বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনায় বিবিসি দফতরে আয়কর ‘সমীক্ষা’র প্রসঙ্গ তুললেন ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রী। ফাইল চিত্র।
আরও একবার বিবিসি দফতরে ‘আয়কর সমীক্ষা’ নিয়ে সক্রিয়তা দেখাল ব্রিটেনের ঋষি সুনক সরকার। বুধবার নয়াদিল্লিতে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে হয়ে এই প্রসঙ্গ তোলেন ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি। এর আগেও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটির দিল্লি এবং মুম্বইয়ের দফতরে ‘আয়কর সমীক্ষা’ নিয়ে মুখ খুলেছিল ব্রিটিশ সরকার। বিবিসির পাশে দাঁড়িয়ে, ব্রিটিশ সংসদে বিবৃতি দিয়ে সুনক সরকার জানিয়েছিল, সংবাদমাধ্যমের ক্ষেত্রে সম্পাদকীয় স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তা খর্ব হয় এমন কোনও কাজ করা উচিত নয়। ইংল্যান্ড তার সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে গর্বিত। তার পর ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রীর তরফে আবারও বিবিসির প্রসঙ্গ তোলাকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক নানা ঘটনার পটভূমিতে ভারত এবং ব্রিটেনের মধ্যে কৌশলগত বোঝাপড়া আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই আবহে কূটনৈতিক আলোচনায় বার বার বিবিসি প্রসঙ্গ ওঠায় ভারতের অস্বস্তি বাড়ারই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। জি২০-র বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে ভারতে এসেছেন ব্রিটেন-সহ এই গোষ্ঠীভুক্ত বিভিন্ন দেশের বিদেশমন্ত্রীরা। মূল বৈঠকের পাশাপাশি, বুধবার পার্শ্ববৈঠকে বসেছিলেন ভারত এবং ব্রিটেনের বিদেশমন্ত্রীরা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, সেই সময় গুজরাতে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছিল। সম্প্রতি তা নিয়ে দু’টি পর্বের একটি তথ্যচিত্র তৈরি করে বিবিসি। যার প্রথম পর্বটি দেশে সম্প্রচার নিষিদ্ধ করে মোদী সরকার। তা নিয়ে ব্যাপক চাপান-উতোর শুরু হয় দেশে। আঁচ পড়ে বহির্বিশ্বেও। ঘটনার এক সপ্তাহ পর তা নিয়েই আলোচনায় সরগরম হয়ে ওঠে ব্রিটেনের সংসদ ভবন। ইংল্যান্ডের প্রথম পাগড়ি পরিহিত শিখ সাংসদ তনমনজিৎ সিংহ ঢেসির বক্তব্যেও উঠে আসে বিবিসির দিল্লি ও মুম্বইয়ের অফিসে ৫৯ ঘণ্টা তল্লাশির প্রসঙ্গ। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ইংল্যান্ডে আমরা অত্যন্ত গর্ব অনুভব করি আমাদের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে। যে ভাবে বিবিসি বা অন্যান্য নামী সংবাদমাধ্যম ইংল্যান্ডের সরকার, তার প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদের সমালোচনা করে তার পরেও আমরা এই পথ থেকে সরে আসার কথা ভাবিনি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এই কারণেই আমরা আরও বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েছি। কারণ, একটি তথ্যচিত্র তৈরির পরই এই ‘আয়কর সমীক্ষা’ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।’’
কিছু দিন আগেই বিবিসির দিল্লি ও মুম্বইয়ের অফিসে এক টানা ৫৯ ঘণ্টা অভিযান চালায় ভারতের আয়কর দফতর। ভারতীয় কর কর্তৃপক্ষের দাবি, করছাড় বিষয়ক নানা বেনিয়ম করেছে বিবিসি। সেই সূত্রেই একটানা অভিযান। যদিও আয়কর দফতর একে এক বারও অভিযান বলে চিহ্নিত করেনি। তারা শুরু থেকেই একে আয়কর ‘সমীক্ষা’ হিসাবেই অভিহিত করে গিয়েছে। যদিও ব্রিটেনের পার্লামেন্টে সমীক্ষা নয়, পুরোদস্তুর তল্লাশি অভিযানের কথা নিয়েই আলোচনা হয়।