উল বোনার কথা বললে চোখের সামনে ভেসে ওঠে শীতের দুপুরে উল আর কাঁটা হাতে কোনও মহিলা বসে আছেন। তবে কাজ নিয়ে এই ‘লিঙ্গভেদ’ ভেঙেছেন ২৮ বছরের এক যুবক। তাঁর নাম সোহেল নারগুন্ড। বেঙ্গালুরুতে কর্মরত এই ইঞ্জিনিয়ার এখন খ্যাতনামী সোয়াটার বিক্রেতা।
মাত্র এক বছর আগের কথা। ব্যক্তিগত জীবনে বেশ টলোমলো পরিস্থিতি। মানসিক অশান্তিতে ভুগছিলেন ২৮ বছরের সোহেল। বেরিয়ে আসার পথ খুঁজছিলেন নিজেই। এক দিন গুগল করতে করতে বেশ কিছু পরামর্শ পান। সেখানে এক জায়গায় দেখেন, উল বুনলে মানসিক অস্থিরতা কমে।
উল বোনার ব্যাপারটা মনে ধরে সোহেলের। ইউটিউবে একের পর এক ভিডিয়ো দেখে উল বোনার চেষ্টা করতে থাকেন। কিনে ফেলেন উল আর কাঁটা। ভিডিয়ো দেখতে দেখতে উল-কাঁটা দিয়ে এক একটি ছোট্ট ঘর বোনার পরিশ্রম করেছেন। সড়গড় হয়ে এক দিন অনেক উলের গোছা কিনে ফেললেন সোহেল।
ছেলে কাজ থেকে ফিরে এসে উল আর কাঁটা নিয়ে বসে পড়ছে, দেখে একটু অবাকই হয়েছিলেন বাড়ির লোকজন। কিন্তু ছেলের মানসিক অবস্থার কথা জেনে কেউ কিছু বলতেন না। বরং কিছু দিন পর তাঁরা লক্ষ্য করলেন সোহেল বেশ ভালই আছেন।
এ ভাবে বেশ কিছু দিন কেটে গিয়েছে। একটা সোয়েটার বানিয়ে ফেললেন তিনি। নিজের হাতে বোনা প্রথম সোয়েটার উপহার দিলেন ছোট বোনকে। দাদা এত সুন্দর সোয়েটার বানিয়েছে! প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি সোহেলের কলেজ-পড়ুয়া বোন।
বন্ধুদের কাছে দাদার দেওয়া উপহার দেখিয়েছিলেন বোন। তার পর বোনের একের পর এক বন্ধুর আবদার আসতে শুরু করে। সেই শুরু। তার পর হতাশা কাটানোর উপায় কী রকম হয়ে উঠল একটা নেশার মতো। অফিসের কাজের সময় বাদে প্রায়ই উল নিয়ে বসে পড়তেন ইঞ্জিনিয়ার।
দাদা এত সুন্দর সোয়েটার বুনতে পারে! ব্যবসা করলে কেমন হয়? প্রস্তাবটা খারাপ নয়। তবু দোনামনা ছিল সোহেলের। কিন্তু বোনকে না বলতে পারেননি। প্রথমে নেটমাধ্যমে শুরু করেন নিজের হাতে তৈরি সোয়েটারের ব্যবসা। সোহেলের ইনস্টাগ্রাম পেজে রঙিন সোয়েটার, টুপি, দস্তানা দেখে আগ্রহ দেখান অনেকে।
এ ভাবেই শুরু সোয়েটারের ব্যবসা। অবসাদ ও উদ্বেগ কাটানোর উপায়ই এখন সোহেলের আর একটি উপার্জনের পথ হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি, দিন দিন নেটমাধ্যমে সোহেলের ফলোয়ার সংখ্যাও বাড়ছে। কাজের প্রশংসা করে কমেন্ট বক্সে মন্তব্য করছেন অনেকেই।
শুরুটা কী ভাবে করেছিলেন? সোহেল বলেন, ‘‘এমন একটা কাজের খোঁজ করতাম, যা আমার ৬০ বছর বয়সেও ভাল লাগবে। উল বোনা আমার কাছে তেমনই।’’ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইনস্টাগ্রাম পেজ তৈরি করেছিলেন সোহেল। সেখান থেকেই শুরু প্রথম বিক্রি। তাঁর ইনস্টা পেজের নাম ‘দ্য রাফ হ্যান্ড নিটার’।
কিন্তু কখনও মনে হয়নি, উল বোনা একটা পুরনো দিনের কাজ? আজকাল সবাই তো শপিং মলে জিনিস কেনেন। তা ছাড়া অনেকে বিশ্বাস করেন, এ কাজগুলো মেয়েদের। একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সোহেলের উত্তর, ‘‘কোনও কাজই লিঙ্গভিত্তিক নয়। আসলে কিছু মানুষ লিঙ্গভেদে বিশ্বাস করেন। আমি কখনও ভাবি না, ‘এটা মহিলাদের কাজ, ওটা পুরুষের’।’’ তিনি জানান, দিদা ভাল সোয়েটার বুনতে জানতেন। এখন আক্ষেপ হয়, কেন আগে দিদার কাছে সোয়েটার বানানো শিখলেন না।
ইঞ্জিনিয়ার সোহেলের কথায়, ‘‘শখের আবার মহিলা, পুরুষ কী! আমার মনে হয় না, উল বোনা কোনও ‘মেয়েলি কাজ’। আমি এসব কথাতেই বিশ্বাস করি না। যে কাজ আনন্দ দেয়, তাই করা উচিত।’’
কাজের পর প্রতি দিন শখের জন্য ৩ ঘণ্টা করে দেন সোহেল। সোহেলের দাবি, সারা দিন পর উল বুনতে বসলে অদ্ভুত প্রশান্তি আসে। মন শান্ত হয়ে যায়।