অমিত শাহের কাছে গিয়ে গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের দাবি জানিয়েছিলেন তিপ্রা প্রধান প্রদ্যোত বিক্রম মাণিক্য দেববর্মন। ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের ডাকে সাড়া দিয়ে ‘বৃহত্তর তিপ্রাল্যান্ড’ গঠন নিয়ে আলোচনার জন্য দিল্লি গিয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার রাত পর্যন্ত দফায় দফায় বৈঠকও করেছিলেন। তার পরেই জনজাতি দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রদ্যোতবিক্রম মানিক্য দেববর্মণ শনিবার অভিযোগ তুললেন, ত্রিপুরায় দল ভাঙার খেলে শুরু করেছে বিজেপি।
টুইটারে প্রদ্যোৎ লিখেছেন, ‘আশ্চর্যজনক ভাবে কোনও আইপিএফটি নেতাই ফোন ধরছেন না! সকাল ১১টা থেকে তাদের বক্তব্য শোনার অপেক্ষায়! মনে হচ্ছে অপারেশন কমল!’ ঘটনাচক্রে, শনিবারই ত্রিপুরার ৪৮ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে প্রদ্যোতের অভিযোগকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
২০১৮-র বিধানসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে ৮টি আসনে জিতেছিল আর এক জনজাতি দল আইপিএফটি। কিন্তু গত দু’বছরে আইপিএফটির ৮ জন বিধায়ক তিপ্রায় যোগ দিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বিজেপির কাছে আইপিএফটির গুরুত্বও কমতে শুরু করেছিল। এই পরিস্থিতিতে গত ১ জানুয়ারি আইপিএফটি প্রধান তথা জোট সরকারের মন্ত্রী এনসি দেববর্মার মৃত্যুর পর কার্যত নেতৃত্বহীন হয়ে পড়া দল গত সপ্তাহে তিপ্রায় মিশে যাওয়ার জন্য আলোচনা শুরু করেছিল। কিন্তু শনিবার প্রদ্যোতের টুইট-মন্তব্যে স্পষ্ট, সেই প্রক্রিয়া থমকে গিয়েছে।
শাহের দরবারে প্রদ্যোত জানিয়েছিলেন, বর্তমান ত্রিপুরা রাজ্য ভেঙে পৃথক বৃহত্তর তিপ্রাল্যান্ড রাজ্য চান তাঁরা। যা, আয়তনের দিক থেকে হবে ভারতের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম। ২০১১ সালের জনগণনা রিপোর্ট তুলে ধরে দাবি করেন, বাঙালিদের সংখ্যাবৃদ্ধির কারণে ত্রিপুরার আদি বাসিন্দা জনজাতিরা নিজভূমে পরবাসীতে পরিণত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ওই জনগণনা রিপোর্ট জানাচ্ছে, উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যের মোট ৩৬ লক্ষ ৭৪ হাজার নাগরিকের মধ্যে বাঙালি ২৪ লক্ষ ১৪ হাজার। অন্য দিকে, জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ ৮ লক্ষ ৮৭ হাজার। কিন্তু বাঙালি ভোট হারানোর ঝুঁকি থাকায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে বৃহত্তর তিপ্রাল্যান্ড গড়ার প্রস্তাবে বিজেপি প্রকাশ্যে সায় দিতে চায়নি বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা।
ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা রাজপরিবারের বংশধর প্রদ্যোতবিক্রম ২০২১ সালের গোড়ায় জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার রক্ষার দাবিতে তিপ্রা ইন্ডিজেনাস প্রোগ্রেসিভ রিজিয়োনাল অ্যালায়েন্স বা তিপ্রা মথা দল গড়েছিলেন। দলের জনভিত্তির প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় ২০২১ সালের এপ্রিলে, ‘ত্রিপুরা ট্রাইবাল এরিয়াস অটোনমাস ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল’ (এডিসি) নির্বাচনে। বিভিন্ন জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে তৈরি তিপ্রা মথা এডিসির ১৮টি আসনে জয়লাভ করে। জনজাতি পরিষদের বাকি ৯টি আসন মিলিত ভাবে পায় বিজেপি এবং তাদের জোট সঙ্গী জনজাতি আইপিএফটি।