রৌণক আগরওয়াল-নেহা বন্দ্যোপাধ্যায়
‘‘শুধু হার্ড ওয়ার্কিং হলেই হবে না। স্মার্ট ওয়ার্কিংও হতে হবে। কোনটা পড়লে ঠিক সময় ঠিক উত্তর দিতে পারব, সেটা নিজেকেই বুঝতে হবে। নিজে কতটা পারছি, তার মূল্যায়ন বারবার করতে হবে।’’ বলছিলেন এ বারের ইউপিএসসি পরীক্ষার ত্রয়োদশ স্থানে থাকা রৌণক আগরওয়াল। এ বারের ইউপিএসসি পরীক্ষায় প্রথম কুড়িতে রয়েছেন কলকাতার দু’জন— এক জন রৌণক, অন্য জন নেহা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেহা রয়েছেন তালিকার ২০ নম্বরে। দু’জনেই এ রাজ্যে কাজ করতে চান।
বিডন স্ট্রিটের ছেলে রৌণক মঙ্গলবার জানালেন, তাঁর মাধ্যমিক অবধি পড়াশোনা নোপানি হাই স্কুলে। মাধ্যমিক পাস করে সেন্ট লরেন্স স্কুলে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়েছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিকে বাণিজ্য শাখায় তিনি প্রথম হয়েছিলেন। এরপর বি কম পড়েন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। সেখানেও প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক পান। এর পর চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি পরীক্ষায় দেশের মধ্যে পঞ্চম স্থান লাভ করেন। চার্টার্ড ফিনান্সিয়াল অ্যানালিস্ট পরীক্ষাতেও সফল হন।
রৌণক জানালেন, তিন বারের চেষ্টায় তিনি এ বার ইউপিএসসি পরীক্ষায় সফল। আগের দু’বার প্রিলিমিনারির পরেই আটকে গিয়েছিলেন। এ বার রাজ্যে প্রথম। উচ্ছ্বসিত যুবকটি বলেন, ‘‘আইএএস হয়ে চাকরি করতে চাই এই রাজ্যেই। সেই রকম অপশনই দিয়েছি।’’ এত বড় পরীক্ষায় সফল হওয়ার মন্ত্র? উত্তর এল, ‘‘এই পরীক্ষায় সফল হওয়ার জন্য অনেকেই টিউশন নেন। সেটাই বড় কথা নয়। নিজেকে প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে।’’ রৌণকের বাবা রমাকান্তের বড় বাজারে গুড়ের ব্যবসা। ছেলের এই সাফল্যে মা সুশীলা এবং বাবা রমাকান্ত দু'জনেই উচ্ছ্বসিত স্বাভাবিক ভাবেই।
নেহা অবশ্য চাকরি করতে করতেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কারমেল কনভেন্ট থেকে মাধ্যমিক পাশ (ষোড়শ স্থানে) করার পরে সাউথ পয়েন্টে পড়েছেন নেহা। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে খড়গপুর আইআইটিতে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং শাখায় পড়াশোনা। খড়গপুর আইআইটিতে পড়ুয়াদের ব্যান্ড-এ গানও গাইতেন নেহা। পড়া শেষ করে নয়ডাতে একটি তথ্য প্রযুক্তি কোম্পানিতে চাকরি করছিলেন। চাকরি করতে করতেই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন এই পরীক্ষায় বসার। আর প্রথম বারেই তিনি সফল।
নেহা জানালেন, তিনিও এ রাজ্যে চাকরি করতে চান। সেই ‘অপশন’ই দিয়েছেন। যাদবপুর সেন্ট্রাল পার্কে নেহার বাড়িতে রয়েছেন মা অনিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাবা অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালে মারা গিয়েছেন। নেহা বললেন, ‘‘জীবনের যাবতীয় মোটিভেশন বাবার কাছ থেকেই পাওয়া। আর মা আমার জীবনে এখন সব কিছুর করার মূল উৎসাহ।’’ আগামীর ইউপিএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য তাঁরও পরামর্শ, ‘‘টিউশন বড় কথা নয়। আসল হল নিজে কতটা পড়াশোনা করছি। ইউটিউব এবং বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনেক ভিডিয়ো পাওয়া যায়, অনেক স্টাডি মেটেরিয়াল পাওয়া যায়। সেগুলো দেখে নিজেই মতো পড়তে হবে। অসম্ভব রকম মোটিভেটেড হতে হবে।’’