ফাইল চিত্র।
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত সিমেস্টার এবং চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা বাধ্যতামূলক বলে জানিয়ে দেওয়ার পরে করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কী ভাবে পরীক্ষা নিতে হবে, এ বার সেই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কাছে নির্দেশ পাঠাল ইউজিসি। কিন্তু ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক থেকে শিক্ষা শিবিরে এই নিয়ে যে-উদ্বেগ চেপে বসেছে, কেন্দ্র বা ইউজিসি-র তরফে তার সুরাহা করার কোনও উদ্যোগ নেই। শিক্ষক শিবিরের বক্তব্য, কেন্দ্র ও রাজ্যের পরপর নির্দেশের ফলে দিশাহারা পড়ুয়ারা গভীর উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। ঠিক কী ভাবে কী হতে চলেছে, তা স্পষ্ট করে জানানো হোক।
তিনিও যে পড়ুয়াদের উদ্বেগের শরিক, আচার্য-রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় বুধবার টুইট করে তা জানিয়ে দিয়েছেন। ১৫ জুলাই রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যদের সঙ্গে তাঁর ভার্চুয়াল-বৈঠক করার কথা। ধনখড় টুইটে লিখেছেন, ওই বৈঠকের পরে তিনি ছাত্রছাত্রীদের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলবেন। পড়ুয়ারা খুবই উদ্বেগের মধ্যে আছেন। তার সমাধান জরুরি। তিনি ছাত্রছাত্রীদের প্রতি দায়বদ্ধ। প্রয়োজনে এই বিষয়ে ইউজিসি এবং কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা করবেন তিনি।
পরীক্ষার জন্য ইউজিসি ৩০ দফার যে-‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর’ পাঠিয়েছে, তাতে পরীক্ষা কেন্দ্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার উপরে বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে: ছাত্রছাত্রীদের নতুন মাস্ক পরতে হবে। পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে বসাতে হবে পরীক্ষার্থীদের। যাতায়াতে নিয়ন্ত্রণ আছে, এমন কোনও জায়গা থেকে কেউ যদি পরীক্ষা দিতে আসেন, সে-ক্ষেত্রে তাঁর কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র অথবা অ্যাডমিট কার্ডকেই যাতায়াতের পাস বলে গণ্য করতে হবে। যাঁরা কেন্দ্রে পরীক্ষা ব্যবস্থাপনায় থাকবেন, তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সার্টিফিকেট দিতে হবে। জ্বর আছে কি না, নিশ্চিত হতে ‘থার্মোগান’ দিয়ে পরীক্ষা করতে হবে প্রত্যেককে।
ইউজিসি-র পরীক্ষা সংক্রান্ত ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর’
• পরীক্ষার্থী, নজরদারদের নতুন মাস্ক পরতে হবে।
• মাস্কের সঙ্গে নজরদারদের গ্লাভসও পরতে হবে।
• পরীক্ষা কেন্দ্রে থার্মাল স্ক্যানার, যথেষ্ট পরিমাণে স্যানিটাইজ়ার, মাস্ক এগুলো ঢোকার মুখেই রাখতে হবে।
• করোনার কারণে যদি কোনও জায়গা আটকানো থাকে, সে ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীদের কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র বা অ্যাডমিট কার্ড যাতায়াতের পাস বলে গণ্য করতে হবে।
• পরীক্ষক এবং পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের পাস দিতে হবে। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে হবে।
• পড়ুয়া এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলে আরোগ্য সেতু অ্যাপ ডাউনলোড করুন।
• কোনও পরীক্ষার্থী আসার পরে যদি দেখা যায়, তার জ্বর বা সর্দিকাশি রয়েছে, তা হলে তাকে একেবারে আলাদা বসার ব্যবস্থা করে দিতে হবে, না-হলে অন্য দিন তাঁর পরীক্ষা নিতে হবে।
• পরীক্ষার সঙ্গে যুক্তদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানাতে হবে। অসুস্থ হলে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
• পরীক্ষা কেন্দ্রের সর্বত্র পরিচ্ছন্নতা এবং পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
• পারস্পরিক দূরত্বের বিষয়ে পোস্টার যেন পরীক্ষাকেন্দ্রে সর্বত্র লাগানো থাকে।
• হাত ধোয়ার জন্য জল থাকতে হবে।
• শৌচাগারগুলি পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
• ডাস্টবিন যেন পরিচ্ছন্ন এবং ঢাকা দেওয়া থাকে।
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মঙ্গলবার জানান, তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি-র পরীক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির হাতেই ছেড়ে দিয়েছেন। এর আগে রাজ্য সরকার পরীক্ষা না-নিয়ে ৮০-২০ ফর্মুলায় চূড়ান্ত সিমেস্টার এবং চূড়ান্ত বর্ষের মূল্যায়ন করার জন্য অ্যাডভাইজ়রি বা পরামর্শ-নির্দেশিকা দিয়েছে। বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় সেই অনুযায়ী মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। শিক্ষা সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে উপাচার্যেরাও নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসতে চলেছেন।
আরও পড়ুন: মুম্বইয়ে প্লাজ়মা থেরাপি বিভাগের উদ্বোধনে সচিন
শিক্ষক সংগঠনগুলির বক্তব্য, এক দিকে রাজ্যের অ্যাডভাইজ়রি, অন্য দিকে ইউজিসি-র নির্দেশ। এই দুইয়ের মধ্যে পড়ে ছাত্রছাত্রীরা দিশাহারা। পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (ওয়েবকুটা) সহ-সভাপতি প্রবোধ মিশ্র বলেন, ‘‘দু’পক্ষের নির্দেশ নিয়ে দিশাহারা সকলেই। পড়ুয়াদের কি গিনিপিগ মনে করা হচ্ছে? পরীক্ষার বিষয়ে ঠিক কী করা হচ্ছে, তাড়াতাড়ি খুব স্পষ্ট ভাবে সেটা জানানো হোক।’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (জুটা) সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়ের অভিযোগ, কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্বাধিকারের উপরে ভরসা করে না। বার বার সিদ্ধান্ত বদল করে পড়ুয়াদের চরম অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (কুটা) সভাপতি পার্থিব বসু বলেন, ‘‘খুব দ্রুত এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক, সারা দেশে মূল্যায়নে যেন সাযুজ্য থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা যেন রাজ্যের বাইরে গিয়ে অসুবিধায় না-পড়েন।’’