বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ফাইল চিত্র।
জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসারী ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম (আইকেএস) পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার পরে তা পড়ানোর জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে উদ্যোগী কেন্দ্র। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত নির্দেশিকা (গাইডলাইন) প্রকাশ করেছে ইউজিসি। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে এই গাইডলাইন বাস্তবায়িত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, এই গাইডলাইন দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের আইকেএস-এর উপরে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে এবং মানসম্পন্ন গবেষণা করতে অনুপ্রাণিত করবে।
নির্দেশিকার মুখবন্ধে বলা হয়েছে, ভারতে শিল্প, সাহিত্য, ঐতিহ্য, প্রথা, ভাষা, স্থাপত্যবিদ্যা প্রভৃতি খুবই প্রাচীন। তার চর্চা গত শতাব্দীতে বন্ধ হয়েছে। সেই চর্চা শুরু করার লক্ষ্যে আধুনিক পাঠ্যক্রমের সঙ্গে ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্যকে মেশাতে চাওয়া হচ্ছে। প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের ক্লাস শুরুর আগে ‘ইন্ডাকশন প্রোগ্রাম’ আইকেএস ভিত্তিক করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার জন্য বই, নথি, ভিডিয়ো এবং প্রবন্ধ তৈরি করতে বলা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি মন্দির, গুরুকুল, আয়ুর্বেদিক কেন্দ্র— এই সব জায়গায় পড়ুয়াদের নিয়ে যেতে হবে।
নির্দেশিকায় এ-ও বলা হয়েছে যে, বিজ্ঞান, কারিগরি বিদ্যা, চিকিৎসা শাস্ত্র, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, অঙ্ক, সমাজ বিজ্ঞানের সঙ্গে ভারতীয় ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ ঘটানো হবে। পড়ুয়াদের এই পাঠ দেওয়ার জন্য শিক্ষকদের ‘রিফ্রেশার্স’ কোর্স করানো হবে।
গত ডিসেম্বর মাসে ইউজিসির এই নির্দেশিকার খসড়া প্রকাশিত হয়েছিল। তার পরেই শুরু হয় বিতর্ক। অনেকেই বলেন, ঐতিহ্যের নামে শিক্ষাকে পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, ঐতিহ্যের নামে ‘হিন্দু পুনরুত্থানবাদী’ ঝোঁকও প্রবল। চূড়ান্ত নির্দেশিকা প্রকাশের পরে ‘সারা ভারত সেভ এডুকেশন কমিটি’-র সাধারণ সম্পাদক তরুণকান্তি নস্কর শনিবার বলেন, ‘‘ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেমের নামে এমন সব উদ্ভট জিনিস ইউজিসি শেখাতে চাইছে, যার সঙ্গে আধুনিক শিক্ষার কোনও যোগ নেই। সঙ্ঘ পরিবার বিজ্ঞানকে যা ভাবে, সে ভাবেই তা শেখাবে। ওরা প্রমাণ করতে চাইছে, আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের যা চর্চা হয় তা বেদ-পুরাণের যুগেও ছিল৷’’ এই নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছে কমিটি। এই নির্দেশিকার বিরোধিতা করেছে পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (ওয়েবকুটা)-ও। সংগঠনের সভাপতি শুভোদয় দাশগুপ্ত এ দিন বলেন, ‘‘ঐতিহ্যের সঙ্গে বর্তমানের সমন্বয় শুনতে ভাল লাগে। কিন্তু নলেজ সিস্টেম একটা অগ্রগতির অনুশীলন। বিজ্ঞানের সঙ্গে অবিজ্ঞানের সমন্বয় যদি ঘটানো হয়,গণিতের মধ্যে যদি জ্যোতিষ চর্চা মেশে তার উদ্দেশ্য তো ভ্রান্ত জ্ঞানের প্রসার ঘটিয়ে সমাজে কুসংস্কার, বিদ্বেষ ও বিভেদ সৃষ্টি করা।’’