প্রতীকী ছবি।
ঠিক তিন বছর আগে, শতাব্দী প্রাচীন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘জঙ্গিদের আখড়া’ বলে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন আগরার মেয়র। তার আগেই এখানকার লাইব্রেরিতে জিন্নার ছবি নিয়ে প্রবল বিতর্ক এবং তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ২০১৯-এর ডিসেম্বরে দিল্লিতে সিএএ-বিরোধী প্রতিবাদে জামিয়া মিলিয়ার ছাত্রদের সঙ্গে যোগ দিয়ে পুলিশের লাঠি কাঁদানে গ্যাসের মুখোমুখি হন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা।
সব মিলিয়ে তিক্ততার স্মৃতি ও বারুদের উপরে থাকা আলিগড়ে রাত পোহালেই, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ভোট। ২০১২ সালের ভোটে এখানকার আসন ভাগাভাগি ছিল এসপি (৭) এবং আরএলডি(৩)-র মধ্যে। ২০১৭-তে যোগী-মোদী ঝড়ে এই জেলার ৭টি আসনই ছিনিয়ে নিয়েছিল বিজেপি। এ বারের ভোটে ছাত্রদের উপর হিংসার অভিযোগের পাশাপাশি, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে এই এলাকায় বিপুল ক্ষয়ক্ষতি, ক্রমবর্ধমান বেকারি এসপি-কে কিছুটা এগিয়ে রেখেছে বলেই মনে করছে স্থানীয় রাজনীতিক মহল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়টিকে সামনে আনতে তিন জন আলিগড় থেকে পাশ করা স্নাতক এ বার এসপি এবং কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে লড়ছেন বিজেপির বিরুদ্ধে। বিজেপির তাস এ বারেও ‘হিন্দুত্ব’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র ইনামুল হোসেন জানাচ্ছেন, “বর্তমান সরকারের প্রতি আমাদের ঘৃণা ছাড়া কিছু নেই। সেই রাতে কী ভাবে আমাদের উপর লাঠি নেমে এসেছিল, তা ভোলার নয়। তার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু না কিছু ঘটেই চলেছে। আমাদের অন্য ভাবে দেখানোর চেষ্টাও চলছে। একটি স্থায়ী সরকারের জন্য এ বার আমরা ভোট দেব।” বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটি পড়ছে আলিগড়ের কোইল নির্বাচনী কেন্দ্রে, যেখান থেকে বিজেপির অনিল পরাশর গত বার জিতেছিলেন। তাঁকে এ বারেও প্রার্থী করেছে দল। অন্য ৬টি আসনের মধ্যে রয়েছে বারাউলি, আতরাউলি, ছাররা, আলিগড় (শহর)। আলিগড় জেলায় মুসলিম ভোটের প্রাধান্য সত্ত্বেও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ৭টির মধ্যে মাত্র ১টি আসনে মুসলিম প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি এসপি-আরলডি জোটের পক্ষে সুবিধাজনক বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক সূত্রের মতে, এই জেলার বেশির ভাগ এলাকাতেই বিজেপি ভোট লড়ছে হিন্দুত্বের স্লোগানে। ফলে আসল সমস্যাগুলি ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু বিভাগের অধ্যাপক অজয় বিসারিয়ার কথায়, “আমি এই প্রথম কোনও ভোট দেখছি, যেখানে পুরোপুরি ভোট হচ্ছে ধর্মের ভিত্তিতে। আমাদের ধর্মীয় বিভাজনের বাইরে যেতে হবে।”