Unemployment Rate in West Bengal

বেকারত্ব কমেছে বঙ্গে, বেড়েছে বিনা পয়সায় কাজ

কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩-২৪-এ পশ্চিমবঙ্গে ১৫-২৯ বছর বয়সি তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৯ শতাংশ। কোভিডের পরের বছর, অর্থাৎ ২০২১-২২-এ তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১১.৩ শতাংশ ছিল।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:০১
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

পশ্চিমবঙ্গে তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার কমেছে। কিন্তু বেতনভুক কর্মীর সংখ্যা কমেছে। পারিবারিক ব্যবসায় বা বাড়ির কারখানায় কাজ করা মানুষের হার বেড়েছে। সরকারি খাতায়-কলমে তাঁরা বেকার না হলেও আসলে তাঁরা বিনা পয়সায় পারিবারিক ব্যবসায়, দোকানের কর্মী বা কারখানায় কাজ করছেন। তাঁরা বাড়তি রোজগার করছেন না। রাজ্যের কর্মরত মানুষের ২৩.১ শতাংশ ঠিকা শ্রমিক বা দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। বেতনভুক কর্মীর সংখ্যা মাত্র ২০.৪ শতাংশ।

Advertisement

কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩-২৪-এ পশ্চিমবঙ্গে ১৫-২৯ বছর বয়সি তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৯ শতাংশ। কোভিডের পরের বছর, অর্থাৎ ২০২১-২২-এ তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১১.৩ শতাংশ ছিল। অর্থাৎ বেকারত্বের হার দু’বছরে প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে।

উল্টো দিকে, পশ্চিমবঙ্গে বাড়ির ব্যবসা বা চাষবাসের কাজে বিনা আয়ে কাজ করা মানুষের হারও বেড়েছে। ২০২১-২২-এ পশ্চিমবঙ্গের কর্মরত মানুষের ৯.২ শতাংশ এই ভাবে বিনা পয়সায় পারিবারিক ব্যবসায় কাজ করতেন। ২০২৩-২৪-এ তাদের সংখ্যা বেড়ে ১১.৪ শতাংশ হয়েছে। অর্থাৎ, দু’বছরে এই বিনা পয়সায় কাজ করা কর্মীর সংখ্যা প্রায় ২৪ শতাংশ বেড়েছে। সরকারি খাতায়-কলমে তাঁদের স্বনির্ভর বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। তাই তাঁরা বেকারদের দলে পড়ছেন না। কিন্তু আসলে তাঁরা কোনও রোজগার করছেন না। তবে তাঁরা কাজ করছেন বলে পারিবারিক ব্যবসা বা বাড়ির কারখানায় কর্মী নিয়োগ করতে হচ্ছে না। খরচ সাশ্রয় হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কর্মিবলের এই ১১ শতাংশের বেশি মানুষ আসলে অন্য জায়গায় কাজ না পেয়ে বাড়ির ব্যবসা, ছোট কারখানায় বিনা বেতনে কাজ করছেন।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গের কাজের বাজার (২০২৩-২৪)

১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সি তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৯%

রাজ্যে কর্মরত মানুষের মধ্যে কতজন কোথায়

পাকা চাকরিতে বেতনভুক কর্মী ২০.৪%

স্বনির্ভর বা নিজের ব্যবসা বা কারখানা চালাচ্ছেন ৪৫%

পারিবারিক ব্যবসা বা বাড়ির কারখানায় কর্মী ১১.৪%

ঠিকা শ্রমিক বা দিনমজুর ২৩.১%

তথ্য: বার্ষিক কর্মীবল সমীক্ষা বা পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে (পিএলএফএস) ২০২৩-২৪

পরিসংখ্যান বলছে, পশ্চিমবঙ্গে কর্মরতদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ মানুষ স্বনির্ভর বা নিজের ব্যবসা বা কারখানা চালান। ১১.৪ শতাংশ মানুষ পারিবারিক ব্যবসা বা কারখানায় বিনা বেতনে কাজ করেন। রাজ্যের কর্মরত মানুষের ২৩.১ শতাংশ ঠিকা শ্রমিক বা দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। স্থায়ী চাকরিতে থাকা বেতনভুক কর্মীর সংখ্যা ২০.৪ শতাংশ মাত্র। দু’বছর আগে, ২০২১-২২-এ বেতনভুক কর্মীর হার ২১.৮ শতাংশ ছিল।

কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রক প্রতি বছর কাজের বাজারের পরিস্থিতি বুঝতে কর্মিবল সমীক্ষা বা পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে (পিএলএফএস) চালায়। সম্প্রতি ২০২৩-২৪-এর বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। এই রিপোর্ট বলছে, দেশে বেকারত্বের হার গত কয়েক বছরের মতোই ৩ শতাংশের ঘরে আটকে রয়েছে। ২০২৩-২৪-এ বেকারত্বের হার ছিল ৩.২ শতাংশ। তবে ১৫-২৯ বছর বয়সি তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১০.২ শতাংশ। লক্ষদ্বীপ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মতো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বাদ দিলে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলির তালিকায় তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার সব থেকে বেশি কেরলে। দেশের একমাত্র বামশাসিত এই রাজ্যে ১৫-২৯ বছর বয়সিদের মধ্যে বেকারত্বের হার ২৯.৯ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, জাতীয় স্তরেও কর্মরতদের মধ্যে বিনা বেতনে বাড়ির ব্যবসা বা ছোট কারখানায় কাজ করা মানুষের হার ক্রমশ বাড়ছে। কোভিডের পরের বছরে এদের হার ছিল ১৬.৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪-এ তা বেড়ে ১৮.৮ শতাংশ হয়েছে। কোভিডের পরে কাজের বাজারে থাকা মানুষের হার বা যাঁরা কাজ করছেন এবং কাজ খুঁজছেন, তাঁদের হার কমে গিয়েছিল। অনেকে কাজ খোঁজাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এখন কাজের বাজারে থাকা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। কারণ, স্বনির্ভর মানুষের হার বেড়েছে। কিন্তু এই স্বনির্ভরদের মধ্যে অনেকেই বিনা বেতনে বাড়ির ব্যবসায় বা কারখানায় কাজ করছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement