Uniform Civil Code bill

ঘোষণাপত্র ছাড়া ‘লিভ-ইন’ করলেই জেল! দেশে প্রথম ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’র বিল পেশ হল উত্তরাখণ্ডে

এই বিল আইনে পরিণত হলে ভারতের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা ঘটবে বলে মনে করছে পদ্ম শিবির। ভারতে প্রথম রাজ্য হিসাবে উত্তরাখণ্ড সরকার এই বিল বিধানসভায় পেশ করল। এই বিলে একাধিক বিষয়ের কথা বলা হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:১৭
Share:

উত্তরাখণ্ডের বিধানসভায় পেশ হল অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সংক্রান্ত বিল। — ফাইল চিত্র।

উত্তরাখণ্ডের বিধানসভায় পেশ হয়ে গেল ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ সংক্রান্ত বিল। এই বিল পেশকে ‘ঐতিহাসিক’ ঘটনা বলে অভিহিত করেছে উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকার। ভারতের প্রথম রাজ্য হিসাবে উত্তরাখণ্ড সরকার এই বিল বিধানসভায় পেশ করল। এই বিলে একাধিক বিষয়ের কথা বলা হয়েছে। বিবাহ, সম্পত্তির উত্তরাধিকার, দত্তক গ্রহণের মতো বিষয়গুলিতে সকলের জন্য একই আইন চালু হওয়ার পথে আরও এক ধাপ এগোল হিমালয়ের কোলের এই রাজ্যটি। এই বিলে রয়েছে, যদি কোনও যুগল ‘একত্রবাস’ বা ‘লিভ-ইন’ করতে চান তবে অবশ্যই পুলিশ বা জেলা আধিকারিকদের অনুমতি নিতে হবে। আর যদি তাঁদের বয়স ২১ বছরের নীচে হয়, তবে বাবা-মায়ের সম্মতির প্রয়োজন পড়বে।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জনাপ্রকাশ দেশাইয়ের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছিলেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামি। সেই কমিটির উপরই দায়িত্ব ছিল অভিন্ন দেওয়ানি বিধি-র খসড়া তৈরি করার। কমিটির সুপারিশ মোতাবেক এই সংক্রান্ত খসড়া বিল পেশ হয় পুষ্কর সিংহ ধামির মন্ত্রিসভায়। রবিবার মন্ত্রিসভার অনুমোদন পাওয়ার পর, সোমবার সেই বিল বিধানসভায় পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী ধামি।

এই বিল আইনে পরিণত হলে ভারতের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা ঘটবে বলে মনে করছে পদ্মশিবির। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সংক্রান্ত বিলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বহুবিবাহ। যে কোনও ধর্মের মানুষের ক্ষেত্রেই এই নিয়ম বলবৎ হবে। নিয়ম ভাঙলেই কঠোর শাস্তি। ধর্ম নির্বিশেষে মেয়েদের ন্যূনতম বিয়ের বয়স ১৮ এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছর করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ‘রেজিস্ট্রি বিবাহ’ বাধ্যতামূলকের কথা বলা হয়েছে এই বিলে।

Advertisement

কোনও যুগল ‘লিভ-ইন’ করতে চাইলে প্রথমেই তাঁদের নাম পুলিশের কাছে নথিভুক্ত করতে হবে। ‘লিভ-ইন’ সম্পর্কের ‘ঘোষণাপত্র’ সঙ্গে রাখতে হবে যুগলকে। প্রয়োজনে তা দেখাতে ব্যর্থ হলে যুগলের ২৫ হাজার টাকার জরিমানা এবং তিন মাসের জেল হতে পারে। ‘লিভ-ইন’ সম্পর্কে থাকা যুগলের যদি সন্তান হয়, তবে শিশুরা আইনি স্বীকৃতি পাবে। কেউ যদি ‘লিভ-ইন’ সম্পর্ক নথিভুক্ত করতে ব্যর্থ হন তবে সর্বোচ্চ ছ’মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয়ই হতে পারে। পাশাপাশি বিলে আরও বলা হয়েছে, যদি ‘লিভ-ইন’ সম্পর্ক নথিভুক্ত করতে দেরি হয়, সে ক্ষেত্রে তিন মাস পর্যন্ত জেল বা ১০ হাজার টাকার জরিমানা কিংবা উভয়ই হতে পারে।

বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রেও রাজ্যের সকলের জন্য একই নিয়ম বলবৎ করার কথা আছে এই বিলে। দম্পতিকে নির্দিষ্ট সময় ‘কুলিং অফ’ পিরিয়ডে থাকতে হবে। সেই সঙ্গে এই বিলে সন্তান দত্তক নেওয়ার নিয়ম আরও সহজ করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও বাবা-মায়ের সম্পত্তির ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়ের সমান অধিকার থাকবে। এমনকি, দত্তক নেওয়া সন্তানদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম বলবৎ হবে।

অভিন্ন দেওয়ানি বিধি পেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই বিজেপি বিধায়কদের ‘জয় শ্রীরাম’, ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে বিধানসভা। এই বিলকে ‘স্বাগত’ জানিয়েছে উত্তরাখণ্ডের কংগ্রেস। তবে সরকারের বিল পেশ করার পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি তুলেছে তারা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা যশপাল আর্য বলেন, ‘‘সরকার কোনও আলোচনা ছাড়াই এই বিল পেশ করাতে চায়। যা একদমই ঠিক নয়।’’ একই মত পোযণ করেছেন উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রবীণ কংগ্রেস নেতা হরিশ রাওয়াতও।

উত্তরাখণ্ড সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে গুজরাত এবং অসমের বিজেপি শাসিত সরকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement