PM Narendra Modi

তেলঙ্গানায় মোদীর অস্ত্র অভিন্ন দেওয়ানি বিধি

পাঁচ রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে শেষে ভোট হতে চলেছে তেলঙ্গানায়। আজ বিজেপি নেতা অমিত শাহ তেলঙ্গানা সফরে গিয়ে দলের ইস্তাহার প্রকাশ করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:৩৭
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

হিন্দু ভোটের মেরুকরণের লক্ষ্যে তেলঙ্গানায় ভোটে জিতলে সে রাজ্যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার প্রতিশ্রুতি দিল বিজেপি। পাশাপাশি ধর্মের ভিত্তিতে মুসলিমদের জন্য করা ‘বিতর্কিত’ সংরক্ষণ বাতিল করে তা ওবিসি, দলিত ও জনজাতিদের দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর দল। ক্ষমতায় এলেরাজ্যের সনাতনী ধর্মালম্বীদের অযোধ্যার রাম মন্দির দর্শনে নিয়ে যাওয়ার কথাও বলা হয়েছে দলীয় ইস্তাহারে। যা দেখে কংগ্রেসের বক্তব্য, বিজেপি জানে এ যাত্রায় তাদের তেলঙ্গানায় জেতার কোনও সম্ভাবনা নেই। তাই স্থানীয় সংখ্যালঘু দল এমআইএম ও শাসক বিআরএসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মেরুকরণের রাজনীতি করে কংগ্রেসকে রুখতে চাইছে তারা।

Advertisement

পাঁচ রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে শেষে ভোট হতে চলেছে তেলঙ্গানায়। আজ বিজেপি নেতা অমিত শাহ তেলঙ্গানা সফরে গিয়ে দলের ইস্তাহার প্রকাশ করেন। বিরোধীদের অভিযোগ, রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিন্দু ভোটের মেরুকরণের উদ্দেশ্য নিয়েই ওই ইস্তাহার প্রকাশ করা হয়েছে। সেই কারণে ভোটমুখী অন্য চার রাজ্যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে কার্যত নীরব থাকলেও, তেলঙ্গানায় তা ফলাও করে প্রচারের হাতিয়ার করার কৌশল নিয়েছে বিজেপি। হিন্দু ভোটকে কাছে টানতে অযোধ্যায় রাম মন্দির দর্শনের প্রতিশ্রুতি ছাড়াও রাজ্যের শাসক দল বিআরএস মুসলিমদের জন্য যে ৪ শতাংশ সংরক্ষণ ঘোষণা করেছিল তা জনজাতি, ওবিসি ও দলিতদের মধ্যে সমান ভাবে বণ্টন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি।

এ ছাড়া ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পরে রাজাকারেরা হায়দরাবাদে যে হিংসা চালিয়েছিল সেই স্মৃতিকে উস্কে দিতে প্রতি বছরে ২৭ অগস্ট ‘রাজাকার বিভীষিকা স্মৃতি দিবস’ হিসেবে পালন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি। লক্ষ্য দেশভাগের সেই অতীত অধ্যায়কে তুলে এনে হিন্দু ভোটকে একত্রিত করা।

Advertisement

রাজনীতির অনেকের মতে, মূলত হিন্দু ভোটকে মাথায় রেখেই আজ ওই ইস্তাহার প্রকাশ করেছে বিজেপি। তাঁদের মতে, এতে পরোক্ষ ভাবে রাজ্যের মুসলিম ভোটকেও মেরুকরণের পথে ঠেলে দেওয়া যাবে বলে আশা বিজেপির। আর তা হলে রাজ্য রাজনীতিতে এর ফায়দা পাবে স্থানীয় সংখ্যালঘু দল এমআইএম। দেশীয় রাজনীতিতে এমআইএম বিজেপির ‘বি টিম’ হিসেবে পরিচিত। রাজনীতিকদের একাংশের দাবি, মূলত কংগ্রেস, তৃণমূল, আরজেডির মতো দলগুলির সংখ্যালঘু ভোট কাটতেই ওই সব রাজ্যে জনভিত্তি না থাকলেও প্রার্থী দিয়ে থাকেন এমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়েইসি। এ ক্ষেত্রেও বিজেপির উগ্র হিন্দু আগ্রাসনে রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোট যদি এমআইএমের পক্ষে একজোট হয়, সে ক্ষেত্রে আখেরে সমস্যায় পড়বে কংগ্রেস। ভাগ হয়ে বিরোধী ভোট। এমআইএম ছাড়াও বিরোধী ভোট ভাগের ফায়দা পাবে শাসক দল বিআরএস।

তেলঙ্গানার পরিস্থিতি যা, তাতে বিজেপি-এমআইএম আগামী দিনে চূড়ান্ত মেরুকরণের পথে হাঁটার কৌশল নিতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এই কৌশলেই উভয় দল নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে পারবে বলে ধারণা রাজনীতিকদের। অন্য দিকে সূত্রের মতে, একাধিক দুর্নীতির ফাঁসে আটকে গিয়ে বিআরএস এখন বিজেপির সঙ্গে তলে তলে সমঝোতা করে নেওয়ার পক্ষে। রাজনীতির অনেকের মতে, ফলে কংগ্রেসেরজন্য বিজেপি-এমআইএম-বিআরএস, তিন দল মিলে একটি অস্বস্তিকর অক্ষ তৈরি হয়েছে। যাদের লক্ষ্যই হল, কংগ্রেসকে রাজ্যে ক্ষমতা দখলথেকে রোখা।

কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের মতে, ‘‘তেলঙ্গানায় ক্ষমতা দখল যে অসম্ভব তা বুঝে গিয়েছে বিজেপি। তাই এখন বিআরএস ও এমআইএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যে কোনও মূল্যে কংগ্রেসকে রুখতে সক্রিয় হয়েছে তারা। কিন্তু মানুষের কাছে যা সাড়া পাচ্ছি তাতে কংগ্রেসের ক্ষমতায় আসা নিশ্চিত। রাজ্যের জনতা গত দশ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের বিআরএস-কে ক্ষমতা থেকে সরানোর পণ করে ফেলেছেন। ’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement