৯,৭০২ জনের জন্য একজন অ্যালোপ্যাথ ডাক্তার রয়েছেন। ১,৬৬৬ জনের জন্য একটি হাসপাতালের বেড রয়েছে। কিন্তু তা বলে এক ধাক্কায় জিডিপি-র ২.৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে খরচ করার সুযোগ নেই। এ বারও তাই বোধহয় অঙ্কের কারসাজিই ভরসা!