কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
আয়করের নতুন ব্যবস্থা চালুর ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন শনিবার তাঁর বাজেট-প্রস্তাবে। কিন্তু তাতে কি চিন্তা লাঘব হবে আয়করদাতাদের? তাঁদের কাঁধে করের বোঝা কি হাল্কা হবে?
নতুন ব্যবস্থা চালুর পক্ষে সওয়াল করতে দিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, কর বাঁচানোর হিসাব কষতে গিয়ে আর কালঘাম ছুটবে না করদাতাদের। সে জন্যই আগের ব্যবস্থায় কর বাঁচানোর অনেকগুলি ধারা তুলে দেওয়া হয়েছে নতুন ব্যবস্থায়।
আয়করদাতাদের একটি বড় অংশ মধ্যবিত্ত হওয়ায় ফি বছর রিটার্ন দাখিলের সময় তাঁদের কপালে চিন্তার ভাঁজটা বড় হয়ে যায়। কোন কোন নথিপত্র কী ভাবে দেখালে বাৎসরিক আয় থেকে কর-বাবদ কাটাকুটির পরিমাণ খানিকটা কমানো যায়, সেই হিসেবনিকেশেই তখন মগ্ন হয়ে থাকতে হয় আয়করদাতাদের।
নির্মলার আশ্বাস কি সত্যি-সত্যিই এ বার চিন্তা লাঘব করবে আয়করদাতাদের? বিশেষজ্ঞদের বেশির ভাগই কিন্তু উল্টো কথা বলছেন! তাঁরা বলছেন, এতে মধ্যবিত্তের কাঁধের বোঝা আরও ভারী হল। কেন বলছেন, বুঝতে নির্মলার ঘোষিত আয়করের নতুন ব্যবস্থা ও আগের ব্যবস্থার সুযোগসুবিধাগুলি একটু খতিয়ে দেখা যাক।
যাঁদের বাৎসরিক আয় ১০ থেকে ২০ লক্ষ টাকার মধ্যে
বাৎসরিক আয় যাঁদের ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত, আয়করের চালু ব্যবস্থায় তাঁরা কর বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট আইনের ৮০সি ধারায় থাকা সুযোগসুবিধাগুলি নেন। সেই ভাবে তাঁদের বাৎসরিক আয়ের পরিমাণ থেকে দেড় লক্ষ টাকা বাদ যায়। যা করযোগ্য হয় না। তার মধ্যে পড়ে এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ডে (ইপিএফ) জমা দেওয়া চাকরিজীবীর টাকার পরিমাণও। তা ছাড়াও, মোট বাৎসরিক আয় থেকে বাদ যায় আরও ৫০ হাজার টাকা। যা করযোগ্য নয়। আয়কর আইনের ৮০সিসিডি ধারায়। জাতীয় পেনশন প্রকল্পে চাকরিজীবী নিয়মিত টাকা জমা করছেন বলে।
আরও দু’টি উপায় রয়েছে কর বাঁচানোর
২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মোট বাৎসরিক আয় যাঁদের তাঁরা আরও দু’টি উপায়ে কর বাঁচানোর সুবিধা পান। একটি, আয়কর আইনের ৮০ডি ধারায়। বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য বিমায় যাঁরা বাৎসরিক ২৫ হাজার টাকা প্রিমিয়াম দেন, তাঁরা সেই সুবিধা নিয়ে করযোগ্য আয়ের পরিমাণ কমান।
আরও পড়ুন- নয়া কর নীতি: কোন কোন খাতে আর পাওয়া যাবে না ছাড়
আরও পড়ুন- ‘নয়া আয়কর কাঠামো আসলে গিমিক’, বলছেন কর বিশেষজ্ঞরাই
অন্যটিও ৮০ডি ধারা মোতাবেক। বাড়িভাড়ার রসিদ জমা দিয়ে। বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া বাবদ বছরে সর্বাধিক ৩ লক্ষ টাকা ভাতা আয়করের চলতি আইনে করযোগ্য নয়। তার আর একটি বিকল্প রয়েছে। আয়কর আইনের ২৪ নম্বর ধারা মোতাবেক গৃহঋণের সুদ মেটানোর উপর বছরে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর-ছাড়ের সুবিধা নিয়েও কর বাঁচান আয়করদাতারা।
নির্মলার নতুন ব্যবস্থায় যা থাকবে না
এই সুবিধাগুলি কিন্তু নির্মলার ঘোষিত আয়করের নতুন ব্যবস্থায় থাকবে না। ফলে, চাকরিজীবীরা তাঁদের মোট বাৎসরিক আয়ের যে বড় অংশটিকে করের আওতার বাইরে রাখতে পারেন এখন চলতি আইনের বিভিন্ন ধারা, উপধারায় দেওয়া সুবিধা নিয়ে, আয়করের নতুন ব্যবস্থায় সেই সুযোগসুবিধা তাঁরা আর পাবেন না।
বাৎসরিক আয়ের পরিমাণ যাঁদের ১০ লক্ষ টাকা
যাঁদের বাৎসরিক আয়ের পরিমাণ ১০ লক্ষ টাকা, তাঁরা কর বাঁচাতে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে অতটা বিনিয়োগ করেন না। অন্যান্য ভাবে কতর বাঁচানোর হাতিয়ারগুলিও তেমন ব্যবহার করেন না। আয়করের নতুন ব্যবস্থায় এলে তাঁদের লাভের আশা দুরাশাই। বরং ক্ষতি হবে।
চলতি ব্যবস্থায় থাকলেই তাঁরা কর বাঁচাতে পারবেন বেশি।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু কর বাঁচানোর অনেক ধারাই তুলে নেওয়া হয়েছে আয়করের নতুন ব্যবস্থায়, তাই বিমা ও স্বাস্থ্য বিমার প্রতি আগ্রহ অনেকটাই কমে যাবে করদাতাদের। কারণ, নতুন ব্যবস্থা তাঁরা ওই সবের সুবিধা পাবে না। বরং বিমার প্রিমিয়াম জমা করতে গিয়ে তাঁদের পকেটে চান পড়বে।
যাঁদের বাৎসরিক আয় ৬ লক্ষ টাকা
যাঁদের বাৎসরিক আয় ৬ লক্ষ টাকা, তাঁরা ইপিএফে নিয়মিত টাকা জমা দেওয়ার জন্য চলতি আয়কর আইনে ২৫ হাজার টাকা ছাড় পান। সেই টাকা করযোগ্য নয়। এ ছাড়াও, তাঁদের আয়ের আরও ৫০ হাজার টাকা করযোগ্য হয় না চলতি আইনে। মোট বাৎসরিক আয়ের পরিমাণ থেকে সেই টাকা স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশান হিসাবে বাদ যায় আয়করের পরিমাণ হিসাবনিকেশের সময়।
তাঁরা আরও একটি সুবিধা পান চলতি আইনে। বছরে তাঁরা যদি ইক্যুইটি বাজারে রয়েছে এমন ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে মোট ২৫ হাজার টাকা জমা দেওয়ার নথিপত্র দাখিল করতে পারেন, তা হলে তাঁদের বাৎসরকি আয়ের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৫ লক্ষ টাকায়। আরও সুযোগসুবিধা আছে চলতি আয়কর আইনে। বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়ার ভাতা পাওয়া যায়। যা করযোগ্য নয়। পাওয়া যায় লিভ ট্র্যাভেল অ্যালাওয়েন্সও। সেটাও করযোগ্য নয়।
নতুন আইনে কর বাঁচানোর জন্য এই সুবিধাগুলির একটিও পাওয়া যাবে না।
তবে যাঁদের বাৎসরিক আয় ৫ লক্ষ টাকা বা তার কম, তাঁদের নতুন বা পুরনো কোনও আয়কর ব্যবস্থাতেই কর দিতে হবে না। কারণ, রিবেট বাবদ তাঁদের মোট আয় থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা বাদ পড়বে।