ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধি থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বকেয়া বোনাস মেটানো— ধর্মঘট এড়াতে শেষ বেলায় শ্রমিকদের জন্য নরেন্দ্র মোদী সরকার একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল। কেন্দ্রের বক্তব্য, যে সব দাবিতে ২ সেপ্টেম্বর ধর্মঘট ডাকা হয়েছে, তার সিংহভাগই মেনে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু মন ভেজেনি শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের। তাঁরা ধর্মঘটে অনড় থাকছেন বলে জানিয়েছেন।
বিএমএস বাদে সব কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনের ডাকা ধর্মঘটে ব্যাঙ্ক ও অধিকাংশ শিল্পক্ষেত্র অচল থাকবে বুঝতে পেরে গত কালই জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, ধর্মঘট এড়াতে সরকারের তরফে কিছু পদক্ষেপ করা হবে। তার পরেই মঙ্গলবার বিকেলে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ঘোষণা করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের দু’বছরের বকেয়া বোনাস মিটিয়ে দেওয়া হবে। শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতনও বাড়ানো হচ্ছে। সি-শ্রেণিভুক্ত এলাকায় কৃষিক্ষেত্রের বাইরে অদক্ষ শ্রমিকদের দৈনিক বেতন ২৪৬ টাকা বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা করা হচ্ছে। এর ফলে সাফাই কর্মী, পাহারাদার, খালাসি, কয়লা ছাড়া অন্যান্য খনির শ্রমিক, নির্মাণ কর্মীদের লাভ হবে। ঠিকা শ্রমিকদের নথিভুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। অঙ্গনওয়াড়ি, আশা কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষার বন্দোবস্ত হবে।
এক ডজন দাবি নিয়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল শ্রমিক সংগঠনগুলি। যার মধ্যে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাঙ্কের সংযুক্তিকরণ থেকে প্রতিরক্ষা, রেলে বিদেশি লগ্নির বিরোধিতাও রয়েছে। জেটলি বলেন, ‘‘শ্রমিকদের সমস্যা সংক্রান্ত সিংহভাগ দাবিই মেনে নিল সরকার। তবে বিদেশি লগ্নি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত বদল হবে না।’’ জেটলির যুক্তি, ব্যাঙ্ক কর্মীদের ধর্মঘটে যোগ দেওয়ার কোনও কারণ নেই। গত বছরেই তাঁদের বেতন সংশোধন হয়েছে। এর জন্য ইউনিয়নগুলি তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে গিয়েছেন। অর্থমন্ত্রীর মতে, ব্যাঙ্কের সংযুক্তিকরণে কর্মীদের সমস্যা হবে না।
অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার পরে শ্রমমন্ত্রী বন্দারু দত্তাত্রেয় শ্রমিক সংগঠনগুলিকে ধর্মঘট থেকে সরে আসার আবেদন জানান। যুক্তি দেন, যে এক ডজন দাবিতে ধর্মঘট, তার মধ্যে শ্রমিকদের সমস্যা সংক্রান্ত আটটি দাবি রয়েছে। এর সাতটিই মেনে নেওয়া হল। কিন্তু সেই আবেদন পত্রপাঠ খারিজ করে দেন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক গুরুদাস দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘কোনও দাবিই মানা হয়নি। সরকার ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা শুধু কেন্দ্রীয় সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের কর্মচারীদের জন্য। বাকিদের কিছু লাভ হবে না।’’ সিটু-র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন বলেন, ‘‘এ সব ঘোষণা মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা। দিল্লি, কর্ণাটকের মতো রাজ্যে এর থেকে বেশি বেতন দেওয়া হয়।’’
জেটলি জানান, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ২০১৪-’১৫ ও ২০১৫-’১৬-র সব বকেয়া বোনাস মিটিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া, বিভিন্ন কোর্টে বোনাস দেওয়া নিয়ে যে সব মামলা চলছে, সেখানেও কেন্দ্র শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াবে। পাশাপাশি, ঠিকা শ্রমিক ও তাদের নিয়োগ সংস্থাগুলির নথিভুক্তি বাধ্যতামূলক করতে রাজ্যগুলিকে চিঠি লেখা হবে। অঙ্গনওয়াড়ি, মিড-ডে মিল, আশা কর্মীদের কর্মচারী রাজ্য বিমার আওতায় আনা হবে। শ্রমিক সংগঠনগুলি নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া ৪৫ দিনের মধ্যে মিটিয়ে দিতে রাজ্যগুলিকে চিঠি লেখা হবে। ভবিষ্যতে শ্রমিক আইনে বদলের আগে শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা করেই এগোনো হবে।
কেন্দ্রের আশ্বাস উড়িয়ে দিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, মোদী সরকার শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলতে মন্ত্রীদের কমিটি তৈরি করেছিল। কিন্তু কমিটির শেষ বৈঠক হয়েছিল গত বছরের অগস্টে। তবে কয়েক মাসে মন্ত্রীদের কমিটি শুধু বিএমএস-এর সঙ্গে আলোচনা করেছে। অথচ সঙ্ঘ-পরিবারের শ্রমিক সংগঠন ধর্মঘটে যোগই দেয়নি। এ নিয়ে শ্রমমন্ত্রীর জবাব, তিনি ব্যক্তিগত ভাবে সকলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আর জেটলির যুক্তি, সরকার কী ভাবে বৈঠক করবে, তা সরকারের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হোক। গুরুদাস বলেন, ‘‘আমাদের ধর্মঘট কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। রাজ্যের বিরুদ্ধে নয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারেরও উচিত, ধর্মঘটের বিরোধিতা থেকে সরে আসা।’’ তবে কেন্দ্রের পদক্ষেপ নিয়ে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক প্রতিক্রিয়া না জানালেও ধর্মঘট নিয়ে বামেদের নিশানা করেছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘বামেরা নিজেদের জমানায় শ্রমিকদের নূন্যতম বেতন বাড়ায়নি। এখন ধর্মঘট করে দরদ দেখাচ্ছে।’’