কথায় আছে ‘পয়সা থাকলে সব সম্ভব’। কথাটি কতটা সত্যি, সেটার প্রমাণও আছে ভুরি ভুরি। অভিনেতাদের যেহেতু সর্বদাই প্রায় ক্যামেরার সামনে থাকতে হয়, তাই তাঁদের চেহারায় নিত্য ঘষামাজা করতেই হয়। তাই তাঁদের পুরনো ছবির সঙ্গে বর্তমান মেলালে একটু অবাক হতে হয়। কিন্তু কয়েক বছরের ব্যবধানে ভারতের সবচেয়ে ধনী পরিবারের চেহারার পরিবর্তন দেখে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য।
পরিবারের মাথা মুকেশ অম্বানীকে দিয়েই শুরু করা যাক। রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রির মালিক, চেয়ারম্যান ও সবচেয়ে বড়ো অংশীদার হলেন মুকেশ অম্বানী। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চেহারায় বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে।
সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মুখের তেমন পরিবর্তন না হলেও জেল্লাদার হয়েছে চেহারা। তিনি আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠায় চেহারায় তার ছাপ পড়েছে। আগের মতোই সাদামাটা থাকার চেষ্টা করলেও তার ব্যক্তিত্বে বেশ পাল্টে গিয়েছে।
রিলায়্যান্স ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপার্সন নীতা অম্বানী। কমার্স গ্রাজুয়েট নীতা কিন্তু প্রথম থেকে এত ধনী ছিলেন না। মধ্যবিত্ত গুজরাতি পরিবারে জন্ম তাঁর। ভরতনাট্যমে দক্ষ নীতাকে প্রথম জীবনে দেখতে ছিল বেশ সাধারণ।
বর্তমানে সাড়ে তিন লক্ষ কোটি টাকার মালিক নীতা অম্বানীর সময়ের সঙ্গে চেহারায় পরিবর্তনও লক্ষণীয়। বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজের পরিচর্যা করতে ভোলেন না একদিনও। শুধু দামি প্রোডাক্ট নয়, তিনি নাকি এক পোশাক, জুতো দ্বিতীয় বার পরেন না। একই নিয়ম নাকি গয়নাগাটির ক্ষেত্রেও।
মুকেশ-নীতা অম্বানীর বড়ো ছেলে আকাশ অম্বানী। ২৮ বছর বয়সি আকাশ এই বছরের মার্চ মাসেই বিয়ে করেন হীরে ব্যবসায়ী রাসেল মেহতার মেয়ে শ্লোকা মেহতাকে। আকাশের বিয়ের আগে ওজন ছিল অনেকটাই। গোলগাল চেহারার আকাশ ব্রাউন ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতি নিয়ে পাশ করেছেন।
১১ বছরের পুরনো বান্ধবী শ্লোকাকে বিয়ে করার আগেই নিজেকে ‘ফিট অ্যান্ড হ্যান্ডসাম’ বানিয়ে তুলেছেন বেশ কয়েক কেজি ওজন কমিয়ে। বিয়ের প্রতিটি অনুষ্ঠানেই তিনি শ্লোকার মতোই নিজেকেও পাপারাৎজির ক্যামেরায় তুলে ধরেছেন আত্মবিশ্বাস ও স্টাইলের সঙ্গে।
এ বার আসা যাক আকাশের স্ত্রী শ্লোকা মেহতার কথায়। সম্প্রতি তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তা দেওয়ার সময় অম্বানী পরিবার ঘুরিয়ে তাঁর মা হওয়ার বার্তা দিয়ে শোরগোল ফেলে দেয়। হিরে ব্যবসায়ী রাসেল মেহতার ছোট মেয়ে শ্লোকার চেহারায় তেমন বিশেষ পরিবর্তন দেখা যায়নি।
শ্লোকা বরাবরই দামি গাড়ি ব্যবহার করতে যেমন ভালবাসেন, তেমনই বিশ্বের সেরা মেকআপ প্রোডাক্টগুলি ব্যবহার করেন। ফ্যাশনেবল ও আকাশছোঁয়া দামের জামা কাপড় পরে বিয়ের আগে থেকেই লাইমলাইটে থেকেছেন শ্লোকা। বিয়ের অনুষ্ঠানেও তিনি পরেছিলেন ৫০ হাজার স্ফটিক বসানো লেহেঙ্গা।
মুকেশ অম্বানীর একমাত্র মেয়ে ইশা ৩ মে বিয়ে করেন পিরামল গ্রুপের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর আনন্দ পিরামলকে। ইশা অম্বানীর বিয়ের ছবি দেখে তাঁকে খুবই গ্ল্যামারাস মনে হলেও তিনি কিন্তু বরাবর এরকম দেখতে ছিলেন না। ইশাও তাঁর ভাইদের মতো ভারী চেহারারই ছিলেন।
তবে পড়াশোনা শেষ করে ব্যবসায় যোগ দেওয়ার আগেই ইশা তাঁর চেহারার পরিবর্তনের জন্য পরিশ্রম শুরু করেন। বিয়ের আগে কেবল ওজনই কমাননি, সঙ্গে নিজেকে আরও লাস্যময়ী করে তোলার জন্য নিয়মিত বিভিন্ন রূপচর্চাও করিয়েছেন।
অম্বানী পরিবারের ছোট ছেলে এবং ইশার যমজ ভাই অনন্তকে নিয়ে মিডিয়ায় বহু বছর ধরেই চর্চা চলছে। সেই চর্চার কারণ হল তার বিপুল ওজন। ২১ বছর বয়সী অনন্ত নিজের ওজন কমানোর জন্য ভারতের সেরা চিকিৎসকদের কাছে গেলেও তারা অসফল হন। অগত্যা বিদেশেই পাড়ি দেন অনন্ত।
দেড় বছরের দীর্ঘ চেষ্টা ও কড়া ডায়েট মেনে অনন্ত অম্বানী ১০৮ কেজি ওজন কমিয়ে ফেলেন! বিশালাকায় অনন্ত এখন কিন্তু নিজেকে ‘ফিটনেস ফ্রিক’ হিসাবেই পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। অতি কষ্টে ঝড়ানো ওজন যাতে আর ফিরে না আসে, তার জন্য রোজ যোগা ও জিম করেন তিনি। চেহারার সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে চুলের স্টাইলেও।
নামী ব্যবসায়ী অজয় পিরামলের ছেলে আনন্দ পিরামল বিয়ে করেন ইশা অম্বানীকে। অম্বানী পরিবারের এই নতুন সদস্য ৩৩ বছর বয়সী আনন্দের চেহারারও সময়ের সঙ্গে বিপুল পরিবর্তন ঘটেছে। তবে তা মোটেই অম্বানীদের মতো নয়। মুম্বই ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করা আনন্দ প্রায় ২২ বছর বয়সেই কাপড়ের ব্যবসায় যোগ দেন।
যেখানে অম্বানীরা নিজেদের আকর্ষণীয় করে তুলতে চেষ্টার কোনও খামতি রাখেননি, আনন্দ কিন্তু সম্পূর্ণ বিপরীত সেই দিক থেকে। বয়সের সঙ্গে তার ওজনও বেড়েছে কিছুটা এবং মাথার চুলের সংখ্যাও কমেছে। তার এই চেহারার জন্য বিয়ের সময় ট্রোলিং-এর মুখেও পড়তে হয়েছিল।