প্রতীকী ছবি।
কার্যত ডানা মেলেই এ দেশের অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। বেআইনি পথে নয়। আইনি পথেই। এ দেশের লোকেরা বিদেশে টাকা পাঠাচ্ছেন, সম্পত্তি কিনছেন, বিদেশি সংস্থার শেয়ার কিনছেন।
এমনিতেই যখন দেশে নতুন লগ্নি আসছে না, তখন এ দেশের ধনী, শিল্পপতিরা বিদেশে কোটি কোটি ডলার পাঠানোয় প্রশ্ন উঠেছে, চড়া হারের কর, আয়কর দফতরের হেনস্থার ধাক্কায় তাঁরা কি দেশের অর্থনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন?
আইন অনুযায়ী, এ দেশের কেউ চাইলে ছেলেমেয়ের বিদেশে পড়াশোনা, আত্মীয়স্বজনের চিকিৎসার খরচ, পর্যটন থেকে শুরু করে শেয়ার বা সম্পত্তি কেনার মতো বিভিন্ন খাতে বছরে মোট আড়াই লক্ষ ডলার পর্যন্ত বিদেশে পাঠাতে পারেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার আগে পর্যন্ত বা ২০১৪-১৫-র আগে পর্যন্ত এ দেশ থেকে বছরে গড়ে ১০০ কোটি ডলার বিদেশে যেত। মোদী জমানায় তা এক লাফে কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। শুধু জুলাই মাসেই ১৬৯ কোটি ডলার বিদেশে পাঠানো হয়েছে।
উদ্যোগপতি টি ভি মোহনদাস পাই আজ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘‘খুবই চিন্তাজনক বিষয়। উদ্যোগপতিরা কর্মসংস্থান তৈরি করেন। চড়া হারে কর তাঁদের টাকাকে বাইরে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বড় মাপের সংস্কার প্রয়োজন। আয়কর দফকরকে আস্থা তৈরি করতে হবে।’’
২০১৮-১৯-এ বিদেশে যাওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল ১৩০০ কোটি ডলার। চলতি অর্থ বছরে তা ২০০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে বলে অনুমান। কারণ চলতি আর্থিক বছরের প্রথম চার মাসেই এর পরিমাণ ৫৮০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। মোদী জমানার প্রথম পাঁচ বছরে এ দেশ থেকে বিদেশে যাওয়া অর্থের পরিমাণ ৪৫০০ কোটি ডলার। বিরোধীরা বলছেন, মোদী সরকারের জমানায় অর্থনীতির উপরে লগ্নিকারীরা যে অনাস্থা প্রকাশ করছেন, এটা তারই নমুনা। শুধু বাইরে নয়, ঘরেও এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে মোদী সরকার। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে উদ্দেশ্য করে আরএসএস-এর সংগঠন স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের যুগ্ম-আহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজনের প্রশ্ন, ‘‘আমরা বুঝতে পারছি না কেন এবং কোন যুক্তিতে সরকার ইউপিএ-জমানার এই ব্যবস্থাকে চালু রেখেছে? দামি বিদেশি মুদ্রার বাইরে যাওয়ার রাস্তা খোলা রয়েছে?’’
ইউপিএ-সরকারের আমলেই এই ‘লিবারাইজড রেমিট্যান্স স্কিম’ চালু হয়েছিল। তার আগে প্রতিটি ক্ষেত্রে ছাড়পত্র নিতে হত। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, দরজা বন্ধ করা কোনও পথ নয়। কেন দেশের অর্থ বিদেশে লগ্নি হচ্ছে, তা দেখতে হবে। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির বক্তব্য, ‘‘প্রতিটি পরিসংখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে, বিজেপি সরকারের আমলে অর্থনীতির অবস্থা কতখানি খারাপ। লোকে অবিশ্বাস্য গতিতে দেশের বাইরে অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইভেন্ট ম্যানেজাররা মানুষের নজর অন্য দিকে ঘোরাতে ব্যস্ত।’’ কংগ্রেস নেতা রাজীব শুক্ল বলেন, ‘‘মনমোহন সিংহ তো বলেইছেন, সবচেয়ে আগে সরকারকে মেনে নিতে হবে যে দেশে আর্থিক সঙ্কট এসেছে। সরকার কেন মানতে নারাজ?’’