তৃণমূলকে রাজ্যে ঢোকার অনুমতি দিল না যোগী সরকার।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে বিক্ষোভের জেরে রবিবারও থমথমে গোটা উত্তরপ্রদেশ। ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। এমন পরিস্থিতিতে তৃণমূলের প্রতিনিধিদলকে রাজ্যে ঢুকতে দিল না যোগী আদিত্যনাথের সরকার। এ দিন দুপুরে বিমানবন্দরে নামতেই তাঁদের ঘিরে ধরে পুলিশের একটি দল। তার পর ফাঁকা বাসে তুলে রানওয়ের উপরই একটি ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। এই মুহূর্তে সেখানেই ধর্নায় বসেছেন তৃণমূলের ওই নেতারা।
যোগী সরকারের দাবি, লাগাতার বিক্ষোভের জেরে গত তিন-চার দিন ধরে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সেখানে। এমন সময় বাইরে থেকে রাজনীতিকরা এলে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে। তাই তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়। কিন্তু এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ওই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী।
টেলিফোনে একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দীনেশ ত্রিবেদী বলেন, ‘‘অশান্তি পাকাতে তো আসিনি আমরা। মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে কি না, দেখতে এসেছিলাম। শান্তিপূর্ণ ভাবেই যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিমানবন্দরে আটকানো হয় আমাদের। ’’ এ নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এর আগে অসমেও আটকেছে আমাদের। এখন উত্তরপ্রদেশে আটকাচ্ছে। আসলে এরা সত্যিটা জানতে দিতে চায় না।’’
সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে বিক্ষোভের জেরে করে গত তিন দিনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে উত্তরপ্রদেশে ১৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে দলীয় সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দলকে সেখানে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যাতে শামিল রয়েছেন তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী, জয়নগরের তৃণমূল সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল, রাজ্যসভার সাংসদ মহম্মদ নাদিমূল হক এবং আবির বিশ্বাস। সেই নিয়ে শনিবার একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয় তৃণমূলের তরফে।
কিন্তু ওই প্রতিনিধি দলকে রাজ্যে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে রবিবার সকালে জানিয়ে দেন রাজ্যের ডিজিপি ওপি সিংহ। সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল-কংগ্রেসের কিছু নেতা এখানে আসতে চাইছেন বলে জানতে পেরেছি। এই মুহূর্তে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে এখানে। ওই নেতাদের আগমনে উত্তেজনা বাড়তে পারে। তাই ওঁদের অনুমতি দেওয়া হবে না।’’ তার পরই দুপুরে লখনউ বিমানবন্দরে আটকানো হয় তৃণমূল নেতৃত্বকে।
সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে কয়েক দিন আগে পর্যন্তই দফায় দফায় বিক্ষোভ হয়েছে বাংলায়। বেশ কয়েক জায়গায় তা হিংসাত্মক আকারও ধারণ করে। অভিযোগ, তাতে সরকারি সম্পত্তি তছনছ করেন বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু গত কয়েক দিনে পরিস্থিতি অনেকটাই শুধরেছে। জায়গায় জায়গায় মিটিং-মিছিল হলেও, হিংসাত্মক বিক্ষোভ চোখে পড়েনি কোথাও।
কিন্তু গত কয়েক দিনে বিক্ষোভ চরম আকার ধারণ করেছে উত্তরপ্রদেশে। সেখানে দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন সাধারণ মানুষ। ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে সর্বত্র। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বহু যানবাহন। বিক্ষোভ রুখতে পুলিশের বিরুদ্ধে পাল্টা গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। যদিও পুলিশ ও রাজ্য প্রশাসন তা অস্বীকার করেছে।