সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। ফাইল চিত্র।
রাজনৈতিক দলগুলির চাঁদা থেকে কালো টাকা মুছে ফেলে নির্বাচনী বন্ড রাজনীতিতে স্বচ্ছতা এনেছে বলে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করল মোদী সরকার।
মোদী জমানায় চালু হওয়া নির্বাচনী বন্ডের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হওয়া একগুচ্ছ মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কর্পোরেট সংস্থাগুলি গোপনে ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দিচ্ছে। সিংহ ভাগ চাঁদাই যাচ্ছে বিজেপির সিন্দুকে। ফলে কর্পোরেট সংস্থাগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিতে প্রভাব ফেলার চেষ্টা করছে। বিদেশি সংস্থার সামনেও ভারতীয় শাখার সাহায্যে এ দেশের রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার রাস্তা খুলে গিয়েছে।
চার বছরের বেশি সময় ধরে মামলা ঝুলে থাকলেও আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি আর গাভাই ও বিচারপতি বি ভি নাগরত্নের বেঞ্চ জানিয়েছে, আগামী ৬ ডিসেম্বর এই সব মামলা বৃহত্তর সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠানো উচিত কি না, তা নিয়ে শুনানি হবে। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল ও সলিসিটর জেনারেলের সাহায্যও চেয়েছেন তাঁরা।
সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আজ নির্বাচনী বন্ডের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন, নির্বাচনী বন্ড গণতন্ত্রকে আঘাত করছে বলে অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। নির্বাচনী বন্ড এতটাই স্বচ্ছ ব্যবস্থা যে এখন কালো টাকা বা হিসেব বহির্ভূত আয়ের টাকা ঢোকাই মুশকিল।
২০১৭-র অর্থ বিলের মাধ্যমে আইনে একগুচ্ছ সংশোধনী এনে মোদী সরকার ২০১৮ থেকে নির্বাচনী বন্ড চালু করেছিল। এই ব্যবস্থায় কেউ রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দিতে চাইলে তিনি সরকারি ব্যাঙ্কে টাকা দিয়ে বন্ড কিনে রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দেবেন। ফলে কে কত টাকা চাঁদা দিচ্ছে, তা বোঝা কঠিন বলে সরকারের দাবি। কিন্তু উল্টো দিকের অভিযোগ, মূলত ১০ লক্ষ টাকা ও ১ কোটি টাকার বন্ড কেনা হচ্ছে। যা থেকে স্পষ্ট কর্পোরেট সংস্থাগুলিই রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দিয়ে সুবিধা আদায় করতে চাইছে। এডিআর (অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস)-এর মতো বেশ কিছু বেসরকারি নজরদারি সংস্থা এবং সিপিএমের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে এর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল।
আজ মামলাকারীরা গুজরাত ও হিমাচলের ভোটের আগেই এই মামলার শুনানি চেয়েছিলেন। কারণ গুজরাত, হিমাচলপ্রদেশের বিধানসভা ভোটের জন্য ফের বন্ড ছাড়া হচ্ছে। কিন্তু বিচারপতিরা তাতে রাজি হননি। এমনিতেই ১৮ মাস পরে এই মামলার শুনানি হল। ডিসেম্বরেও অন্য সাংবিধানিক বেঞ্চে শুনানির মধ্যে এই মামলার শুনানি হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বিরোধীরা মনে করছেন, হিজাব নিয়ে বিতর্ক আদালতে জিইয়ে থাকলে যেমন বিজেপির মেরুকরণ করতে সুবিধা, তেমনই নির্বাচনী বন্ড নিয়ে মামলায় দেরি হলেও বিজেপির লাভ। কারণ বিজেপির সিন্দুকেই সিংহ ভাগ চাঁদা যাচ্ছে। মামলা ঝুলে থাকলেও এর আগে সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনী বন্ডে স্থগিতাদেশ জারি করতে রাজি হয়নি।